গঙ্গার ধারে ডুবোপাড়ার শঙ্করকে সবাই চেনে।ছেলেটা সবার সঙ্গে মেশে।বিশেষ করে ওকে মেয়েদের সঙ্গেই দেখা যায় বেশি।কিনু মাতাল এককালে বড় গুন্ডা ছিলো।লম্বা অমিতাভ বচ্চনের স্টাইলের চুল।এখনও সাদা বেল বটম প্যান্ট পরে।সকলে ওকে ঠাট্টা করে ডুবো বচ্চন বলেই ডাকে। শঙ্কর রুমিকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে যাচ্ছিলো।
ডুবো বচ্চন দেখতে পেয়েই শঙ্করকে ডাকলো। শঙ্কর রুমিকে দূরে দাঁড় করিয়ে রেখে ওর কাছে এলো।বললো,কি বলছো কিনু দা।কিনু মালখোর। সে বললো,শালা আবার কোথা থেকে ওই মালটা জোটালি।শালা তোর শুধু নতুন নতুন মেয়ে পটানোর ধান্দা। শঙ্কর তাড়াতাড়ি পাঁচশো টাকার নোট কিনুর পকেটে গুঁজে দিয়ে বললো,কিনুদা পরে কথা হবে। এখন আসি।কিনু নগদ পেয়ে বললো,যা আমাকে দেখবি। তাহলেই হবে। একা খাবি না শালা। তাহলে মরবি।
শঙ্কর টাকা পয়সা দিয়ে লোকাল মস্তানদের হাতে রাখে।সবাই তাকে একজন প্রেমিক যুবক মনে করে।শঙ্কর প্রেম কাকে বলে জানে না। সে শুধু চেনে টাকা।কত নিরীহ মেয়ের যে সর্বনাশ করেছে তার হিসেব কে রাখে? সে একজন শয়তান।নারীপাচার করা তার প্রধান কাজ।কোনো এক নির্দিষ্ট জায়গায় সে বেশিদিন থাকে না। তার নাম পাল্টায় বারেবারে। ছদ্মবেশ ধরে ভালো ছেলে সেজে অভিনয় করে।তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে কিশোরী মেয়েরা তার প্রেমে পড়ে যায়।শঙ্কর সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে।প্রেমের অভিনয় করে তাদের বেচে দেয় বেশ্যালয়ে।এইভাবে লাখ লাখ টাকা সে উপার্জন করে।
ককিন্তু সে জানে না, তার কবর সে নিজেই খুঁড়ছে।
শঙ্কর রুমিকে নিয়ে পার্কে চলে গেলো।ওদের পার্কে ঘন হয়ে বসতে দেখে দুটো বুড়ো বললো,দেশটা জাহান্নমে গেলো।আর কত কি দেখতে হবে ভগবান।
রুমি বললো,তেমাকে যে লোকটা ডাকলো সে কি বলছিলো গো তোমাকে।
—-ও কিছু না। এখন অন্য কথা নয়।তোমাকে কলকাতার কালিঘাটে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো।বাড়িতে রাজী হবে না। আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো বুঝলে।
—— পালিয়ে বিয়ে করা ভালো নয়।আর একটু চিন্তা করো শঙ্করদা।
——আর কোনো চিন্তা নয়। সময় খুব কম। আগামী কাল তৈরি হয়ে এই পার্কে চলে আসবে।
—–ঠিক আছে তাই হবে।আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না শঙ্কর।
—–আমিও তাই। হারাবার ভয়ে আমি তোমাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই।
শঙ্কর কাছে এলেই রুমির তৃতীয় নয়ন তাকে বাঁকা চোখে দেখতো।আবার পরক্ষণেই মনে মনে বলতো,যতসব আজেবাজে চিন্তা।কিন্তু শঙ্কর কাছে এলেই এই অনুভূতি কেন হয়? বুঝতে পারে না রুমি।
তারপর পরের দিন বাবা মায়ের ছবিতে প্রণাম করে রুমি বেরিয়ে পড়লো পার্কে যাবার জন্য।চোখ তার ছলছল করছে। তার জন্মস্থানের মাটি তার পায়ে শেকলের মায়া জড়িয়ে ধরে রাখতে চাইছে।সব মায়া ছিন্ন করে সে শঙ্করদার কাছে চলে গেলো।
শঙ্কর কালিঘাটের নাম করে তাকে এক বেশ্যাপট্টির ঘরে তুললো। রুমি বললো,এখানে কেন?
শঙ্কর বললো,আজ রাতটা এখানে কাটিয়ে কাল আমরা বিয়ে করবো।আমার মাসি এখানে আছে।ও যা বলবে সব শুনবে। আমি একটু বাজার থেকে ঘুরে আসি।
তারপর শঙ্কর মাসির কাছে মোটা টাকা আদায় করে আবার নতুন চিড়িয়ার খোঁজে চলে গেলো।শঙ্কর টাকার লোভে সব ভালোবাসা ভুলে চলে গেলো।রুমি জানতেও পারলো না কতবড় ভুল সে করে বসে আছে।মেয়েরা যাকে ভালোবাসে তাকে নিয়ে শুধু স্বপ্ন দেখে।বলে কয়ে তো আর প্রেম হয় না। তাই মেয়েদের এত বিপদ।শঙ্করের মত ছেলেরা প্রেমের প জানে না। তারা শুধু চেনে টাকা।আর এই লোভের চক্রে পড়ে তাদের অকালমৃত্যু হয়। তবু তার পতঙ্গের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে আগুনে।
শঙ্করের মনে আছে ছোটো থেকেই সে মানুষ হয়েছে এক বেশ্যালয়ে।কে যে তার বাবা সে জানে না। শুধু তার মনে পড়ে মায়ের মুখটা। তার যখন পাঁচ বছর বয়স তখন থেকেই সে মানুুষ হয় এক মাসির কাছে।সেই মাসিই তার মা, তার বাবা।মাসি তাকে শিখিয়েছে কেমন করে লোক ঠকিয়ে খেতে হয়।কেমন করে জালিয়াতি করতে হয়।ধীরে ধীরে শঙ্কর লোক ঠকানোর কাজে পাকা হয়েছে। আজ সে একজন নারী পাচারকারী যুবক।কোনো মায়া, মমতা তার হৃদয়ে নেই।হৃদয়, বিবেক বলে কোনো শব্দ তার অভিধানে নেই।তাই সে অম্লান বদনে রুমিকে ছেড়ে চলে যেতে পারলো।
মাসি একটু পরে রুমির কাছে এলো। রুমির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,খাসা মাল তুই।বাজারে খলবল মচিয়ে দিবি তুই মাগি।তোকে দেখে লম্পটগুলো পাগল কুত্তা হয়ে যাবে।রুমি এসব ভাষা বোঝে না। কত আদরে বাবা মায়ের চোখের মণি হয়ে ছিলো সে।শান্ত নজরে সে মাসির দিকে চেয়ে থাকলো।
রুমি বললো,আমাদের কাল বিয়ে হবে। আপনি থাকবেন তো?
মাসি বললো,নিশ্চয়।তবে আমার এখানে বিয়ের আলাদা নিয়ম। আগে ফুলশয্যা। তারপর বিয়ে।
রুমি বললো,তার মানে? কি বলছেন মাসি।আমাকে বুঝিয়ে বলুন।
মাসি বললো,তোর তর সইছে না মাগী।রাতে জানতে পারবি। শুবি আর লিবি।
রুমি ভয় পেয়ে বললো,শঙ্করদা কই।আমি ওর কাছে যাবো।
মাসি বললো,ও শালা দালাল।টাকা নিয়ে ভেগেছে।আবার নতুন মাল আনবে। তোর মতো কচি মাল।তোর দর প্রথম রাতে দশ পেটি লোবো।যা ভালো করে সাফা হয়ে লেগা।
তারপর দুজন মেয়ে রুমিকে টানতে টানতে বাথরুমে নিয়ে গেলো। দরজা বন্ধ করে বাইরে দাঁড়িয়ে পরলো।
বাথরুমের ভিতরে রুমি কাঁদতে লাগলো।শঙ্করের মত পশুকে সে চিনতে পারে নি বলে তার খুব আপশোষ হলো।বাবা মায়ের মুখ মনে পড়লো।কি ভুল সে করেছে,তা ভালোভাবে বুঝতে পারলো। শঙ্কর তো ভালো ছেলের মত তার সঙ্গে ব্যবহার করেছে।কোনোদিন গায়ে হাত দেয় নি।শুধু বলতো,বিয়ের আগে মেয়েদের গায়ে হাত দিতে নেই।পাপ হয়। আর আজ এতবড় পাপ সে করতে পারলো নির্দ্বিধায়।কি করে পারে একটা মানুষ এমন হীন কাজ করতে। রুমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
দরজায় আওয়াজ হলো ঠক ঠক করে যমদূত দুটো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
রুমির তৃতীয় নয়ন আবার খুলে গেলো।ও দেখলো একটু পরেই ওর অবস্থা আরও পাঁচটা বাজারের খারাপ বেশ্যার মত হবে।কুকুর, বেড়ালে ছিঁড়ে খাবে তার যত্নের শরীর।
বাথরুম থেকে বেরোনো মাত্র তার হাত দুটো ধরে একটা ঘরে তাকে বন্দী করে রাখলো।বাইরে থেকে মাসীর গলা শোনা যাচ্ছে।এক মারোয়াড়ি খরিদ্দার এসেছে, বাথরুম থেকে বেরিয়ে সে দেখে ফেলেছে।মাসি দরদাম করছে,লা রে বাবু অই দশ পেটিই লাগবে। কচি মাল। তালশাঁস খাবে,আর মাল ছাড়বে না।তাই কি হয় বাবু?
বাবু খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে রুমির ঘরে ঢুকলো।এখন রুমি তার কেনা মাল।তাকে যেমন করে খুশি বুড়ো ভামটা খাবে।কেউ কিছু বলার নেই।
শঙ্কর রুমিকে বিক্রি করে এসে আর একটা গ্রামের মেয়ে তুলেছে।শঙ্কর বলছে মেয়েটাকে,আমার কথা শুনলে কোনো অভাব হবে না। আমি তোকে বিয়ে করবো। তোর কোনো ভাবনা নাই।
সব মেয়েদের তৃতীয় নয়ন প্রখর। কিন্তু ভালোবাসায় সব অবিশ্বাস বানের জলের মত বয়ে যায়।গ্রামের মেয়ে ঝুমা বার বার শঙ্করকে প্রশ্ন করতো,তোমার বাবা,মা কোথায়।নিয়ে চলো আমাকে তোমাদের বাড়ি।
শঙ্কর বলতো,আমার বাবা,মা কেউ নেই।একমাত্র কলকাতায় মাসি আছে।তোমাকে একদিন নিয়ে যাবো।কবে তোমার সময় হবে আমাকে বলবে।
তারপর একদিন চুপিচুপি ঝুমাকে নিয়ে কলকাতার মাসির কাছে নিয়ে এলো।ঝুমা যখন সবকিছু বুঝতে পারলো তখন তার আর কিছু করার নেই।
ঝুমা বললো,আমার তৃতীয় নয়ন তোর শয়তানি বুঝতে পেরেছিলো।শয়তানের সাতদিন মনে রাাখবি।
শঙ্কর বললো,রাখ তোর তৃতীয় নয়ন।শালি এবার বুঝবি আমি কি জিনিস।
তারপর এইভাবে অনেকদিন চললো।রুমি আর ঝুমা দুজনে একঘরে থাকে। দুজনেই শঙ্করের দ্বারা প্রতারিত। তাই দুজনে প্ল্যান করে শঙ্করকে নিজেদের ঘরে ডাকলো,তারপর বললো,শঙ্করদা,এক ধনী লোক আমাদের কিনতে চাইছে মোটা টাকা দিয়ে।আমরা চাই তুমি আমাদের বাইরে নিয়ে যাবে রাতে। দশ লাখ টাকা পাবে।আমরাও পাবো দশ লাখ।মাসি জানতে পারলে এক পয়সাও পাবে না।সাবধান।
শঙ্কর বললো,আজ রাতেই পালাবো আমরা।শঙ্কর এখানেই হিসেবে ভুল করলো। সে জানে না, মাসি তার থেকেও হিংস্র মানুষ।তাদের হৃদয় বড় নিষ্ঠুর।তবু পয়সার লোভে শঙ্কর মেশে দুটোকে আবার বিক্রি করার খেলায় মেতে উঠলো।বাঘ যেমন শিকার ছেড়ে গেলে আরও হিংস্র হয়ে ওঠে এইসব মহিলাও অই বাঘের মত।
মাসি শঙ্করকে দেখতে পেয়ে বললো,কি রে। বিনি পয়সায় মারলি শালা।
শঙ্কর বললো, না মাসি।একটু দরকার ছিলো।কি দরৃার রে বেটা।মায়ের কাছে মাসির গল্প করছিস।শালা ঝপ্পরগিরি
শঙ্কর পালিয়ে বাঁচলো।
মাসির তৃতীয় নয়ন সব কিছু দেখতে পেলো।সে জানে,শঙ্কর কেন ঘোরাফেরা করছে তার গলিতে।শঙ্করের মত ছেলেদের মাসি চেনে। তারা আরও টাকার লোভে বেইমানি করতে ভয় পায় না
হাত কাটা মুন্নাকে ডেকে বললো,কি রে মুন্না। গতরে ঘা হলে কি করতে হয় রে মুন্না।
মুন্না বললো,অপারেশন মাাসি অপারেশন করলেই সব ঠিক হবে।
মাসি বললো,শালার মতিভ্রম হয়েছে রে।তাড়াতাড়ি যা,কাজটা কম্প্লিট কর…