গুপ্তজীবন

গুপ্তজীবন
পর্ব- ৭

বৌকে মারতে চায় না বিজয়।তবু তার বিরক্তিকর বচনে বিজয় ক্লান্ত হয়ে যায়। বৌ তৃষা, বিয়ের আগে থেকে রাবণকে ভালোবাসতো।মেয়েরা রাবণের মত মেয়েদের একটু বেশি পছন্দ করে কেন?বিজয় ভাবে। আবার ভাবে সব মেয়ে তো একরকমের নয়।
বিজয় যেদিন বাড়িতে ছুটি উপভোগ করে,নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে, ঠিক তখনই তৃষা শুরু করে তার যত বিরক্তিকর বচন। এই চালটা নিয়ে এসো। বসে বসে সময় কাটালে হবে না। আমি খেটে খেটে মরে গেলাম আর উনি বসে বসে মজা মারছেন। যাও ওঠো।অগত্যা বাজারে যায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে। বয়স বাড়ছে। ছেলে পড়াশুনা আর মোবাইলে ব্যস্ত। বিজয় ভাবে,সপ্তাহে একটা দিন বিশ্রাম পেলে ভালো লাগে। কিন্তু কপালের নাম গোপাল।
বিজয় বাজারের থলি হাতে এসেই দেখলো,তৃষা পাশের বাড়ির পুরুষ মানুষটার সঙ্গে প্রাণখোলা গল্পে ব্যস্ত। অথচ বিজয় একা শোয়, আলাদা ঘরে।সন্তান হওয়ার পর থেকে একসাথে শোয়নি তৃষা। বিজয় বলে, এবার ছেলে কলেজে পড়ছে। ওকে আলাদা ঘরে দিতে পারো।তৃষা বলে,তুমি আর ও তাহলে একঘরে শোও। আমি আলাদা থাকবো। ঘামের গন্ধ আমার ভালো লাগে না। বিজয় বলে,তোমারও তো ঘামে দুর্গন্ধ।কই আমি বলি না তো?

এইসব ভাবতে ভাবতে বাজার থেকে আসা প্রায় এক ঘন্টা হতে চললো।পাশের বাড়ির আর এক রাবণ এই মুছেল।এতবড় গোঁফ রেখে শক্ত শরীরে মদ খেয়ে মাতলামি করে রাবণ। সবাই ওকে ভয় করে।তাই বিজয় ওকে ঘাঁটায় না। তৃষা সব বুঝে এই সুযোগটা কাজে লাগায়।

বিজয়ের মেজাজটা বিগড়ে গেছে। ছেলে বলছে,তোমার কাছে মা সব সময় বসে থাকবে নাকি?
বিজয় বলে,তুই ছোটো বড়দের মাঝে কথা বলিস না। ছেলে বলে,না বলবে না। আমার মাকে কিছু বললে, আমিও বলবো।
এবার তৃষা এলো। বাথরুম থেকে এসে রান্নাঘরে ঢুকলো। মাংস রান্না শুরু করলো। সপ্তাহে তিন দিন মাংস। ডেলি চারটে করে ডিম।এছাড়া ফল,বাদাম,ছোলা ছেলের জন্য বরাদ্দ। ছেলে জিমে যায় নিয়মিত। বিজয়ের ভয় হয়,বড় হয়ে ছেলের মার খেতে হবে না তো? মায়ের সঙ্গে ঝগড়া দেখে। হয়ত এই রাগ তখন ঝাড়বে।
বিজয় বললো,তোমাকে যে বারণ করি তৃষা।পুরুষ মানুষের সাথে বেশি ঢলাঢলি ভালো লাগে না। মুছেলের কনুইটা তোমার বুকে লেগে ছিলো।এগুলো ভালো নয়। চরিত্রটা পাল্টাও।
তৃষা বলে,বেশ করবো। আবার যাবো। ভারি এলেন আমার গুরুদেব রে…

বিজয়ের মাথায় রক্ত উঠে গেলো। তবু বললো,সাবধান, আমি কিন্তু পালিয়ে যাবো। গলায় দড়ি দেবো।
তৃষা বলে,যা যা দে গিয়ে যা।শান্তি পাই।

বিজয় গিয়ে এক চড় মারে। ধাক্কা লেগে তৃষা একটা গ্লাসের উপর পড়ে। আর গাল কেটে রক্ত পড়তে শুরু করে।তৃষা কাঁদতে শুরু করে। পাড়ার সবাইকে জানানোর জন্য চিৎকার করে।বিজয় বলে, চুপ করো।আমি তো ইচ্ছ করে মারি নি। লেগে গেছে গ্লাসের কোণা। তাই বলো কি…
তৃষা বলে,দাঁড়া তোর অবস্থা কি করি দেখ।পাড়ার লোকজন উঁকিঝঁকি মারে।বেশ রসিয়ে রসিয়ে জ্ঞান দেয় অনেকে।

বিজয় সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারখানা নিয়ে গেলো।হাজার টাকার ওপর খরচ হলো। এখন সব চুপ চাপ।কি হবে কে জানে? বিজয়ের বড় ভয় হয়। সে ভাবে,কোথা থেকে কি যে হয়ে গেলো সে বুঝতেই পারলো না। আজ সকালে উঠে গোপালের নাম স্মরণ করেছে বলেই হয়তো অল্পের ওপর দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে গেলো।তা না হলে হয়তো,আরও বিপদ হতো।

বিজয় ভাবে,বিয়ের আগে এক রাবণকে তৃষা ভালোবাসতো। তারও রাবণের মত ভয়ংকর সুন্দর শরীর। তারপর বিয়ের পাঁচমাস পর বিজয় সব জানতে পারলো।শ্বশুর বাড়িতে রেখে এসেছিলো নতুন বৌকে। বৌ ছয়মাস ছিলো। তারপর যখন আনতে গেলো, তৃষা তখন দু মাসের প্রেগন্যান্ট। তৃষার এক বান্ধবী বললো,এখানে তৃষাকে রাখবেন না। এক রাবণ মার্কা ছেলে এসে ওর ঘরে ঢোকে।তৃষার মা দরজার বাইরে কপালে হাত দিয়ে বসে থাকে। বাবা অফিসে থাকে। এখান থেকে নিয়ে চলে যান।
তারপর বিজয় তৃষাকে নিয়ে চলে এসেছিলো। পরের বৌকে ফুসলিয়ে নিয়ে কলিযুগের রাবণগুলো কত সংসার ভাঙ্গে তার ইয়ত্তা নেই।

সেই থেকে বিজয়ের মনে সন্দেহের বীজ ঢোকে।সেই অশান্তির আগুনে সারা জীবন জ্বলে যায় বিজয়ের আনন্দ নিকেতন। বিজয়, বন্ধু অনিলকে, সব কথা বলে।সব কথা শোনার পরে অনিল বলে, তুমি সাধু হলেও শুনবে না আইন। মেয়েরা এখন পুলিশের সামনে যা বলবে তাই সত্যি হয়ে যাবে। তোর চাকরী যাবে,সম্মান যাবে। তার থেকে সংসারে সবকিছু মেনে নিয়ে চলাই ভালো। ভালো থাকবি।

অনিল আরও বলে,তোর বৌকে তুই তো নোংরামি করতে দেখিস নি। আরে ভাই,এখন বিছানা থেকে স্বামীকে লুকিয়ে প্রেমিকা চলে যায় প্রেমিকের কাছে। ওসব নিয়ে চিন্তা করিস না। খাবি,দাবি,বিন্দাস থাকবি। মেয়েরা যদিইচ্ছে করে তোকে চদু বানিয়ে তোর সামনেই ইচ্ছে পূরণ করবে। তোর ভাগ্য ভালো, তোর সামনে এসব ঘটে না। যা যা মেলা ফ্যাচ ফ্যাচ করিস না। বাড়ি যা।

বিজয় বাড়ি আসে। চুপচাপ খেয়েদেয়ে বিছানায় আসে। এবার মশারির ভেতরে ঢোকে। তৃষা তালা দিয়ে ওঘরে যাবার আগে আয়নার সামনে বসে চুল আঁচড়ায়। একটু প্রসাধনে ব্যস্ত থাকে। মশারির ভেতর থেকে আয়নায় তৃষার ছবি দেখে বিজয় আঁৎকে ওঠে।ও দেখে পচা,গলা ঘা নিয়ে বসে তৃষা। গালের হনু হাড় বেরিয়ে পড়েছে মাংস গলে,গলে।আর তার পাশেই রাবণের মত এক রাক্ষস খুবলে খাচ্ছে তার পচা গলা মাংস।রাবণের দশ মাথা দশ রূপে তৃষাকে গোল করে ঘিরে ধরেছে ময়ালের মত। এই পাক থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সহজ নয়…

সুদীপ ঘোষাল নন্দনপাড়া খাজুরডিহি পূর্ব বর্ধমান ৭১৩১৫০ মেলsudipghoshal59@gmail.com

সুদীপ ঘোষাল

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *