খেলাধুলোর দিনগুলো – রাজু দেবনাথ

( যেসব কবিতা গুলো ডাইরির পাতা ছেড়ে বেরোতে পারেনি তাঁদের জন্য)

  • এই তুই বলনা ভাই ইমরান কে। তুই দলের স্ট্রাইকার তুই বললে ঠিক বুঝবে।

সোহম সকাল থেকে কানের পোকা নাড়িয়ে যাচ্ছে আমার। আমি ওকে একবার বলেছি যে পাড়ার ফুটবল টীমে ওকে এবার নেওয়া যাবেনা। আমাদের টীমের ক্যাপ্টেন ইমরান রাজী না। কারন সোহম ফুটবল বলতে শুধু ফুট বোঝে। ডিফেন্সে খেল্লে বল এলে যে প্লেয়ার না মেরে বল টাকে মারতে হয় সেটা সোহম ভুলে যায়।

  • একবার বললাম তো হবে না। শেষবার কি করেছিলি মনে নেই? তোর জন্য পাঁচটা গোল খেয়েছিলাম ফাইনালে। 

আমি সোহম কে বললাম। আচ্ছা জ্বালাতনে পড়া গেলো। 

  • আমি না থাকলে দশটা গোল হত সেইবেলা? আর খালি ফাইনাল দেখছিস? তার আগের ম্যাচে যে প্রায় গোল না খেয়ে ফাইনালে উঠলাম সেগুলো তোরা ধরবি না?

সোহম বলল।একদম নাছোড়বান্দা হয়ে হত্যে দিয়ে পড়ে আছে আমার বাড়ি।

  •  সেটা তোর সাথে নিলয় ছিল তাই। আর ফাইনালে তুই না থাকলে চার গোল খেতাম। একটা তো তুই ক্লিয়ার করতে গিয়ে আমাদের গোলকিপার সদাশিবের মুখে ধাঁই করে মেরে বল গোলে ঢোকালি মনে নেই?

আমি রাগ রাগ ভাবে এবার বলে উঠলাম। 

  • সেটা আমার দোষ না। সদু ব্যাটা বল পাস দিলে ধরতে না পারলে আমি কি করবো?

সোহম একদম মনে হচ্ছে ভেবে এসেছে টীমে সিলেক্ট না হয়ে বাড়ি যাবেনা।

  • তোর ব্যাপার টা কি বলতো? আগের বার হারার পর ইমরানের থেকে গালাগালি খেয়ে পণ করলি আর কোনদিন ফুটবল খেলবি না। কি হল তার?

আমি বললাম সোহম কে।

  • শোন ভাই, তোকে বলতে লজ্জা নেই। এইসব আসলে সোমালিয়ার জন্য।

সোহম একটু হাসি হাসি মুখ করে বলল।

সোমালিয়া আমাদের পাড়ায় পাঁচ ছয় মাস হল এসেছে। আসার সাথে সাথে আমাদের পাড়ায় ওঠা রোদ্দুর যেন ডবল চড়া হয়ে গেছিল আর আমাদের মত ছেলেদের মনে জ্বলে উঠেছিলো হাই ভোল্টেজ এল ই ডি। বেশ কয়েকদিন আমাদের মধ্যে তর্ক চলেছিল যে সোমালিয়া কোন গ্রহ থেকে আমাদের এই শ্যামপুকুরের গলিতে এসে হাজির হলো। সাধারণত পৃথিবীর মেয়েদের ওরকম চকলেট রঙা চোখ আর ওরকম মারকাটারি টোল থাকেনা। শ্যামপুকুর এত কিছু সামলাতে পারলে হয়। আমাদের মত নিন্দুক দের খুশি করে বেশ এতদিন হল রয়ে গেছে শ্যামপুকুরে সোমালিয়ারা। আমিও যে এক আধটু ঝাড়ি মারার চেষ্টা করিনি বললে মিথ্যে হবে কিন্তু যখন আমি বুঝে গেছি যে স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা আসলে অনেক দূরে থাকে আর যে রেটে পেট্রোলের দাম আর সোমালিয়ার দেমাগ বাড়ছে আমার পক্ষে পেরে ওঠা মুশকিল। আমি তক্ষুনি মনে দশ মণ পাথর রেখে সাইড হয়ে গেছিলাম। এই সোহম এখনো সাইড হতে পারেনি। এখনো চাতকের মত হাঁ করে আছে, এই বৃষ্টি হল বলে।

  • সোমালিয়ার জন্য মানে?

আমি অবাক হয়ে সোহমের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। 

  • এখানে না। কাকিমা আছে। কালুয়ার দোকানে চল। চা খেতে খেতে বলছি।

সোহম বলল।

  • ভাগ, সকাল সকাল আমি টাকা খরচ করতে পারছিনা। 

আমি ঝাঁজিয়ে উঠলাম। সকাল সকাল গপ্পো শুনতে গিয়ে ১০ টাকা গচ্চা দিতে পারবো না। 

  • আহা তুই কেন? আমি খাওয়াবো?

সোহম মিহি সুরে বলে উঠলো। আমি আবার ফ্রির চা তে না বলতে পারিনা। গায়ে লাগে। আমি তাই অগত্যা গেলাম সোহমের সাথে কালুয়ার দোকানে। আমরা চা আর প্রজাপতি বিস্কুট নিলাম। এরকম চা আর প্রজাপতি বিস্কুটের সাথে শহরে অলিতে গলিতে কত আড্ডা কত গল্প তৈরি হয়। 

  • বল কি বলবি তাড়াতাড়ি। আমি ইমরানের বাড়ি যাবো একটু।

আমি ভাঁড়ে একবার চুমুক দিয়ে সোহম কে প্রশ্ন করলাম। 

  • আমাকে রনিত বলছিল, সোমালিয়া নাকি খুব ফুটবল পছন্দ করে। এইবার আমাদের খেলা দেখতে আসবে।

সোহম হে হে করে দাঁত বের করে বলল। রনিত আমাদের থেকে বছর দুয়েকের ছোট। আমাদের পাড়ার টীমে মাঝ মাঠে খেলে। ভালো পায়ের কাজ আছে ছেলেটার। 

  • তো? তাতে কি হল? তাছাড়া রনিত জানলো কি করে?

আমি চাটা লম্বা চুমুকে শেষ করে ভাঁড়টা ফেলে দিলাম। 

  • আরে রনিত সোমালিয়ার ভাইয়ের সাথে এক কোচিংয়ে পড়ে। তাই জেনেছে। ভাই দিদি দুজন ভক্ত ফুটবলের। আমাকে এইবার খেলতে হবেই ভাই টীমে। জান লাগিয়ে দেবো দেখিস। পা দিয়ে রক্ত বেরোবে তাও আমি জমি ছাড়বো না। সেই দেখে সোমালিয়া হাউ হাউ করে কাঁদবে। উফ গুরু ভাবলেই কেমন গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। 

সোহম কেমন যাত্রা করার মত ভাবে চলে গিয়ে এইসব বলছে। আমি কিছু একটা বলতে যাবো এমন সময় দেখি রাকা আমাদের দিকে আসছে। সঙ্গে সামনে ঝুড়ি লাগানো সাইকেল। রাকা কোথাও গেলে সবসময় এই সাইকেল সঙ্গে নেয়। রাকা আমাদের থেকে বছর তিনেকের ছোটো। আমাকে প্রত্যেক বছর ভাইফোঁটা ও দেয়। আমার তাই রাকার উপর আলাদা টান আছে একটা। চশমা পরা সাদামাটা রাকা যেন কাশবনের মত স্নিগ্ধ। 

  • তোমরা কি নিয়ে কথা বলছ গো সোহমদা?

রাকা সোহমকে জিগ্যাসা করলো। রাকার মধ্যে সেই ছেলেমানুষি ব্যাপারটা এখনো যায়নি। এই জন্য রাকা কে আমার এত ভালো লাগে। একটু বড় হলেই সবাই কেমন জটিল হয়ে যায়। রাকা তাঁদের মত না। 

  • তোর কি রে তাতে? পার্সোনাল আমার।

সোহম বলল। রাকা এসে যাওয়ায় সোমালিয়ার কথাতে বাগড়া পড়েছে তাই সোহম একটু বিরক্ত হয়েছে মনে হচ্ছে। 

  • বল না, আমি কি পাড়ার সবাইকে বলে বেড়াবো নাকি?

রাকা রীতিমত বায়না শুরু করেছে। আমার হাসি পেলো দেখে।

  • আসলে তুই আমাকে ভাইফোঁটা দিস ওকে দিসনা তাই ওর রাগ হয় প্রত্যেক বছর। আমাকে তাই বলছিল। 

আমি হেসে রাকাকে বললাম। 

  • ইশ, আমি সোহমদা কে কেন ভাই ফোঁটা দেবো?  

রাকার মুখটা কেমন রাগ রাগ দেখাচ্ছে। আমার ভাবার ভুল ও হতে পারে। 

  • কেন? আমাকে দিস যে? ওকে দিতে কি সমস্যা?

আমি রাকাকে জিগ্যেস করলাম। 

  • তোমার চেহারা টাই দাদার মত। সোহম দার অন্যরকম। আমি উঠি। সকাল সকাল গল্প করলে মা আবার বকবে। গেলাম আমি।

রাকা সোহমের দিকে হালকা হাসি দিয়ে চশমা ঠিক করতে করতে সাইকেল চড়ে বাড়ির দিকে চলে গেলো। 

  • মেয়েটা যে কি বলে কে জানে?

সোহম বলল। রাকা কি বলতে চেয়েছে সোহম না বুঝলেও আমি হয়তো বুঝতে পারছি। শেষে আর দুনিয়ায় ছেলে পেলো না রাকা। 

  • শোন, সোমালিয়া ওই পাড়ার রোহিত দার সাথে ঘোরে জানিস তো? ওদের টীম ও আছে কিন্তু খেলায়। তুই সোমালিয়ার পেছনে এইভাবে পড়ে আছিস শুনলে কেলিয়ে পেছনের চামড়া কিন্তু সিমলার আপেলের মত লাল করে দেবে। 

আমি সোহম কে বললাম। আগে থেকে সাবধান করে দেওয়া ভালো। নাহলে হুজ্জতি হলে সেই আমাকে ইমরান কে যেতে হবে আবার। 

  • আরে ওইটাই তো ব্যাপার। রোহিত ব্যাটা স্ট্রাইকার আর আমি ডিফেন্স, ব্যাটাকে এমন নাকানি চোবানি খাওয়াবো না। লজ্জায় আর মাঠে নামবে না কোন দিন। আমার রাস্তা ক্লিয়ার।

সোহম এত সহজে বুঝিয়ে দিল যেরকম পাতি উপপাদ্য স্যারেরা ছাত্রদের বুঝিয়ে থাকেন। আমি বুঝে গেছি প্রেমের পোকা নড়েছে মানে যতই আগুনে ফাঁড়া থাক সোহম সেই নেড়া পোড়াতে যাবেই। বলে কোন লাভ নেই।

  • ঠিক আছে আমি ইমরান কে বলে দেখবো কিন্তু আমি কিন্তু কথা দিতে পারছিনা। পরে এসে ঘ্যান ঘ্যান করবি না বলে দিলাম।

আমি কালুয়ার চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম। একবার ইমরানের বাড়ি যাওয়া দরকার। 

  • আরে তোর কথা ঠিক শুনবে আমি জানি। যা ভালো করে বলবি। সোমালিয়া এইসব বলিস না আবার। একটু সেনটু দিবি। ম্যানেজ হয়ে যাবে।

আমি ইমরানের বাড়ির দিকে এগোলাম। ইমরান দের বাড়ি যেতে রাস্তায় সোমালিয়ার বাড়ি পড়ে। ওদের বাড়ির নিচ থেকে যাওয়ার সময় দেখলাম সোমালিয়া ব্যাল্কনিতে হাঁটতে হাঁটতে কার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে ফোনে। আমার সাথে চোখে চোখ পড়া মাত্র মুখ ঘুরিয়ে নিলো। বাবা দেমাগ।

অনেক কষ্টে ইমরান সোহম কে টীমে রাখতে রাজী হয়েছে কিন্তু এক্সট্রা ম্যান। মানে টীম আর হারবে না সেইসময় একজনকে তুলে নিয়ে বা কেউ যদি বাইরে যায় কোন দরকারে ম্যাচের মধ্যে তখন সোহমকে নামানো হবে। আমি ইমরানকে বেশি বললাম না। এইটুকু যে ও করেছে এই অনেক। মাঠে সোহমের রেকর্ড খারাপ আছে। মন টা এখন থেকেই কেমন উত্তেজনায় ফুটছে। এখুনি বল পেলে ধাঁই করে মেরে দিতাম আমি।

  • কি আমি এক্সট্রা ম্যান? এত অপমান?

আমি আর সোহম আমার বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে গল্প করছিলাম। এর ফাঁকে আমি সোহমকে টীমে ওর চান্স পাওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছি। সেই শুনে সোহম ক্ষেপে গেছে।

  • এই শোন, তোর ভাগ্য যে টীমে নিয়েছে। যা ধেড়িয়েছিস না আগের বার। তাছাড়া একদম নামাবে না নাকি? ফাইনালের আগে পরপর দুটো ম্যাচ। কেউ না কেউ ঠিক হাঁপাবে ডিফেন্সে। তোকে নামাবে।

আমি রাগ রাগ করে বলে উঠলাম। লোকে দেখছি খেতে পেলে শুতে চায়। 

  • নেহাত সোমালিয়ার জন্য এই অপমান আমি হজম করে নিলাম। 

সোহম তবু গজগজ করতে লাগলো। আমার লক্ষন ভালো ঠেকছে না। খেলার দিন ক্যাচাল না পাকায় আবার। 

খেলার দিন শনিবার আর রবিবার। শনিবার নক আউট আর রবিবার ফাইনাল। শনিবার আমি মাঠে গিয়ে দেখি সোহম সবার আগে মাঠে পৌঁছে জার্সি পরে কসরত করছে। দেখেই আমার হাসি পেয়ে গেলো। 

  • কি রে মালদিনি এবার বন্ধ কর। সোমালিয়া দেখেছে তোকে।

আমি হেসে বললাম। সোহম একবার মাঠের কিনারা দেখে নিলো। সোমালিয়া আর ওর ভাই সানি চেয়ারে বসে আছে। সোহম আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। 

  • রোহিত ব্যাটাকে পাই দেখ……।

সোহমের কথা আটকে গেলো রাকার ডাকে। এইদিকে সোহম দা সোহম দা করতে করতে এগিয়ে আসছে। 

  • তোর আবার কি হল?

আমি রাকাকে জিগ্যেস করলাম। মেয়েটা একদম মাঠের মধ্যে এসে হাজির হয়েছে। আচ্ছা মুশকিল। 

  • আমি সোহম দার নামে জন্য পুজোর ফুল এনেছি যাতে সোহম দা ভালো খেলতে পারে।

বলে রাকা সোহমকে ফুল দিলো। সোহম আবার খুব ঠাকুর দেবতা মানে। নমস্কার করে পকেটে রেখে দিলো।

  • আমার জন্য আনলি না?

আমি রাকাকে জিগ্যেসা করলাম। 

  • তুমি তো এমনি ভালো খেলো। তোমার লাগবে না।

আমি দেখলাম সোহম রাকার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝলাম না রাকার কথায়।

পরপর দুটো ম্যাচ জিতে আমরা ফাইনালে উঠেছি। সোহম সব মিলিয়ে মিনিট দশেক খেলেছে। তার মধ্যে ওর কাছে একবার বল গেছিলো। ভালোই ক্লিয়ার করেছিলো বল টাকে। ফলে ইমরানের মানে টীম ক্যাপ্টেনের কোন অভিযোগ নেই। আসল খেলা কাল রোহিত দাদার তালতলার সাথে খেলা পড়েছে। এই টুরনামেনটের ওরাই সবচেয়ে শক্তিশালী টীম। কাল আমাদের সামনে বড় পরীক্ষা। 

রবিবার মাঠে পৌঁছাতে না পৌঁছাতে বাজে খবর। কাল আমাদের ডিফেন্ডার অবিনাশের পায়ে একটু লেগেছিল। আমরা ভেবেছিলাম তেমন কিছুনা কিন্তু রাত থেকে পা ফুলে ঢোল। আমাদের এবার সোহম ভরসা।

  • শোন সোহম, যা হয়ে যাক। কর্নার হলে হবে খালি বল গোলের দিকে আসতে দিবিনা। তোর উপর কিন্তু ভরসা করলাম।

ইমরান এসব বলে সোহমের রক্ত গরম করে খেলায় নামলো। রোহিত দাদা খেলার আগে বারবার সোমালিয়ার দিকে তাকিয়ে নিচ্ছে, সোমালিয়া ও মুচকি হাসি দিচ্ছে। সোহমের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেটা সোহমের চোখ এড়ায়নি। সোহমের ভেতরে এখন ভিসুভিয়াস ফাটছে বুঝতে পারছি। সোমালিয়ার পাশে আমাদের রাকা বসে আছে। আমার চোখ পড়তেই রাকা ইশারায় বেস্ট অফ লাক দেখালো। খেলা শুরু হল। 

হাফ টাইম গোলশূন্য। দু দল খুব ভালো খেলেছে। আমাদের অবাক করে দিয়ে সোহম দুটো দারুন ক্লিয়ার করেছে। ইমরান গিয়ে পিঠ চাপড়ে সোহমের ছাতি বাষট্টি ইঞ্ছি করে দিয়েছে। আবার রেফারি বাঁশি দিলেন। খেলা শুরু হল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর যেটা হল আমরা কেউ তৈরি ছিলাম না। রোহিত দা বল নিয়ে এগোতে গেলে সোহম বল ক্লিয়ার করতে পায়ে লেগে ছিলো। রোহিত দা একটা হালকা ধাক্কা দিয়েছিলো সোহম কে। সোহমের মাথা বিগড়ে গেলো না বোম ফাটলো কে জানে? আমি দেখলাম, বল টা শূন্যে আছে। সোহম বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে আমার মনে হয় যদিও ইচ্ছা করে বলে না মেরে ধাঁই করে রোহিত দার পেটে দিলো এক লাথি। রোহিত দা আই বাপরে বলে সাথে সাথে শুয়ে পড়লো মাঠে। কিছুক্ষণ যেন সব থেমে গেলো, সব চুপ। বিগ ব্যাং এর আগের নীরবতা। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তালতলা টীম ঘিরে ধরলো সোহমকে। কয়েকটা চড় ঘুসি দিতেই আমি সোহমকে বাঁচাতে ঝাঁপালাম গিয়ে তালতলা টীমের উপর। কেউ মাথায় হাতুড়ির বাড়ি মারলো না মাথায় বাজ পড়লো কে জানে? বোঁ করে মাথাটা ঘুরে গেলো আমার। মাটিতে পড়তে পড়তে টের পেলাম আমদের পুরো টীম এসে গেছে। তারপর অন্ধকার।

  • এই রিজু ঠিক আছিস? কি রে?

ইমরানের চেঁচামিচিতে আর জলের ঝাপটায় আমার হুঁশ ফিরলো। কয়েক সেকেন্ড লাগলো ব্যাপারটা বুঝতে।

  • ঝামেলা থেমেছে?

আমি উঠে বসে বললাম।

  • হ্যাঁ দুই ক্লাবের লোকেরা মিলে থামিয়ে দিয়েছে। তুই তো ভালোই মটকা মেরে পড়ে থাকলি।

ইমরান বলল।

  • সোহম কই? ও ঠিক আছে তো?

আমি ইমরানকে জিগ্যাসা করলাম। 

  • ক্লাবঘরে আছে যা। আমি একটু পর যাচ্ছি। 

ইমরানের কথা শুনে আমি ক্লাবঘরে  ঢোকার মুখে দেখি রাকার ঝুড়ি লাগানো সাইকেল দাঁড় করানো। ক্লাবঘরের দরজায় মুখে গিয়েই দেখি সোহমের মাথা রাকার কোলে। রাকা হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মাথায় এক হাত দিয়ে। আর সোহম রাকার আর একটা হাত ধরে রেখেছে। সোহমের গালে কালশিটে দাগ। গল্পের শুরুতে এরকম অনেক কালশিটে দাগ পড়ে তাঁরা আবার মিলিয়েও যায়। ভাগ্যিস সোহমকে টীমে নেওয়া হয়েছিলো। আমি না ঢুকে বেরিয়ে এলাম বাইরে। আকাশের দিকে তাকালাম। ঝকঝকে নীল আকাশ। এরকম আকাশ দেখলে সব ঝামেলা ভুলে মন ভালো হয়ে যায়।  

                                                            শেষ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *