বিষন্নতাময় শহরের এক গভীর রাত। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। দিনের কোলাহলময় ব্যস্ত শহরটাকে নিয়ন বাতির আলোয় বড্ড অচেনা লাগছে। হেঁটে চলেছি। গন্তব্য???….হুমম…জানিনা। কেন হাঁটছি তাও জানিনা। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে বজ্রপাত হচ্ছে। জোর হাওয়া বইছে। মনে হয় ঝড় হবে। হঠাৎ বজ্রপাতের সাথে কোনো মেয়ের চিৎকারের শব্দ শুনলাম বোধ হয়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই। মুচকি হাসলাম। না,কেউ নেই তো। আচ্ছা, সত্যিই কেউ নেই তো? কে জানে???
হেঁটে চলেছি । আবার ও বজ্রপাত। শুনতে পেলাম কিছু মানুষের আর্তনাদ। নাহ, কাউকে তো দেখছি না। তাহলে কি ভুল শুনলাম।কে জানে? অদ্ভুত এক চিন্তা খেলা করছে মস্তিষ্কে। কি চিন্তা? তা বলতে পারব না। পা চলছে। কেন যেন মনে হলো রাস্তার পাশের বস্তিটা থেকে কোনো এক ক্ষুধার্ত শিশুর কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি। আবারো বজ্রপাতের বিকট শব্দ। কই? কোনো কান্নার আওয়াজ নেই তো।
হঠাৎ নিয়ন বাতি গুলো নিভে গেল। মৃত শহরটাতে আধাঁর ঘনীভূত হতে লাগল।অন্ধকার এ শহরটার সবকিছুই অস্পষ্ট, কালো, অনুভূতিহীন মনে হচ্ছে। তবুও হেঁটে চলেছি। বজ্রপাতের আলোয় আবছা দেখতে পেলাম আঁধারের এক রাজকুমারী কে। একরাশ বিষন্নতা নিয়ে আমারই মতো হেঁটে চলেছে এক অনির্দিষ্ট গন্তব্যে। তার চোখের পানি বৃষ্টির মতো অবিরাম ধারায় ঝরে পড়ছে। আচ্ছা, বৃষ্টির সময় কি মানুষের কান্না আলাদা করা যায়?? হয়তোবা যায় না।কই?এখন তো কোনো মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি না। মুখে একটা ছোট্ট হাসির রেখা ফুটে উঠল।তাহলে কি ভুল দেখলাম? প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করল। এ হাওয়া যেন সকল যান্ত্রিকতাকে উড়িয়ে নিয়ে চলে যাবে। ঝড় হবে,প্রচন্ড ঝড় । এ ঝড় সব আদিম খেলা সমূলে উপড়ে ফেলবে। তবু্ও আমি থেমে নেই। ইচ্ছা করলেও ;থামা যে অসম্ভব। কারণ আমি যে এ অন্ধকারের এক নিরব সাক্ষী, রাতের এক সস্তা অস্তিত্ব,যার বিলীন ঘটছে প্রচন্ড ঝড়ে । অবশ্য, অন্ধকারকে যাহা আলিঙ্গন করিয়াছে কালো তেই তাহার সমাপ্তি। কিন্তু, যে আমি অন্ধকারের মহাযাত্রা পথে চলা শুরু করেছি, সে আমি কি জানি এর শেষ গন্তব্য কোথায়। হয়তো জানি না। তাই তো শুধু হাঁটছি, হাঁটছি আর হাঁটছি…………………
Rudro Rahman Roddur