আজ আমাদের
ন্যাড়া পোড়ানো
কাল করতে হবে দোল
ঐ দ্যাখো ভাই
পূর্ণিমারই চাঁদ উঠেছে
বল হরিবোল।
– – – –
৬ ই মার্চ, সোমবার ২০২৩
পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বিভিন্ন অঞ্চলে হয়ে গেল ন্যাড়া পড়ানো বা হলিকা দহন। চাঁচরি বলতে বলা হয় দোল যাত্রার পূর্ব দিনের উৎসব। হোলিকা দহন হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রথা। অবাঙালি সমাজে যা হোলিকা বা হলকা নামে পরিচিত। উত্তর প্রদেশ বিহারে দোলের দিন হয়। পশ্চিম বঙ্গের সব জায়গায় না হলেও কিছু কিছু জেলায় ন্যাড়া পোড়ানো নামে চলে আসছে দোলের আগের দিন।
বসন্তকালীন উৎসব গুলির মধ্য দোল একটা গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসবে কেন্দ্র করেই অনেক প্রথা পালিত হয়ে আসছে। ন্যাড়া পোড়ানো আগুণ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তি বা পরিবেশের জীবনু নাশ করা হয় বলে মনে করা হয়। এতদ্ অঞ্চলে কচি কাচাদের প্রাণের উৎসব ন্যাড়া পোড়ানো।
অনেক দিন আগের থেকে ছেলে মেয়েরা এই উৎসবের জন্য প্রস্তুত হয়। আসপাশ থেকে শুকনো কলা পাতা, তাল পাতা, খেজুর পাতা, খড় ইত্যাদি জোগাড় করে রাখে। শুকনো না পাওয়া গেলে প্রতিদিন ডাল পালা কেটে শুকিয়ে রাখে। চাঁচরি দিন একটা বড় কাঁচা বাঁশ কেটে নিয়ে। সমস্ত শুকনো পাতা ভেজানো শুকনো কলা পাতা দিয়ে থরে থরে বেঁধে দন্ড সাজিয়ে রাখে।
একটা বড় গর্ত খুড়ে ঐ বোঝা বাঁধা বাঁশ গেড়ে দাঁড় করানো হয়। চারপাশে শুকনো তালপাতা খড় ইত্যাদি দিয়ে বেশ একটা কুন্ড তৈরি করা হয়।
প্রজ্জ্বলনের আগে বাতাসা প্রসাদ করে , আবীর ছড়িয়ে, ধুপ জ্বেলে চাঁচরি তিনবার প্রদক্ষিণ করে অগ্নি সংযোগ করলে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে।
আকাশের চাঁদ আর আগুনের আলো, ফুলকি দশদিশ আলোকিত করে। এই সময় মুখে বলার নিয়ম – – –
” আজ আমাদের
ন্যাড়া পোড়ানো
, কাল করতে হবে দোল
ঐ দ্যাখো ভাই
আকাশে চাঁদ উঠেছে
বল হরি বোল।”
– – – –
এ যেন এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ সৃষ্টি করে আকাশে চাঁদ উঁকি দিয়েছে আর চাঁচরির লাল আলোকে সব কিছু নৈর্সগিক করে তুলেছে।
দোল পূর্ণিমার শুভেচ্ছা জানাই । সকল হিংসা, বিভেদ ভুলে শান্তির আবহে মানুষের মনে নূতন রঙের ছোঁয়া লাগিয়ে যাক। পৃথিবী শান্ত হোক।
বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল