কবিতার পাতা – দুই

গেল—কোথায় সেদিন
       শংকর দেবনাথ

সে ছিল একদিন আমাদের
লকডাউনের আগে,
আড্ডা ছিল চায়ের কাপে
কাব্য অনুরাগে।
গেল          কোথায় সে দিন?
গেল
কোথায় সে দিন তাক ধিনা ধিন
বন্ধু-স্বজন কোথায়-
লুকিয়ে আছে কোন অজানার
বন্দি নদী-সোঁতায়?
ঘরে           একলা আমি-
ঘরে
একলা আমি দিবস-যামি
রুদ্ধ হয়ে আছি,
এমনভাবে কেমন করে
স্বজনহারা বাঁচি?
কবে         আসবে সুদিন
কবে
আসবে সুদিন বাঁধনবিহীন
ভাসবো প্রাণের নীলে,
সুজন স্বজন বন্ধু শ’জন
হাসবো সবাই মিলে?
হাসবো        সবাই মিলে।

শংকর দেবনাথ

পড়শী এলো – সৈকত কুমার মির্দ্দা

আমি জানি না কেন আমি ছুটে চলেছি
জানি না কবে থামবো আবার
শুধু জানি কোনো এক প্রান্তর আমায় ডাকছে ।
তারে শুধালাম একবার,
কেন মোরে ডাকো, কি কাজ ?
সে হেসে বলে, তা তো জানি নে
কিন্তু আমার যে বড়ো সাজের সাধ ।
তারে আবার বলি, তবে আমায় কেন ?
আরো তো কতজন রয়েছে সম্মুখে ,
সে বলে, ডেকেছি সবারে এসেছে কয়জন
আরশীনগর দেখেছে কয়টি নয়ন ?
বুঝলাম না, তবুও ছুটে গেলাম অজানার সন্ধানে
বন‍্য উন্মাদ তখন আমি মনের মানুষ চিনে ।
আরশীনগর বেষ্ঠিত জলে, প্রতিবিম্বে দেখলাম তারে
এতদিন রেখেছিলাম তারে দেহের অন্তরে
চিনিলাম তারে ,মৃত‍্যুমুখী যাত্রা হতে উদ্ধারিল মোরে ।
তোমরাও যেও তার কাছে, দেখবে সেই সাঁকো
সাঁকোর ওপারে দাঁড়িয়ে এক পড়শী
প্রেম বিলায় অহর্নিশি ।
মায়ার ঘোরে ছুটলি কেবল তোরা
করলি জীবন নষ্ট,
একটি বার আপন করে নে তারে
কেষ্ট হয়ে হরন করবে সে তোদের দুঃখ-কষ্ট ।।

যদি…
শংকর_দেবনাথ

ভোরবেলা দোর খুলে
যদি শুনি ভাই,
করোনার ভয় আর নাই!

যদি দেখি দেশবাসি
হাসিহাসি মুখে,
পাশাপাশি হেঁটে চলে সুখে!

খুলে গেছে ইশকুল-
অফিস-আদালতও,
সবকিছু ঠিক আগেরই মত!

বাস-ট্রেন সশব্দে
ছুটে চলে ধীরে,
ছন্দে এসেছে সব ফিরে!

যদি দেখি মাস্কহীন
সেই চেনামুখ,
তবে হবে কী দারুণ সুখ!

প্রকোপ – দেবব্রত কয়াল

অনন্ত প্রকৃতি অনন্ত পুরুষকে,
ঘিরে নিয়েছে নিজ মায়ার জালে।
প্রকৃতির প্রকোপে চারিদিকে হাহাকার,
মনুষ্য জাতিকে স্থির থাকতে দিচ্ছে না।
যখন একটা অদেখা শত্রু বিরুদ্ধে,
লড়াই করছে মনুষ্য জাতি।
আবারও ঘূর্ণিঝড় প্রবল বেগে,
ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে।
মনুষ্য জীবনকে বিধ্বস্ত করছে
প্রকৃতির প্রলয় নৃত্যে।
চারিদিকে কান পাতলে শোনা যেত ,
পৃথিবী ধীরে ধীরে জল শূন্য হচ্ছে।
মনুষ্য জাতি চরম সঙ্কটে পরবে,
জল অপচয় বন্ধ না হলে।
হঠাত্ এমন এক পরিস্থিতির শিকার,
হয়েছে আজ মানব জাতি।
বার বার হাত ধুতে ধুতে ভুলে গেছে,
জল অপচয় বন্ধের কথা।
ধীরে ধীরে ক্রমশ কঠিন হচ্ছে,
প্রকৃতির বিরুদ্ধে লরাই টা।
মনুষ্য জাতির প্রতি ক্ষুব্ধ প্রকৃতির,
কাছে মানুষ আজ বড়ো অসহায়।
বহুদিনের জমানো ক্ষোভ,
উগরে দিচ্ছে প্রকৃতি।

লকডাউনে কবিতা… – সঞ্জয় সরকার

এভাবে কি বাঁচার কথা ছিলো
সর্বদা এক অজানা আশংকায়
এক একটা দিন দুঃস্বপ্নের মতো
এ কোন জীবন আজ দেখছি তোমায়…

যখন সময় ছিলো শুনিনি কোনো কথা
আজ কাউকে আর কিছুই নেই বলার
কতদিন ধরে সদর দরজা বন্ধ আছে
বাইরে থেকে কেউ তো আসেনা আর…

সময় থাকতে সেভাবে গুরুত্ব দিইনি
এখন গুরুত্ব দিলেও সময় নেই হাতে
সন্দেহের চোখে সবাই সবাইকে দেখি
দাতা-গ্রহীতা মিলে গেছে একসাথে…

মৃত্যুর সাথে জড়াজড়ি করে বাঁচা
এমনভাবেও হারিয়ে যাওয়া যায়
চোখের সামনে জেগে থাকা ঐ আলো
একে একে সবই যে নিভে যায়…


আজও হাঁটছে – সুমিত মোদক

কতটা সময় ধরে কতটা পথ হাঁটছে কে জানে !
কে জানে সে এখন কোথায় !
কি ভাবে হাঁটছে !

হাজার হাজার বছর ধরে আমরা পথ হেঁটেছি ;
আজও হাঁটছে আমারই গর্ভজাত …

চারিদিকে এখন মৃত্যুর মিছিল ;
কে কাকে বয়ে নিয়ে যাবে !
সব যে পড়ে আছে …

রাত গভীর হলে গভীর হয় অসুখ ;
সুখ পাখিটা উড়ে গেছে অচিনপুরে ;
প্রকৃতি এখন মালকোষ রাগে ভেসে যায় …

একটু একটু করে খসে পড়ছে তারারা ;
খসে পড়ে সভ্যতার পলেস্তরাও …
পূর্বপুরুষের বসানো গাছটার শিকড়
অনেকটা গভীরে ;
এ ঝড়েও উপড়ে পড়বে না জানি ;
তবু জাগে ভয় …

একটা সভ্যতা হাঁটছে ;
হাঁটছে আরেক সভ্যতার আলোর রেণু ,
আমারই গর্ভজাত ।।

গল্প লিখন — সৈকত কুমার মির্দ্দা

গল্প পড়তে চাই
কেন আপনার জীবন নাই ?
আপনার জীবনের কয়টা গল্প মনে রেখেছেন ?
ঈশ্বর প্রত‍্যেকের জীবনে অসংখ‍্য গল্প লিখেছেন ।
তবুও বলি,
কিছু গল্প শুরু হয়েছে
শেষ আর হয়নি,
কিছু গল্পের উপসংহার
আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি ।
কিছু গল্প জীবন বদলে দেয়
কিন্তু অতীত ভুলাতে পারে না,
অনেক গল্প আপনারও মনে জমানো
কিন্তু প্রকাশ পায় না ।
গল্প চরিত্রগুলি নাকি কাল্পনিক
সত‍্যিই কি তাই ?
বলুন তো,
আপনার পরিশ্রমের যে গল্প পরিবার থেকে আড়াল করেছেন
সেটা কি কেবল দগদগে পোড়া কয়লার ছাই !
গল্প যে লেখে, সেই কেবল জানে
চরিত্রগুলো জীবিত নাকি অস্তিত্বহীন ।
কিছু গল্প দেখে অনুভব করতে হয়
সেখানে কলমের জোরটা মূল‍্যহীন ।
অনুগল্প, রূপকথার গল্প সবটাই লেখা হয়
লেখা হয়না গল্পের ঋন,
এই ঋন শোধ করতে গিয়ে, কেউ করেছে আত্মহত‍্যা
কেউ-বা জীবন্ত লাশের মতো কাটায় দিন ।
সব শেষে এটুকুই বলি,
কিছু গল্প চিরন্তন সত‍্য, তাই শেষ হবে না।
কিছু গল্প বহ্নিশিখা, তাই শুরু হবে না ।
তবে জীবনের কিছু গল্প ঈশ্বর প্রতিনিয়ত লেখেন,
তা সবাই হাতে পাবে, তখন পড়ার সময় থাকবে না ।।

যুগলপ্রেম – মোঃ রায়হান কাজী

আয় রে আয় আমার কাছে ছুটে আয়, 

তোর ঐ প্রজাপতি ডানা ঝাপটিয়ে। 

সূর্যের কিরণ মাখাবো আজ,

গাছের পাতা, বাহারি ফুলের সাঁজে। 

তোর প্রেমে পড়ে হাসি-কাঁদি,

আমি শুধু কুড়ায়েছি হাসি।

দুঃখ কে দূরে ঠেলে দিয়ে,

সুখ নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকি।

ক্ষুদ্র হৃদয়ে হায় ধরে না আর, 

অসীম প্রেমরাশি মোর ভূবণে।

যুগলপ্রেমের স্রোতে অনাদিকাল,

প্রেম মিটেনা আশা এই নদীতে। 

সন্ধ্যামণিতে চাঁদের আলো ছড়াচ্ছে 

আঙিনা জুড়ে আনাচকানাচে। 

একাকি হাঁটি এ পথে কতখানি, 

তোমাকে খুঁজি চারিধারে। 

আমার আকাশে তোমাকে নিয়ে,

ছবি আঁকি তারাদের ভিড়ে। 

কবে ঘুচবে প্রহর গুনা?

তোমার দেখা পাওয়াতে। 

সে আশাতেই নামে ভোর, 

নতুন কোনো গল্প সাজিয়ে।

অপরিচিতা তুমি বিরাজ করো, 

সর্বক্ষণ আমার মনের অন্তরালে। 

অন্যরকম ( ঝুমকোলতা ) – সঞ্চিতা রায় – কল্যাণী নদীয়া

বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখ,

সবুজ আর সবুজ|গাছেরা নিশ্চিন্তে 

ডালপালা ছড়িয়ে বাতাস দিচ্ছে|

পাখিরা পরম নিশ্চিন্তে করছে কুজন |

বাতাস আজ স্নিগ্ধ বড়ই|

হয়তো তুমি বেরোও নি আজ,

বেরোবে না কাল পরশু কিংবা তরশু|

জানলায় যাও, আকাশ দেখ |

দেখ , আকাশ নীলিমায় নীল |

দেখ কত কত পাখি উড়ছে আকাশে|

বসন্ত তোএসেই গেছে|

একটু দূরে দৃষ্টি মেল,

দেখ পলাশ লালে লাল|

আমিও কিন্তু ঘরেই আছি|

ঘর থেকে দেখছি , দূরের ওই

পারুল গাছটাকে|

প্রকৃতি যেন আজ পরম শান্তিতে আছে |

প্রকৃতি মা বলছে, “বাছা ঘরে থাক

আর আমার গাছ পালা পশু পাখিদের

একটু নিশ্চিন্তে বিচরণ করতে দাও”|

সত্যিই তো ওরা সানন্দে আজ ঘুরছে|

পাখিগুলোকে গুলতি দিয়ে মারে বলে

যে ছেলেটাকে রোজ রোজ বকি,

সেও তো আজ ঘরবন্দী|

তাই তো পলাশের লাল, আর টিয়ার

সবুজ আজ মিলে মিশে একাকার|

টিয়াও যেন বলছে, ভাল আছি|

ছোট্ট শিশু আজ পাচ্ছে,

কর্মরতা বাবা মায়ের সারাদিন সঙ্গ|

এও বা কম কি সে|

যে ছেলেটা সময়াভাবে বহুদিন

দেয়নি তার প্রিয় গীটারটাতে হাত,

তার ই হাতে আজ দেখ উঠছে

সুরের ঝংকার, মিষ্টি সুরে

মাতছে আজ ঘরদুয়ার|

আমিও যে আজ বহুদিন পর

হারমোনিয়ামে দিলাম হাত|

ভাল লাগছে, নতুন লাগছে সব কিছুই |

রান্না করতে খুব ভালবাসে যে মেয়েটি

 আই টি সেক্টর দখল করেছিল তার

জীবনের দামী সময়ের অনেকটা|

আজ তার হাতে অনেকটা সময়,

মা,  বাবা আর বোনকে সুন্দর সুন্দর

রান্না করে খাওয়ানোর জন্য|

ভাল লাগছে তার ও খুব ভাল লাগছে |

কত শিল্পীর ক্যানভাস আজ ভরছে,

সুন্দর সুন্দর আঁকায়|

সব মিলিয়ে সময়টা বেশ অন্যরকম |

রইলাম ই না হয়,কটা দিন ঘরে |

এসো এই অন্যরকম দিনগুলোতে

অন্যরকম আনন্দে মাতি সব্বাই |

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *