চেখে নিলাম তোমারও হালকা হাসি

shrutisahitya.com



বৃত্ত  – সুমন ঘোষ

সেঁকে নিয়ে নরম দু’পিস মাংস

আমিও এড়িয়ে এলাম চলে

আমি আজ আমার বৃত্তে ভাসি

ওদেরকে মনে করে দিও বলে।

.

ভেবেছিলাম চোখের কোণে ভাসি

চেখে নিয়ে মায়া, হালকা হাসি

ভুলে যাওয়াই গভীর ক্ষতে প্রলেপ।

.

শিখে নিলাম   এড়িয়ে চলাই জীবন

শিকে নিলাম   দু’পিস নরম মাংস

চেখে নিলাম   তোমারও হালকা হাসি

.

শিখে নিলাম   একলা থাকা বারণ

শিখে নিলাম   সবার মধ্যে থেকেও

চুপচাপ বাতিল হওয়ার ধরণ।

.

শিখে নিলাম   হৈ দিতে হয় কোথায়

জেনে গেছি     থৈ খুঁজতে গেলে

দু’হাতে জোর জল ঠিলতে হয়।

.

দেখে নিলাম   ছোট্ট ছোট্ট বৃত্ত

ব্যাসার্ধ অনেক টানা আছে

লোভে সব কেন্দ্রে আছে জুড়ে

পাশেরটিও ঘুরছে সজোরে।

.

ছড়ার আসর  //শক্তি প্রসাদ ঘোষ

ক্যাওড়াতলার শ্যাওড়া গাছে

ভূতের নাতি পূতি

ছড়া পাঠের বসালো আসর

ছেড়ে গুঁতো গুতি

শাঁকচুন্নি মাসি সেথা

করলো ছড়া পাঠ

ছড়ার বিষয় ছিল

তেপান্তরের মাঠ

বললো হেসে মামদো পিসে

নেই ভূতের ছড়ার দিন

আমাদের কবি ছিলেন

বিশ্বসেরা আলাদীন

আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ

আর বোতলের দৈত্য

ওসব ছেড়ে এখন সবাই

কল্পবিজ্ঞানে মত্য।

মানুষ করার সনাতনী রীতি আর আজকের রীতি পরিত্যক্ত    // মানুষ হয়েছে

রণেশ রায়

জানতে চেয়েছো আমার কাছে,

সারাজীবন করলেটা  কি !

শোন তবে বলি

জানাই তোমায় আজই

জানাই আমি বিনা দ্বিধায়

সঙ্কোচ করি না আর;

জুতিয়ে  লম্বা করতে

ছাত্র পেদিয়েছি সারা জীবন আমার

বুঝতে বলেছি সেটা

আমিও বুঝিনি  যেটা,

মানুষ হয়নি কেউ

হয়েছে বেটে বামুন তারা l

এবার বুঝেছি আমি

আহ্লাদ দিতে হয় তাদের

মেনে নিতে হয় সব আবদার,

আহ্লাদে আহ্লাদে বেড়েছে এরা

হয়েছে অনেক লম্বা

ওজনে হয়েছে ভারী

মাথায় চড়ে বসে আমারই

সইতে পারি না আমি

আমার এই টলমল পায়ে;

তবে মানুষ হয়েছে তারা,

সসম্মানে আমার মাথায় দাঁড়িয়ে,

কিন্তু পায়ের জোর নেই ওদের

ক্ষমতা নেই নিজের পায়ে দাঁড়াবার ।

.

মুক্তো ঝিনুক খোঁজ ছড়ানো কুয়াশা-আবৃতা  // সন্দীপ মুখার্জী

অনেক পাহাড় সমুদ্র আকাশ

অনেক গোপন আঁধার প্রকাশ

অনেক বাঁচা ইচ্ছা পথচলা

অজস্র অবহেলিত নাবলা

আঁকা বা নাআঁকা,ছবি তা

নিঃসৃত একাকী কালের কন্ঠ–কবিতা

কোমল কোঁপল বা শুষ্ক ঝরা পাতা

আহ্বান উদ্বেল মনন দ্বন্দ্ব দীনতা

দোয়াত ভরা অমৃত সুধা বা গরল

প্রবীণ নবীন অরুণ তাপিত তরল

গুপ্ত মনিকোঠা হতে সাদা পাতা

পাষাণ ভাঙা উচ্ছল ধারা সরিতা

স্নিগ্ধ কঠোর সেই তো প্রাণের কবিতা

দেখা হয়না যায়না ধরা অবিরত সে ধারা

শয়নে স্বপনে জাগরণে ধাবিত ফল্গু পারা

দোদুল্যমান দেদীপ্যমান শব্দ খোঁজে মন

প্রসারিত সাগর প্রমাণ শব্দরাশি আয়তন

মুক্তো ঝিনুক খোঁজ ছড়ানো কুয়াশা-আবৃতা

শেষ হয় খোঁজ সাজে সাাদাপাতা–

ধারণ ধন্যা কবিতা—

—-অজ্ঞাত।।

যে করেই হোক পেতেই হবে একটি

                                   কিশলয় মিত্র

দিবানিশি একই  চিন্তা মাথায়

বাড়তে হবে দেহে নয়,মনে নয়,

পড়াশোনায়।

যে করেই হোক পেতেই হবে

একটি চাকরি

স্রেফ প্রস্তাব নিয়ে এলো……..;

মানুষ না হলেও ক্ষতি নেই ,

দরকার হলে বাঁচো, না হলে…

দরকার নেই ও’সব ছাইপাস

প্রকৃতিপ্রেম ;

কি দেবে ওরা ?দেবে কি রুজি ?

ভালো লাগাটাও হয়তো লাগতে নেই

বাঁচতে হলে যান্ত্রিক হয়ে বাঁচো।

একদিন যে শিশু হাসির কল্লোলে

প্রকৃতির বুকে নগ্ন শরীরে,-বেড়ে ওঠে

আজ তাকে বন্দী করো খাঁচায় ;

দরকার নেই ওসব খেলা-ধূলার

তবে কি করে হবে ডাক্তার-ইঞ্জিনীয়র।

দিবানিশি একই চিন্তা মাথায়

নরম  বালিশে  সযত্নে রাখা

সুসজ্জিত ভবিষ‍্যত।

যে করেই হোক একবার ,

অন্তত একটি…….;

চাকরি তোমাকে পেতেই হবে।

তবে  যদি মরতে  হয় মরো

না হলে ,

না হলে সমাজের উচ্ছিষ্টের মতো

মৃতপ্রায় হয়ে বাঁচো।

এই সময়ে কবির কলমে

.

অভিলাষ  //  সুদীপ্ত বিশ্বাস

তুমি যখন নদী হলে

আমার চোখে আলো

সাঁতরে ভাঙি উথালপাথাল ঢেউ

অনভ্যস্ত গহীন গাঙে

আনাড়ি এই মাঝি

তুমিই জানো, আর কি জানে কেউ?

ঠিক সে সময় ঝাপুরঝুপুর

বৃষ্টি যদি নামে

আকাশ জুড়ে গলতে থাকে মেঘ

সুখ সাঁতারে শ্রান্ত আমি

ঘুমিয়ে যদি পড়ি

জানবে আমার কেটেছে উদ্বেগ।

ঘুম ঘুম ঘুম ঘুমের দেশে

স্বপ্নমাখা চোখে

দুহাত দিয়ে জাপটে ধরি নদী

বাঁচতে রাজি অযুত বছর

আলোকবর্ষ পারে

ভালবাসা, তোমায় পাই গো যদি।

সহজ তুমি সহজ হয়েই

থেক আমার পাশে

গ্রীষ্ম দিনে,দারুণ মরুঝড়ে;

বুকের পাশে নরম ওমের

পালক হয়ে থেক

শীতের রাতে বরফ যদি পড়ে।

.

বাক্যহারা  // সুদীপ্ত বিশ্বাস

রাতদুপুরে আসছে উড়ে একটা দুটো স্বপ্ন পাখি

হারানো সেই সোনালি দিন, এখন একে কোথায় রাখি!

আবছা আলোয় চমকে দেখি সেই যে তুমি মেঘের মেয়ে

কলসি নিয়ে দুপুরবেলা একটু দুলে ফিরছ নেয়ে

হালকা রঙা কলকা শাড়ি, দুলছে বেণী ইচ্ছেমত

স্তব্ধ চোখে থমকে থাকি, আরে এটাই সেই ছবি তো!

সেই যে যেটা হারিয়ে গেছে একটুখানি অসাবধানে

আজ পুরোটা রাখব ধরে, আজকে লিখে রাখব প্রাণে।

গভীর রাতে আবছা আলো, হতেও পারে চোখের ভুল

বলো না তুমি সত্যি করে,তুমি কি সেই টগরফুল?

যাচ্ছে খুলে স্মৃতির পাতা,ডাগর চোখে দেখছি খালি

অরফিউস ও ইউরিডিসি, বুদ্ধদেব ও আম্রপালি…

স্বর্গ বুঝি আসল নেমে আবছা আলো ঘরের কোণে

না বলা কথা অনেক ছিল, পড়ছে না যে কিছুই মনে।

হঠাৎ দেখি কাঁদছ তুমি, তোমার চোখে অশ্রুধারা

তোমার মুখে আমার ছায়া আনন্দেতে বাক্যহারা।

.

বৃদ্ধের বেদনা  / / আশীষ ধর

ষাট পেরিয়ে হ’লাম বুড়ো

পাড়ার লোকে ডাকে খুড়ো,

স্কুল কলেজের বাচ্চারা

দাদু বলে ডাকে তারা।

ভাই বলে আর কেউ ডাকে না

দাদা বলে কেউ মানে না।

বাড়ির কথা বলবো কি রে?

খাওয়া দেয় হিসেব করে,

নুন চিনি খুবই কম

ওরা নাকি আমার যম

যে খাবার-ই ভালো খেতে

পড়ে নাকো আমার পাতে

বলে আমার আপনজন

রোগ হতে আর কতক্ষণ?

ষাট এর উপর বয়স যখন

সাবধানেতে থাকবে তখন।

নিয়ম মেনে বাঁধা জীবন

ভোরে উঠে প্রাত:ভ্রমণ

একটু যদি ঠাণ্ডা পড়ে,

বাঁদর সাজি টুপি পরে ।

চোখের সামনে ভেসে ওঠে

এই সেদিন পথে ঘাটে

সুন্দরীদের ছলা কলা

মিষ্টি হেসে কথা বলা,

পার্কে কিংবা রেঁস্তোরাতে

খেলা থেকে রাজনীতিতে

আলোচনার বইতো হাওয়া

চলতো মন দেওয়া নেওয়া

বিভোর রাখতো মন প্রাণ

গুনগুনিয়ে গাইতাম গান।

দিনগুলো সব হারিয়ে গেল

সবই আজ স্বপ্ন এখন

স্মৃতি গাঁথা রঙিন জীবন।

সব ভুলে আজ বাঁচতে এখন,

করছি আমি কৃচ্ছ সাধন।

পথ চলি

রণেশ রায়

পথে চলতে চলতে

রোজই দেখা তার সাথে

চলে সে দুলকি চালে

রঙ্গে ছন্দে তালে

সুন্দরী তনয়া বিদুষী

যেন আকাশে রাতের শশী

আমি তার প্রেমে পড়ি

কত আর ধৈর্য ধরি

কপালে জমে ঘাম

জানতে হয় তার নাম;

মন মানে না প্রশ্ন করি,

নামটা কি জানতে পারি?

ডাকে আমায় ইশারায়

আমি আশায়, দেবে সে সায়,

উঠবে এসে প্রেমের খেয়ায়

উৎসুক আমি, কি তার রায়!

আমি গুটি গুটি কাছে যাই

সামনে এসেই ভিমরি খাই,

এ কে প্রেয়সী আমার

এ কি মূর্তি তার !

দেখি তার ভয়ংকর ভ্রুকুটি

বাগিয়ে আছে শক্ত করে মুঠি

চোখে তার শমন জারি

অমন মুখটা দেখি হাঁড়ি

জানতে চায় কি করি

আমি মরমে মরি

আমি যে বেকার ব্যান্ডুলে

মালা দিতে চাই কার গলে

কি আছে আমার দেবার

নিঃস্ব আমি ফুটো পয়সার কারবার

দিতে পারি শুধু প্রেম আমার

তাতে যে জোটে না আহার

ফুটো ছাতা আমার মাথায়

আমি পথ চলি শ্রাবনের বর্ষায়।

.

সুচন্দ্রা হালদার  // ভারতবর্ষ

তোমায় ভালোবেসে

আমি বললাম,”জানো,গতকাল সকালবেলা,

আমার ছোট্ট রান্নাঘরটা হঠাৎ

বকুল ফুলের মিষ্টি সুগন্ধে ভরে উঠল।”

তুমি বললে,”দূর,তা কি করে হয়?

তোমার ঐ রান্নার ফোড়নের গন্ধের মধ্যে..

তুমি বকুল ফুলের সুবাস পেলে কোথায়?”

আমি বললাম,”হয় গো,হয়… নিশ্চয়ই হয়।

তুমি যখন পাঠিয়ে দিলে আমায় ভোরের বার্তা…

যখন দূর থেকে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে,

তোমার মুখটা রাখলে আমার ঘাড়ের কাছে…

কিভাবে যেন আমার সারা ঘর ভরে উঠল বকুল গন্ধে!

আমি হারিয়ে গেলাম সেই ভালোলাগা বুকে নিয়ে।”

আমি বললাম,”জানো,কাল,আমার মনের উঠোনে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছটা…

ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল।”

তুমি হেসে উঠে বললে,”মনের উঠোন! সেখানে আবার গাছ?

তুমি কি পাগল হলে নাকি?”

আমি বললাম,”হয় গো,হয়…. নিশ্চয়ই হয়।

কাল যখন তুমি এগিয়ে চলেছিলে মিছিলে…. সবার আগে….

পতাকাগুলো স্পর্ধিত বিশ্বাসে ছুঁতে চাইছিলো আকাশ….

সেই রং,কি করে যেন ছড়িয়ে গেল আমার মনের উঠোনে।

রাঙিয়ে দিয়ে গেল কৃষ্ণচূড়ার সব ডালগুলো।

আমি হারিয়ে গেলাম সেই প্রত্যয় বুকে নিয়ে।”

আমি বললাম,”জানো,কাল কোথা থেকে একটা আগুন এসে…

আমার লেখার খাতাগুলো সব,উত্তাপে ভরিয়ে দিয়ে গেল!”

তুমি বললে,”এ আবার কেমন কথা!এও কি হয় নাকি কখনো!”

আমি বললাম,”হয় গো,হয়….. নিশ্চয়ই হয়।

কাল যে হঠাৎ চোখ পড়ে গিয়েছিল

তোমার সব আগুন ঝরা লেখার উপর!

সে উত্তাপ কলম বেয়ে ছুঁতে চাইল আমার লেখার খাতা।

আমার কান্নাভেজা লেখারা সব জ্বলে উঠতে চাইল আরো একবার!

আমি হারিয়ে গেলাম সেই উত্তাপ বুকে নিয়ে।”

আমি বললাম,”জানো,কাল রাতে…..,

আমার ঘর,ঝর্ণার জলে পুরো ভিজে গিয়েছিল।”

তুমি বললে,”কি যে বলো!তা আবার হয় নাকি?”

আমি বললাম,”হয় গো ,হয়…. নিশ্চয়ই হয়।

তুমি যখন আপন মনে গান গেয়ে যাও… আমার জন্য…

মনে হয়,আমার সমস্ত ঘর,আসবাব…

আমার লেখার খাতা…. আমার আঁকা ছবি র উপর…

ঝর্ণার মত জল ঝরে পড়ছে।

আমি হারিয়ে গেলাম সেই স্নিগ্ধতাকে বুকে নিয়ে।”

আমি বললাম,”জানো,কাল রাতে,আমি একটা নদী দেখেছি!”

তুমি অবাক হয়ে বললে,”কি করে হয় তা?

তোমার বাড়ির পাশে তো কোনো নদী নেই।”

আমি বললাম,”হয় গো,হয়…. নিশ্চয়ই হয়।

যখন রাতের বেলায় তোমায় অনুভব করি…

তুমি তো নদী হয়েই , মিশে যাও আমার বুকের গভীরে।

প্রতি রাতে আমি হারিয়ে যাই সেই গভীরতা বুকে নিয়ে।”

আজ বড়  একা লাগছে…..

আমার রান্নাঘরে আজ শুধুই তেল-মশলার গন্ধ!

মনের উঠোনের কৃষ্ণচূড়া গাছটাকেও আজ খুঁজে পাচ্ছি না।

খুব চেষ্টা করছি জানো,খাতার পাতার  সেই আগুনটাকে ছুঁতে।

ঝর্ণা আর নদীটাও যে কোথায় হারিয়ে গেল!

এক বুক ভালোবাসা নিয়ে…..

শুধুই অপেক্ষার দিন গোনা…..

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *