কদিন হল একটি mentally challenged তরুণের মা আমায় জানান -তাঁর ছেলে যেহেতু Borderline সেহেতু তিনি ছেলেটিকে আর পাঁচজন স্বাভাবিক ছাত্রের সঙ্গে Hotel Management এর ক্লাসে ভর্তি করেন | ছেলেটি ভালোই ক্লাস করছিল | তাকে দিয়ে থিয়েটার করানো যায় কিনা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন | সম্মত হলেও দেখলাম তিনি কিন্তু কিন্তু করছেন | চুপ থাকলাম যাতে নিজের দ্বিধা নিজেই ঝেড়ে ফেলতে পারেন | হুড়মুড় করে বেরিয়ে এল মায়ের কষ্ট |
ছেলেটি যেহেতু borderline Mentally challenged সেহেতু পড়াশুনো মোটামুটি একটা level অব্দি ভালোই করছিল | ওর বিষয় হয়ে ওঠে – ইতিহাস | মায়ের স্বপ্ন শুরু হয় ছেলে ইতিহাস নিয়ে পড়বে | So Called সর্ববোদ্ধা আত্মীয় ও পরিচিত জন বলে –এ ছেলে ইতিহাস নিয়ে পড়ে কী করবে ? ও vocational course করুক বরং | ছেলেটি তো পুরোপুরি mental retarded নয় | সে কিন্তু তাকে কেন্দ্র করে চারপাশের মানুষদের এই নিরাশার এই আস্থাহীনতার কথাগুলো শুনছে এবং নিজের মতো করে বুঝতে পারছে | অথচ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারছে না | এর সঙ্গে শুরু হয় স্বাভাবিকের তুলনায় তার পিছিয়ে থাকা নিয়ে স্কুলের বন্ধুদের ( যারা স্বাভাবিক ) ঠাট্টাতামাশা ও তাচ্ছিল্য | A parallel line of torture , ফলে কখনোই ছেলেটি নিজেকে প্রয়োজনীয়ভাবে প্রকাশ করতে পারেনি | নানারকম Associated মানসিক ব্যাধিরও শিকার হয় | এরই মধ্যে ছেলেটি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে | খুব একটা কম ক্ষমতা যে এই ছেলেটির ছিল না তা তার পারিপার্শ্বিককে উপেক্ষা করে পরীক্ষায় পাশ হওয়া থেকে বোঝা যায় |
এরপর Hotel Management এর ক্লাসেও একইরকম বিদ্রুপের ( সচেতন বা অসচেতন ) কবলে যেতে থাকে | আজ তার মা জানালেন — ছেলেটির সাইকোসিস শুরু হয়েছে | দিন পনেরো ওষুধ খেয়ে সুস্থ হলে তাকে নিয়ে আমাদের থিয়েটার দলে আসবেন তিনি |
না আমি এখানে কাউকে বকাবকি বা শাস্তি দিতে আসিনি | একজন বিশেষ প্রশিক্ষক হয়ে একটি বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন শিশুকে অপমান করাটাকে খুব পাত্তাও দিচ্ছি না | ভুলও শোধরাচ্ছি না | কারণ এ দায়িত্ব বোধহয় স্বাভাবিক শিশুর বাবা মায়েদের | আমি কেবল দূরদেশ থেকে আগত এক স্বাভাবিক শিশুর বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন শিশুদের প্রতি চমৎকার সুমিষ্ট ব্যবহারের গল্প আপনাদের বলব |
গল্প বা ঘটনাটির নাম–
★ গোলাপ বেণী আকাশমুখে ★
মেয়েটি বাঙালী হলেও সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম তার | অস্ট্রেলিয়া থেকেই তার মায়ের সাথে আমাদের স্কুলে এসেছিল | উদ্দেশ্য তার জন্মদিনটা সে কাটাবে আমাদের স্কুলের বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন বাচ্চাদের সাথে | তাদের কিছু খাবার খাওয়াবে |
মেয়েটির সেবার পাঁচ পুরবে | দেখলাম খুব অনায়াসে বাংলা বলছে সে | কোনো শব্দ আটকে গেলেও তৎক্ষণাৎ সংশোধন করে নিয়ে বাংলাই বলছে ফের | সেজেছেও সে বাঙালিনীর মতো | বড় চুলে একটি লাল টকটকে গোলাপ | তার যা বয়স তাতে সে বেশ বুঝে গ্যাছে, সে যে স্কুলটিতে আজ এসেছে সেখানকার বাচ্চারা কেউ তার মতো স্বাভাবিক বা স্বচ্ছন্দ নয় | নয় কেউ কথা বলতে পারে না , নয় কেউ কমবুদ্ধি বাচ্চা |
অবাক হয়ে দেখলাম,বাচ্চা মেয়েটি কিন্তু পরম শ্রদ্ধায় খাবারের ঠোঙাগুলো তার ছোট্ট দুহাতের মুঠোয় ভরে নিয়ে দিচ্ছে এই দুবলা বাচ্চাগুলোকে | দেয়ার ভঙ্গিটি তার অনেকটা ঐ আঁজলা ভরে দেবতার পায়ে পুজোর ফুল দেয়ার মতো | বিলোনো বা দাক্ষিন্য দেবার মতো নয় | আমার বাচ্চাগুলো তো কথা বলতে পারে না | অস্ট্রেলিয়ার বাঙালিনী কিন্তু তাদের সাথে কথা বলে যাচ্ছে | আরো আশ্চর্য সে যে বিশেষ ধরনের বাচ্চাদের সাথে কথা বলছে এই ছাপ মেয়েটির চোখে মুখে কোথাও নেই | বাচ্চার প্রতি বাচ্চার এই সম্মান আমার বাচ্চাগুলোকে অনেকখানি যে উৎসাহ দিয়েছে বুঝলাম | মেয়েটি চলে যাবার পরও দুদিন তিনদিন ধরে আমার বধির শিশুর দল তাদের নতুন বন্ধুর আসার উল্লাস ও চলে যাওয়ার বেদনায় মাত হয়েছিল |
বধিরের বিবিধ অনুভূতি দেখে সেদিন আমার মনে হয়েছিল — অস্ট্রেলিয়ার হাস্যমুখী তার সবকটা বন্ধুর কমবুদ্ধির মাথায় একটি করে গল্প গুঁজে দিয়ে গেছে |
Trust me — আজ যে ছেলেটি সাইকোসিসে ভুগছে সে ঠিক সুস্থ হয়ে আমাদের সাথে এক মঞ্চে অভিনয় করবে |
No কান্না No ফান্না
দাও হাততালি |
জগতে আনন্দযজ্ঞ |
#storyandarticle
https:;//storyandarticle.com