কবিতার পাতা – ৪

ওদের খোঁজ কেউ নেয়না
সৈকত কুমার মির্দ্দা

ওরা রাস্তার ধারে ঘর বাঁধে
মাথায় নিয়েছে বোঝা,
তোমার সাধের রাজপথ আর রাজপ্রাসাদ
ওদের হাতেই গড়া ।
ওরা চিরকাল ধরে হাল আত্মহারা হয়ে,
তবুও পথে হয়না দৃষ্টিহারা ,
ওদের কথা কেউ ভাবে না
সে পথে নেমে আমরাই দিশেহারা ।
এই রাজপথ আর দেওয়াল জানে
ক্ষুদার্ত পেটের বে‍ঁচে থাকার গল্প ,
তোমার মাথার ওপর বানালো যারা ছাদ
তারাই দেখো ছাদহীন, জীবনটা বন‍্য ।

শংকর দেবনাথ

ছড়াক্কাঃ
মড়ার উপর খাঁড়া
শংকর দেবনাথ

এক করোনায় প্রাণ যায় যায়- জনগণ দিশেহারা।
        সাথে আমফান সাম্পান বেয়ে,
        তাণ্ডব নিয়ে বেগে আসে ধেয়ে।
        কালরূপ ধরে প্রকৃতি কী হায়,
        মত্ত হয়েছে প্রলয়-খেলায়?
গোঁদের উপর খোদ বিষফোঁড়া- মড়ার উপর যেন খাঁড়া।।

ঝড় – অতনু মিশ্র

উড়ছে কত ঘরবাড়ি আর
ভাঙ্গছে কত গাছপালা,
দমকা হাওয়ার ঘূর্ণিঝড়ে
শুণ্যে উড়ে খাবার থালা।

আকাশে যখন মেঘ উঠেছে
মুষলধারে জল,
দুর্দিনের এই দুর্যোগ রাত
কাটাই কোথায় বল।

মাথার উপর নেই কোনো ছাদ,
ভিজছে পায়ের মাটি –
ঘরের ভেতর রাত জেগে তাই
বাঁচার পরিপাটি।

বুলবুল আইলা ফণী আম্ফান,
যে যখনি আসে –
কুঁড়েঘরের খড়ের চালা
জলের তোড়ে ভাসে।

তবুত্ত আবার নতুন করে
আসায় বাঁধি ঘর-
বাঁচার জন্যে লড়াই করি
আমরা জীবন ভর।

বর্ষাযাপন  – শিবপ্রসাদ গরাই 

সারাদিন ধরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে 

যেন স্নেহময়ী জননীর আলতো স্নেহবিন্দুগুলিকে 

মাটি পরম মমতায় আঁচল পেতে গ্রহণ করছে ।

রাত্রির খাওয়া সাঙ্গ করে সুজিত 

তার সদ্য বিবাহিত রূপসী স্ত্রীর কাছে এসে আবদার করল

আজ বিনিদ্র রজনী যাপন করবো –

তুমি ও আমি আর এই বৃষ্টি …

জানো, বৃষ্টির সঙ্গে আমার কত গভীর বন্ধুত্ব 

এই বৃষ্টিতে ভিজেই তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম 

এই দোতলায়, এই ঘরটাতেই,

 ঐ জানালার সামনে হাত বাড়িয়ে প্রথম, 

প্রথম সেই বৃষ্টিকে গায়ে মেখেছিলাম,

ওহ্, কী দারুণ সেই অনুভূতি…

ভাবলেই, দেখো, এখনও গাঁয়ে কাঁটা দেয়

দেখো, আর যাই বলো

আজ তুমি আর আমি গাঁয়ে বৃষ্টি মাখবো 

সারারাত্রি তুমি আমার কোলে মাথা রেখে 

বৃষ্টির এক একটা তাজ মাথায় পরবে ।

আজ গফুর মিয়াও বিনিদ্র রজনী যাপন করবে কতগুলি হাড়ি, থালা, বাটি ঘরের কোণে কোণে ছড়িয়ে 

আর মাঝে মাঝে লক্ষ রাখবে যাতে আমিনার গায়ে এক বিন্দু জল না লাগে…


আম্মা – নীলাঞ্জন রায়

জানিস দিদির বিয়ে হোলো
মা খুব খুশি।
কিছুদিন পর দাদার ও ভারি সুন্দর বৌ এলো।
বাড়ি আলোকিত।।
আমার এবার পালা।
এর মাঝে দিদি মা হোলো।।
সময় অনেকটা চলে গিয়েছে।
কিন্তু আমার তো সবার মা হবার ইচ্ছে
আমি যে আম্মাকে দেখেছি।।
ছোট ছিলাম, তাই আম্মা আমার সব।
খেয়াল এর বশে চাকরি তে ঢুকলাম
দেখলাম জৈবিক মা এর জন্য কত উপদেশ
কত ভালো লাগা
আমার তো এসব নেই।।
পারবো তো
মন টা নিয়ে চলে গেলাম
সাঝবাতির রূপকথার কাছে
দেখলাম ডেব ডেব করে চেয়ে থাকা দুটি চোখ
আর শুনলাম রিনরিন গলায়
আম.. মা.. মা….

জাতীয় প্রতীক – সৈকত কুমার মির্দ্দা

খেলা খেলা দিয়ে শুরু
খেলতে খেলতে শেষ,
লাল নীল এই রঙের জীবন
ফ‍্যাকাসে হয়ে নিঃশেষ ।
রঙটা তো ছিল শান্তির প্রতীক,
যে যার মতো করে তার উপর রঙ দিলে;
রঙের ছড়াছড়িতে শান্তির প্রতীক হারিয়ে গেল ।
সাদা মেঘগুলোকে চেয়ে দেখো,
কারা যেন কালো বিষ ঢেলে দিয়েছে ওদের ওপর।
যে শ্বেতপুষ্প আর কুষুমগুলো ভোরের আলোয় দেখে
মন ভরে যেত,
তাদের কেও কীটের দংশন থেকে যায়নি বাঁচানো ।
যে সবূজগুলো মাটিকে আঁকড়ে বেড়ে উঠেছিল―
পায়ের তলায় মাড়িয়ে তাদেরও ফ‍্যাকাসে করে দিলে ।
আজ রঙবিলান্তী নয় রঙবিভ্রান্তী হয়েছে মানুষ
খুঁজে পায়না জাতীয় পতাকার কোন রঙটা ধরবে ঠিক ;
যদি একই মায়ের সন্তানরা নিজের মধ‍্যে করে যুদ্ধ
তাহলে সাম্প্রদায়িকতা ও ভ্রাতৃত্ববন্ধন সবটাই বেঠিক ।
ফিরে এসো তোমরা সকলে জীবনের মূলস্রোতে
ধুয়ে ফেলো কপালে সব রঙের টিপ ,
সকলে আমরা সকলের তরে, গড়বো ঐক‍্য
ভুলো না অশোক চক্র মোদের জাতীয় প্রতীক ।

বাঁচার স্বপ্ন দেখা ভালোবাসা – মাহামুদাল হাসান

শান্ত দীঘির জলে ভালোবাসা শুয়ে শুয়ে

নিমের সাথে আগুন পোহায় 

কুঁড়েঘরের কোলে আদর মেখে 

সদ্য প্রসব করা রুগ্ন বাতাস সঙ্গী হয়

আপাত কোমল বুকের সমুদ্রে

উচ্ছৃঙ্খল স্মৃতি মধুর হেসে নেচে ওঠে

রংতুলির আশ্রয় চেয়ে বলে-

‘ভালোবাসা তোমার চোখে জল’?

অবসন্ন আকাশে হাত মেলানো সূর্য

হেঁটে গিয়ে হাত বুলিয়ে দেয় অন্তরালে

চিবুকে ভাস্কর্য এঁকে লাজুক সময় 

নিজের পেটে ঠিকানা রেখে

অতৃপ্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

পক্ষাঘাতগ্রস্ত একাকী ভালোবাসা

ধীরে ধীরে কাঙাল দীঘিতে নুয়ে বলে-

‘আধপোড়া রুটির স্বাদ নিতে আবার আসবো’।

শংকর দেবনাথ

বিষ বিষ সাল –   শংকর দেবনাথ

দু’হাজার কুড়ি- থুড়ি বিশ বিশ সাল,
যেই এলো- সেই শুরু হলো কী আকাল!
করোনায় হায় হায় ত্রাহিত্রাহি রব,
খিদে পেটে সিধে ঘরে কাজহীন সব।

একা রামে ভয়ে ঘামে এই চরাচর,
আমফান সাথে যেন সুগ্রীব দোসর।
ঘর ছিল- ঝড় দিল ভেঙেচুরে তাও,
জীবন এখন যেন হালভাঙা নাও।

বাকি আছে নাকি আরো লোটা নিয়ে ছোটা?
বন্যার জল আর ভূমিকম্পটা।
দু’হাজার কুড়ি- থুড়ি বিষ বিষ সাল,
ধ্বংসের হিসহিসে জীবন নাকাল।

তোমাকে চাওয়া –   মোঃ রায়হান কাজী 

দিবারাত্রি তোমায় ভেবে, 

কাটছে যে দিনগুলো উদাসীনতার মাঝে। 

খোলামাঠে ঘাসেদের ফাঁকে হারায় নিমিষে, 

তোমার অদৃশ্য ছোঁয়াতে প্রকৃতির সাথে।

দুরন্ত হাওয়া মৌন আজ বাঁধন হারা, 

তোমার জন্য জীবন হিতার্থ।

সামনের সময়কে এগিয়ে দিতে,

ফিরে পাওয়া তেই কৃতার্থ।

যে আকাঙ্খা মৌনের কাছে চায় আহার্য,

ফলবে তা তোমার একটু ফেলে সাহায্য। 

তুমি হারিয়ে যেওনা আমার কাছ থেকে, 

অনেক মানুষের মাঝে লুকানো অরণ্যে। 

অবলোকনের সৌভাগ্য কামনায় সজীবতা, 

তোমার কাছে রেখে দিতে চাই আনন্দ। 

উষার আলোতে সূর্যের হাসির সাথে, 

সে আনন্দ উল্লাসে প্রেম নিবেদন করি তোমাকে। 

অন্তরে স্বপনদুয়ারে রোপণ করি,

প্রেম ফুলের পাপড়ির নির্যাসে। 

কবিত্বকলার দৃষ্টান্ত দিয়ে,

চাইছি শুধু আমার শিল্পে তোমাকে। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *