ক্ষয়িষ্ণু শিকড় // ছন্দা পাল
অসংখ পাতার ভাঁজে ইতিহাস মেখে আছে ,
ক্ষয়িষ্ণু শিকড় সজীব থাকে বিবর্ণ
অশ্রু জলে , সবুজ ঘিরে ছিল যার আকণ্ঠ নিঃস্বাস
বৃদ্ধ গাছটি ডানা ঝাপ্টানো সহ্য করে
মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে কথা বলে
অতীত আঁধারের নক্ষত্র গুলি !
গাছের মিষ্টি নোনতা শুকিয়ে যাওয়া
পাতাগুলি রাতের অন্ধকারে আজ ও
মাথায় হাত বোলায় ,
জীবনের শেষ বেলায় ক্লান্তি আনে
অদ্ভুত এক নিঃসীম নিস্তব্ধতা ,
ছিল প্রশস্ত কাঁধ , বিস্তৃত বুক ছিল ,
আজ অনেক অভিমান জমা মেঘলা
আকাশের বুকে !
দিন কাটে রাত ভোর , দিগন্ত পানে
যে পথ গেছে এক পা দু পা করে
শতছিন্ন স্মৃতি নিয়ে সে পথের
অপেখ্যায় ,
শূন্য হাতে ভিক্ষুকের মতো সবটুকু
মায়া ত্যাগ করে চলে যাওয়ার
অপেক্ষায় !
এই গোছানো পৃথিবীতে মনে
রাখার দায় কজনার , কেউ কি
করবে হৃদয় স্পর্শ তার !!!!
.
আসতে দাও রোদকে // রণেশ রায়
সকাল আটটায় বারেন্দায়
হামা দিয়ে রোদ আসে গুটি গুটি
উঁকি মারে এদিক ওদিক,
রাত জানিয়ে যায়, আজ তার ছুটি ;
বাতাসের দুলুনিতে
রোদ ঘুরে বেড়ায়
এই আসে এই যায়,
ঘোমটার আড়ালে তার
যেন বুটি তোলা ছিট কাপড় গায়;
টাঙ্গিয়ে দিয়েছি বোর্ড
প্রবেশ নিষেধ ঢোকায়।
মশার গুনগুনানি
মাছির ভনভনানি শোনা যায়,
তাদের আসা বন্ধ করতে
ব্যবস্থা করেছি মশারি জানালায়,
ঘরটায় সারাদিন গুঞ্জন
না পাওয়ার বেদনার মন্থন,
সকাল আটটায় সন্ধ্যের আলো আঁধার
সূর্যটা মুখ লুকায়,
দেখা নেই তার আর।
এপার্টমেন্টে দোতলায় বাস
লিফটে ওঠা নামা
নিচে ওপরে চলন,
হাঁটুটা মাথা তুলে তাকাতে পারে না
কব্জাটা নট নড়ন চড়ন,
স্ট্যাচু অব লিবার্টি, সোজা দাঁড়িয়ে
মুখটা একটু বাড়িয়ে;
হরপ্পার আমলের ঢ্যাঙা কড়িকাঠ
উলম্ব ঢঙে দাঁড়ায়
যেন ময়দানের শহীদমিনার।
সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা বন্ধ
চলন হারায় ছন্দ,
বুক ঢিপ ঢিপ করে চলা
পা টেনে টেনে হাঁটা
ভয়ে মুখে কুলুপ আঁটা
এই বুঝি কেঁদে ওঠে যন্ত্রণাটা;
চলন যন্ত্রে ধরেছে বাত
তাই আমি কুপোকাত;
গিন্নির কোমরটা মুখ বেঁকায়