কিচ্ছু ভাল লাগছে না – শংকর দেবনাথ
কিচ্ছু ভাল লাগছে না আর
কিচ্ছু ভাল লাগছে না,
মন খারাপের ক্ষণটা যেন
কোনোমতেই ভাগছে না।
চোখের রঙে সংগোপনে
স্বপ্ন-ছবি আঁকছে না।
রূপকথারা চুপ হলো কি?
অরূপলোকে ডাকছে না!
হৃদয়পুর আজ নিদয় বুঝি?
যাচ্ছে তাকে কই চেনা?
বুকের ভেতর সুখের ধারায়
উছল নদী বইছে না।
গন্ধ মেখে ছন্দরা আর
আগের মত আসছে না,
নৃত্য-তালে প্রাণের ডালে
ছড়ার ফুলও হাসছে না।
খুশহারা এই দুঃসময়ে
ধুস, কেন সুর জাগছে না!
কিচ্ছু ভাল লাগছে না আর
কিচ্ছু ভাল লাগছে না।


নীরবে বিদ্রোহী – সৈকত কুমার মির্দ্দা
( যে মানুষটা জীবনের প্রতিটা পর্যায় একাই লড়ে গেছেন ,যার লেখায় বিদ্রোহী সত্ত্বা ফুটে ওঠে, সেই মানুষটা 1941 থেকে 1976 প্রায় পঁয়ত্রিশটা বছর বোবা হয়ে কাটিয়েছে । তার সেই যন্ত্রনা নিয়ে কিছু কথা আজ তুলে ধরলাম ।)
কতদিন হয়নি কলম ধরা
কতদিন হয়নি মস্তিষ্কের উন্মোচন,
নীরবে রেখেছি হৃদয়ের কান্না
হয়নি তা জাগরন ।
পঙ্গু আমি হলাম যদিও
হাত দুটিও আজ নিথর,
বলতে চেয়েও পারিনি বলতে
মুখের ভাষাও যে বর্বর ।
চোখের ভাষাটা বুঝলো যে জন
লিখলো সে এই কবিতাটা,
বিভেদ দেখতে যেওনা তোমরা
হারিয়ে যাবে এই আন্তরিকতা ।
অর্থহীন কবিতাগুলো মোর
তোমাদের কাছে মূল্যহীন সাজে,
বাকরুদ্ধ হলেও আমি
চেতনাহীন নই মোর কাজে ।
না হয় কাটালাম নীরবে চেয়ে
শেষের দীর্ঘ পঁয়ত্রিশটা বছর,
বিদ্রোহের গানটা আর নাই-বা গাইলাম
এবার প্রতিবাদের মুখর হোক সবার অন্তর ।
একটি নজরুল না হয় বিদায় নিলো
পৃথিবী থেকে চিরতরে,
অগ্নিবীনার সুরে ধুমকেতূ হয়ে জাগো তোমরা
দেখবে নজরুল জন্ম নেবে প্রতিটি ঘরে ।


অনন্য নজরুল – ডি কে পাল
আমি যদি বীরের মত এমন মানুষ চাই
দুখের সাগর সাঁতার কেটে
ক্ষুধার সাথে দীর্ঘ হেঁটে
আকাশ ছোঁয়া বজ্রকঠিন,তোমায় শুধু পাই।
আমি যদি প্রাণের দামে, এমন মানুষ চাই
অসাম্যতে বেঁচে বেড়ে
সাম্যতা’কে আনলো তেড়ে
বীর বাঙালি এমন মত একটি,দু’টি পাই।
আমি যদি প্রাণের প্রিয় একটি মানুষ চাই
শক্তি সাহস দুর্বিনীত,
শোষক মহা ভয়ে ভীত
মৃত্যুজয়ী কালোত্তীর্ণ দীপ্ত জীবন পাই।
আমি যদি প্রেমিক পুরুষ এমন মানুষ চাই
সবটুকু যে বীর বাঙালি
জাগরণের মশাল জ্বালি
উত্তরণের দীক্ষাকবজ তাঁর কাছে যে পাই।
চিরসুখী বাধনহারা
দেশপ্রেমে পাগলপারা
বাংলা মায়ের সেই ছেলেটি
দীপ্তপুরুষ, অনন্য নজরুল।


আমার নজরুল – সুদীপা মন্ডল
বাংলাদেশের জাতীয় কবি
যাঁর নাম নজরুল,
কলম তাঁর অগ্নিবীনা,
দেশবাসীর ‘বুলবুল’।
সাম্যবাদের গান শিখিয়েছ তুমি,
পরায়ে ‘শিউলি’ মালা,
জীবন পথের বিদ্রোহী হয়ে
সহেছো ‘মৃত্যুজ্বালা’।
মনের আকাশে ‘ধুমকেতু’ তুমি
নয়তো ‘লক্ষীছাড়া’
দিয়ে অগনিত রয়ে গেছে তবু
জগতে ‘সর্বহারা’।
প্রেমহীন মনে জাগিয়েছো প্রেম,
দিয়ে খোঁপার ফুল,
গভীর রাতে নার্গিস বনে,
প্রিয়াকে খুঁজে করেছিলে কি ভুল?
না জানি তোমার পুজার মন্ত্র,
শেখা নেই কোনো উপাচার
গহন মনের প্রেমটুকু দিয়ে,
তব চরণে মম নমষ্কার।।


পাগলী তুই – নীলাঞ্জন রায়
এই তুই কোনদিন ডাক পেয়েছিস
ওই কালিগন্ডাকি নদীর ধারে।
এই তুই কি আদর খেতিস
ওই শ্যামলা ঘাসের পাশে।
এই তুই কি স্বপ্ন দেখতিস
রাতমোহনার অন্ধকারে।
এই তুই কি বৃষ্টি দেখেছিস
ওই গাঙচিল উড়ে যাওয়ার পথে।
এই তুই কি এখনো ভেসে বেড়াস
ওই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে।
এই তুই কি এখনো ভালোবাসিস
ওই চাঁদের আলোর ধারে।
সত্যি কথা কি বলবো তোকে
খুজে বেড়াই ওই বনবিবির মাঠে।


মেঘবন্ধু আমার – কথা সঞ্চিতা রায় (ঝুমকোলতা)
তুমি বলো , মেঘলা দিন মানে
মন খারাপের দিন, আমি বলি,
মোটেই না, মেঘলা দিন মানেই
স্বপ্নরঙিন, কল্পনা দিয়ে ঘেরা
এক মিষ্টি মিষ্টি দিন|
মেঘলা মানে মনময়ূরের
নৃত্য করার দিন|
মনে হয় যেন ,মন কে
মেঘের সঙ্গী করে উড়ে
যাই দূরে অনেক দূরে|
মেঘলা দিনে মন তোমায়
কাছে পেতে চায়| চায়
যে তোমার অধরে ওষ্ঠ ছোঁয়াতে|
মেঘ যখন রিমঝিম সুরে
বৃষ্টিকে দিয়েে পৃথিবীর
বুকে আঁকে ভালবাসার চুম্বন,
মাটি যেন আহ্লাদিনী হয়ে
বাতাসে ছড়িয়ে দেয় , মিষ্টি
মিষ্টি সোঁদা গন্ধ, মন যেন
এক অনাবিল আনন্দে ভরে|
মনে হয়, এক ছাতার তলে
আধো আধো ভিজি তুমি আর আমি|
ছোট্ট বেলায়, মেঘ আমার কল্পনায়
কত নতুন রূপে ধরা দিত,
কখন ও বা হয়ে উঠতো,
আমার কল্পনার ময়ূরপঙ্খী,
কখন ও বা আমার সাতরঙা পালকি|
আমার খুব কাছের একটি শিশু
পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছিল,
মৃত্যুকে চিনিনি তখন ও,আমাকে
বোঝানো হয়েছিল, সে নাকি
সুদূর আকাশে চলে গেছে|
মেঘের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে
কল্পনা করতাম , সে খেলা করছে,
মেঘেদের মাঝে, মেঘেদের সাথে|
তুমি বলবে, এতো মন খারাপের কথাই হল|
হয় তো বা কিছুটা মন খারাপের আবহ আছে|
কিন্তু ওভাবেই যে মেঘগুলো কখন
কবে থেকে যেন আমার বন্ধু হয়ে গিয়েছিল|
সব ঋতুর মেঘের সাথেই আমি কথা বলি,
শরতের মেঘ যেমন আমায় জানায়,
এসেছে সময় ,আনন্দময়ী মায়ের আগমনের|
তবুও বলবো বর্ষার কাজল কালো মেঘ
যেন আমার সবচেয়ে কাছের , সবচেয়ে প্রিয়|
কারণ রিমঝিম বৃষ্টি কে পাঠিয়ে সেই তো
ফসল ফলায়, সবুজ করে ধরণীরে|
আর আমি যে জৈষ্ঠজাতা, তাই
‘বজ্র মানিক দিয়ে গাঁথা ‘ আষাঢ় কে
পেয়েছিলাম প্রথম সাথী রূপে|
ওগো মেঘ, জানি তুমি কভু কভু
বণ্যা এনে ধ্বংসে লিপ্ত হও,
কিন্তু তোমার শ্যমলীমা সৃষ্টি
করা রূপটা বড় বড় মিষ্টি|
প্রিয় মেঘ সৃষ্টিতে থাকো ,ধ্বংসে নয়|
তুমিও হয়তো মেঘ দেখছো,
মনখারাপের আবহে নয়,
সৃষ্টি সুখের ,দৃষ্টি সুখের আনন্দে
মেঘকে দেখ, দেখ পাবে অনন্ত আনন্দকে।


শেষের চিঠি—রণধীর দাস
জানো কামিনী সেদিন তোমার শেষ
ফিরিয়ে দেওয়া ডায়েরিটা আজও যত্নে রেখেছি
ওপরে বেশ ধুলো বালি জমেছে ঠিকই
কিন্তু শেষের গল্প-কবিতাগুলো অক্ষত আছে।
তোমায় নিয়ে লেখা কবিতাগুলোতে এখনও
খুঁজে বেড়াই সেই আগের তোমাকে একি ভাবে
নিজেকে হারিয়ে ফেলি গভীর নিস্তব্ধ রাতে
কিংবা ভরদুপুরে ঘরের কোণে একলা পরে থাকি।
জানো এখন লিখতে গেলে কলম সায় দেয় না
কিছু বলতে গেলে কেমন যেন বাধোবাধো লাগে..
এখন আর শুধু তোমাতে প্রেম পায় না সবসময়
ওই ডায়েরিটার সঙ্গতেও প্রেম জাগে মনের কোণে।
রাতের আধারে হাতছানি দেয় তোমার নিঃসঙ্গতা
ডায়েরির লেখাগুলো আজ প্রেম ঝরায় অবিরত
কোথায় যেন তোমার বিলীন হওয়া ভুলিয়ে দিয়েছে
কোনো এক অফুরন্ত কাব্যিক প্রেমের টানে,
কিংবা জ্বলন্ত এক সিগারেটের শেষ কোণে।
খুঁজে ফিরি একা তোমায় শেষের কবিতা আর
উপন্যাসের পাতায় কিংবা গল্পের চরিত্রের মাঝে।
তুমিতো তাদের মতো প্রেমিকা হতেই পারো নি,
তুমি ছেড়ে গেলেও তারা আজও সাথে রয়ে গেছে।
তোমার চলে যাওয়ায় বিয়োগ ব্যথিত এই হৃদয়
প্রানহীনের ন্যায় মূছিত হয়ে পড়েছে বারে বারে
যদি ফিরে এসো তাই আকুলতায় আমার এই শেষ চিঠি।


পলকা বাতাস একটু ঝড়
তোর খোলা চুলের গন্ধ নীড়।
বাঁকা চাঁদ নীল আকাশ
কালো চোখের ছোট্ট অবকাশ।
ঠোঁটের ওপর হাল্কা জল
চুমু খাওয়ার পাগলা মন।
হাঁটবি যখন দুলে দুলে
ধরব হাত মন খুলে।
অসংগত থাকনা কিছু
শীতকালে ওই মিথ্যে কিছু।
উড়ছে কাগজ পাগলা হাওয়ায়
ভালোবেসে মন উতলা হাওয়া।
বৃষ্টি বলুক ধিতাংধিন
এটিই তফাৎ মনের বিন।


মন – নীলাঞ্জন রায়
মন চাইছে আকাশে উড়ুক
ওই কালো চুলের ওড়ার পাশে।
মন চাইছে দৌড়ে বেড়াক
ওই তো বুকের চারিদিক।
মন চাইছে ঠোট ছুয়ে যাক
অনেকটা যেমন বৃষ্টির ছাট।
মন চাইছে জড়িয়ে ধরি
মেঘ যেমন আকাশ জড়ায়।
মন চাইছে আদর করি
টগরের যেমন শিশির আদর।
মন চাইছে মাতাল হই
মদের নয়, ভালোবাসায়।
মন চাইছে চেচিয়ে বলি
তুই আছিস থাকবি ঠিক।
তুমি আর আপনার মাঝে।