আমি এক ধূপকাঠি // সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
যতক্ষণ বাঁধা ছিলাম প্যাকেজে জ্যাকেটে
সুগন্ধি বেরোয়নি এতটুকু যা দরকার ছিল
বেশ তো ছিলাম
সকলের শ্রদ্ধা পেতাম আকস্মিকতায়
আগুনে পুড়ে পুড়ে সুগন্ধি সুরভিতে
মুগ্ধ হয় মন্দির মসজিদ গির্জা
প্রণয়গাথা পরিবার সভামঞ্চ
কী করে কীভাবে অকস্মাৎ
সেই সুগন্ধি
ঢুকে গেল সংসারের ভেতরে
চর্চিত হোল পথে ঘাটে জানলা দরজা খুলে
অন্দরে অন্তরে ঠোঁটে ঠোঁটে
সুগন্ধি দুর্গন্ধ যা ছিল সংসারীর কপালে
যা বেরুচ্ছে বেরুক,ধূপ তবু আজও জ্বলছে—
জ্বলুক।
আমি ততক্ষণে
সংসার -জানলা খুলে দেখে নিই
নিভৃত প্রাণ-সমুদ্র—-
ধূপ পুড়ে পুড়ে ছাই হয়
কেউ মনে রাখে না তাকে
গভীর অন্ধকারের নব্য ভিখারিনি ভেবে
.
যেও না চলে – রণেশ রায়
যেও না, না, যেও না এখুনি চলে
এখনও আকাশে আলো জ্বলে
পাখিরা ওড়ে কলরবে
বাতাসে হিন্দোল সরবে,
সূর্য গেলে অস্তাচলে তুমি যেও চলে
আমি রব নীরবে আঁধারে পড়ে
না যেও না যেও না এখুনি চলে।
দেখো ওই গগনে রবি গান গায়
অরুণের কিরণ চাঁদের অপেক্ষায়
তোমার মুখে এখনও আলো ঝরে
গোধূলি বেলায় কাকে খুঁজে ফেরে
না যেও না, এখনই যেও না চলে।
যাবার আগে শেষ কথা যাও বলে
জোৎস্নার ডাকে যেও তুমি চলে
রব আমি জেগে ভোরের অপেক্ষায়
তুমি খেলা কর রাতের জ্যোৎস্নায়
না যেও না যেও না এখনই চলে
দেখ আকাশে এখনও আলো জ্বলে।
.
মিলি এসো—- রণেশ রায়
তুমি যে কোথায় জানা নেই আমার
একবার এসো দেখা দাও আবার
জীবন অন্তে এই গোধূলি বেলায়
আমি থাকি বসে তোমার অপেক্ষায়
একবার তুমি এসো দেখা দাও আবার
তুমি যে কোথায় জানা নেই আমার।
আমি গাঁথি সযতনে সে মালাখানি
তুমি যে আসবে একবার আমি জানি
বাসর সাজে তুমি এসো এই সাঁঝ বেলায়
মিলি এসো আবার আমরা দুজনায়
তুমি যে কোথায় জানা নেই আমার
একবার এসো দেখা দাও আবার।
.
ভুলিনি // সঞ্জিত মণ্ডল
সঞ্জিতের আধুনিক পদ্য কবিতা ভুলিনি
তোমাকে হারাতে চাইনি বলেই সেদিন ছুঁয়েছি তোমাকে,
আমি যে আকাশ ধরতে চেয়েছি মুখ ফুটে সেও বলেছি।
তুমি রাজী ছিলে কথা দিয়েছিলে চলে যাব বনছায়াতে,
দেখতে দিয়েছ, দেখেছি তোমাকে অমল বিমল শোভাতে।
সারাটা দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে আবিষ্কারের নেশাতে,
এতো মায়াময়ী কি করে যে হলে, কত শোভা দেখি তোমাতে।
দুহাত পেতেছি যা কিছু চেয়েছি সব দিয়েছিলে আমাকে,
লীন হয়ে গেছি, সব ভুলে গেছি,তোমার অমল শোভাতে।
সন্ধ্যা নেমেছে পাখিরা ফিরেছে তরুতলে তরুছায়াতে,
তবুও তোমার কিরণে মুগ্ধ হয়েছি জোনাকি আলোতে।
মনে করে দেখো কত দেরী হল মাঝি ফিরে গেলো কূলেতে,
তুমি আমি মিলে গিয়েছিনু ভুলে বাসর শয্যা সাজাতে।
যদি তাই বলো, সে স্বপন ছিল চোখ বুঁজেছিল নেশাতে,
মদিরাবিহীন সে যে কি গহীন নেশাতে লিপ্ত তোমাতে।
ঘুম কি ভেঙেছে, পাখিরা জেগেছে, তরুতলে ছিনু বিছায়ে,
কত পাখি ডাকে ঘুম টুটে থাকে কুসুম কলির ফোটাতে।
যে প্রভাতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছি স্পর্শ করেছি তোমাকে,
সারাদিন রাত পরেও সে রাত হয়নিকো শেষ তোমাতে।
তাই চেয়ে থাকি অনিমেষ আঁখি আজও জেগে থাকি আশাতে,
জানি ভুলবো না, ভুলিনি কখনো সেদিনের সেই তোমাকে।
.
লাঠি // ফরহাদ হোসেন
মোকবুল ইতিহাসে এম.এ;বি.এড;পরনে ছেঁড়া জামা,ছেঁড়া ফুল পেন্ট,ময়লা শরীর।তাকে শাসন করবার কেউ নেই।একসময় লাজুক নামে পরিচিত ছিল আত্মীয় সমাজে।আজ কোন লজ্জা নেই;একটা বেহায়া।
দিন পর দিন পাগলামিটা বেড়ে যাচ্ছে মকবুলের।শহরের ফুটপাতে বাসা;আহারে ভরসা মানুষের কৃপা,না হয় ডাস্টবিন।বুকে মধ্যে কোন আফসোস নেই,নেই কোন প্রতিবাদ।
গত ফাল্গুন-চৈত্রে দু-দল ধার্মিকের মাঝে পরে মাথায় আঘাত পেয়েছে প্রচুর;জ্ঞান না হারা পর্যন্ত চিৎকার করেছে
-দেশটা আমাদের সবার।দেখ,আমার যে রক্ত বার হচ্ছে তার রং লাল।তোমরা লাঠি ফেলে দাও!ফেলে দাও!
আজ সেই মোকবুল নিজেই লাঠি খুঁজে ফেরে দোকানে দোকানে,
-দাদা,লাঠি পাওয়া যাবে!
-কি রকম লাগবে?তোকে পেটানোর মত।
কেউ শুনেনা মোকবুলের কথা।কেনই বা শুনবে,এক জন পাগলের কথা!
একদিন লাঠির খোঁজে ঢুকেছিল থানায়।দারোগা বাবু দেখতে চেয়েছিল পাগলামি,মজার নেবে ভেবেছিল মনে,
-কেমন লাঠি চাই তোমার।
-বাবু,একজন বুড়ো মানুষ সবরমতি আশ্রম থেকে ডান্ডি পর্যন্ত;এমনকি ভারতবর্ষ অনেক জায়গা ঘুরেছেন যেমন লাঠির উপর ভর দিয়ে,আন্দোলন করে স্বাধীনতা আনতে শিখিয়েছেন,তেমন লাঠি গো বাবু।
দারোগা বাবু অবাক হয়ে থাকে,ভেবে না পায়,বলবে কি সে এই পাগল ছেলেটাকে-
-কি করবি লাঠি দিয়ে?
-মানুষের মেরুদন্ড বেঁকে যাচ্ছে গো বাবু দিনে দিনে!তারা জানেনা কি করছে?যদি পাই লাঠিটা তাদেরকে দিয়ে বলবো-
-নে রে ভাই নে,কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়া,জয়গান কর এ লাঠির।
-শুনবে তোমার কথা!
শুনবে গো বাবু,শুনবে।না হলে যে নিজের মাথা নিজেই ফাটিয়ে দেব লাঠির আঘাতে।দেখতে পারবে না ভায়ের রক্ত!রক্ত যে লাল।তাদের রক্ত কি কালো?
দারোগার চোখে মুখে বিষাদের ছায়া,ভেবে না পায়,কোথা থেকে এল ভারত আত্মার ছায়া।
.
প্রেমিকা // লাবন্য শাহিদা
দিব্যি নিলুম ছুয়ে শিরা ধমনিকা
পরের জন্মে হব মনের মত প্রেমিকা
আজকে যখন বিস্বাদ ছুয়ে বলিস,
তুই বরঞ্চ বাচ্চামো টা ছাড়িস!
তখন চোখ টা ভাসাই স্রোতে
জানতে পারিস কি তা কোনো মতে?
নতুন মানুষ বোঝে কি ভালো?
ছিলাম যখন তোর আবেশে কালো
বৃষ্টি ছিল মফস্বলের রেলে
ছুট লাগাতাম সেই হুল্লোড় বেগে
অভিযোগের সাতটি প্রহর শেষে
পাহাড় ভাঙ্গে গর্জন আর মেঘেতে
আচ্ছা বলি,
এখনো কি রেগে করিস তান্ডব?
ধৈর্য নিতুম চোখটি বেয়ে
এমন কেন তুই অর্নব!
আজো যখন মাথা ব্যাথা ঝাপালে
কেউ এসে কি হাতটা রাখে কপালে
অট্টহাসি দিতুম সকাল দুপুর সাঁঝে
তুই বলতিস,থাম প্লিজ,এসব কি সাজে!
জানিস,আজ অনেকদিন কেটে গেছে
হাসি যেন আমায় ছেড়ে গেছে!
এখন আর দেখা হইনা মোদের
পাংশু মেঘ আর একশ বৃষ্টি আকাশ
তুই ছিলিস মোর বেঁচে থাকার প্রকাশ
কেন যেন ছেড়ে গেলি চলে
চোখটা ভাসে রাতটা ভরে এলে
একটু এসে দেখ
বাচ্চামি টা ছেড়ে গেছে
নতুন নতুন রেশ
এখন কাঁদি এক সমুদ্র চোখে
নতুন ভোরের আলোর মিছিল দেখে
সত্যি বলছি দেখিস
দিব্যি নিলুম ছুয়ে শিরা ধমনিকা
পরের জন্মে হব মনের মত প্রেমিকা