#শংকর_ব্রহ্মর_কবিতাগুচ্ছ
#চতুর্বিংশ_পর্ব (#আন্তর্জাতিক_ভাষা_দিবস)
—————————————————————-
#নির্বাচিত_একডজন_কবিতা
#শংকর_ব্রহ্ম
—————————————————————-
১).
#আন্তর্জাতিক_ভাষা_দিবস
#শংকর_ব্রহ্ম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
দিনটি একুশে ফেব্রুয়ারী
নত মস্তকে প্রাণের আবেগে
আজ তাদের স্মরি করি
বাঁচাতে সেদিন বাংলা ভাষার মান
অকাতরে যারা সঁপে দিয়েছিল প্রাণ
তাদের অমূল্য সেই দান
পেয়েছে আজ সারা বিশ্বে সম্মান
সগৌরবে অর্জন করেছে
বিশ্বভাষা দিবসের স্থান
আমরা যারা বাংলা ভাষা-ভাষী
বেড়েছে তাদের মান।
আজ বিশ্ব ভাষা দিবসের দিনে
অথবা আগে কিংবা তারপরে
ভাষা স্বাধীনতার জন্য
আজও যারা লড়াই করে
তাদের কথা ভেবে আমরা মাথা তুলে
বুক চিতিয়ে করতে পারি বড়াই।
বাংলা ভাষার প্রাণ ও মান বাঁচতে
দিয়ে ছিল যারা প্রাণ
সেই একুশে ফেব্রুয়ারী
আজকে তাদের নত মস্তকে
হৃদয়ে স্মরণ করি।
—————————————————————-
২).
#বিগলিত_শব্দরাশি
#শংকর_ব্রহ্ম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
কিছু শব্দ ঝরে যায়,কিছু শব্দ ডানা মুড়ে বসে
হলুদ পাতার মতো কিছু শব্দ উড়ে যায় খসে,
এমন সে কোন শব্দ নক্ষত্রের মতো ফুটে থাকে
তুমি কি দেখেছো তাকে কৃষ্ণচূড়ার মিহি ফাঁকে?
যখন সৌজন্য হারায় সব মাটির নীচে সন্ত্রাসে
দেখেছো কি, অন্ধকার কি ভাবে যে উঠে আসে
যখন স্তব্ধতা গিলে খেতে আসে কামুকের গ্রাসে
তখন শুনেছো কিছু শুদ্ধতার গভীরে আশ্বাসে?
আমার ঠোঁটের থেকে যে শব্দ ফুটেছে একদিন
আজ সেই শব্দ দেখো পৃথিবীকে করে প্রদক্ষিণ
আর তারই উচ্চারণে বৃক্ষ লতা অকারণ কাঁপে
দেখে শুধু চেয়ে থাকে, গভীর মনের গূঢ় তাপে
সেই শব্দ ‘ভালবাসি’ নক্ষত্রের মতোই উজ্জল
বিগলিত শব্দরাশি হেসে বেজে যায় বিউগল।
—————————————————————-
৩).
#সাদা_পাতা
#শংকর_ব্রহ্ম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
একটি সাদা পাতা কবির মুখোমুখি প্রতীক্ষায়
কলঙ্কিত হবার প্রত্যাশায়,
কবি অনেক্ষণ তাকিয়ে রইলেন তার দিকে
প্রথম শব্দটা কি লিখবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না।
কবি তার শুদ্ধতার মোহে পড়ে গেছেন যেন মনেহয়,
কাটাকুটি করা তার ইচ্ছে নয়,
ভাবলেন ‘ভালবাসা’ কথাটি লিখবেন,
তারপর ভাবনায় পড়লেন তিনি।
কাকে এবং কেন ভালবাসা?
কবি খুব সতর্ক ও সাবধানী
যাতে কোন কাটাকুটি করতে না হয়।
একটি গোটা লাইন মাথায় এলে তবেই লিখবেন তিনি।
ভাবলেন লিখবেন,’ভালবাসা ফিরে যাও তুমি’।
পরক্ষণেই ভাবলেন, কার কাছে ফিরে যাবে সে?
এমন সময় ডোরবেল বেজে উঠলো তার,
তিনি একবার সাদা পাতাটির দিকে নির্মোহ তাকালেন।
তারপর অনিচ্ছা সত্বেও উঠলেন
দেখলেন,এক ভক্ত পাঠিকা এসেছে।
নিষ্কলঙ্ক সাদা পাতাটি হো হো করে হেসে উঠলো,
কবি তার শব্দ শুনতে পেলেন।
কবিও নিঃশব্দে হেসে
নিষ্পাপ পাঠিকাটির চোখের দিকে তাকলেন,
এবার বুঝলেন ভালবাসা ফিরে যাবে কোথায়।
—————————————————————-
৪).
#পুতুল_খেলা
#শংকর_ব্রহ্ম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
এ খেলা অনন্তকাল ধরে চলে আসছে
ঠাকুর্দার মা খেলেছেন ঠাকুর্দাকে নিয়ে
ঠাকুমা খেলেছেন বাবাকে নিয়ে
আমার মা আমাকে নিয়ে
স্ত্রী খেলছে তার ছেলেকে নিয়ে
ছেলের বউ খেলবে তার ছেলেকে নিয়ে
এ খেলার এমনই নিয়ম।
মেয়েদের এই পুতুল খেলায়
ছেলেদের কোন ভূমিকাই নেই
তারা শুধু উপলক্ষ মাত্র আর কিছু নয়।
খেলাটা সেই একই অনন্ত কালের জন্য
আশ্চর্য এক মায়ার বন্ধন।
ক্রমশই সে বন্ধন আলগা হয়ে আসে
কালস্রোতে ভেসে যায় সে মায়ার টান
কিন্তু খেলাটা চলতেই থাকে
সেই একই নিয়মে।
—————————————————————-
৫).
#সত্তরে_স্বাধীনতা
#শংকর_ব্রহ্ম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
অন্ধ কানাই আজও বছর সত্তরে
দাঁড়িয়ে পথের মোড়ে
কেন যে বাটি হাতে ভিক্ষা করে?
কে দেবে উত্তর তার,
তারা তো নীরব আজ
যাদের দায় উত্তর দেবার?
বস্তিতে বস্তিতে রাস্তার কলে
জলের জন্য আজও কাড়াকাড়ি
পানীয় জলের জন্য মারামারি
বালতির আঘাতে মাথা ফাটে
মঙ্গলার মার
তাতে কিবা আসে যায় কার,
কিন্তু এর দায় ভাগ কার?
বন্যায় আজও ভেসে যায় যার
ভিটে মাটি , ঘর বাড়ি সব
তারা বুঝি আমাদের মত সব
স্বাধীনতা করে অনুভব?
—————————————————————-
৬).
#সব_কিছু_ছেড়ে
#শংকর_ব্রহ্ম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
সে দিন কি আর আছে রে ভাই
যখন কাচ্চিল গুলি নিয়েই
ফুরিয়ে যেত সারা দুপুর
নুপূর পায়ে সন্ধ্যা আসত নেমে
মুছে যেত দিনের আলো লেত্তির টানে।
খেলার ছলে হারিয়ে গেছে ছেলেবেলা
যৌবন কি ভাবে গেছে
টের পাইনি মোটে
হারাতে হারাতে এ ভাবেই একদিন
ঠিক পৌঁছে যাব।
এই স্বপ্ন নিয়ে আজও বেঁচে থাকা
কবিতার দু এক পংক্তি
মাঝে মাঝে লেখা
নতুবা কবেই একদিন দুর ছাই বলে
অনায়াসেই চলে যেতাম
সব কিছু ছেড়ে।
—————————————————————-
৭).
#দর্শন
#শংকর_ব্রহ্ম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
কোন দর্শনই শেষ পর্যন্ত
আমাদের কোথাও পৌঁছে দিতে পারে না
প্রত্যাশা জাগায় মাত্র
মেধার জড়তা কাটায়
তার বেশী কিছু নয়।
তাই এত দর্শনের জন্ম হয়েছে
ভবিষ্যতে আরও কত হবে।
যা আমাদের তাড়না করে বেড়ায়
তা তো দর্শন নয়।
জীবনের প্রয়োজন
তার প্রভাবেই আমরা যে যা হয়ে উঠেছি
অন্য কিছু হওয়া সম্ভব নয় বলে।
—————————————————————-
৮).
#নীলকন্ঠ
#শংকর_ব্রহ্ম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
একটি কবিতা লেখা হবে
তার জন্য সমস্ত কষ্টের ভার তুচ্ছ ভেবেছি
পৃথিবীর সমস্ত গরল পান করে
নীলকন্ঠ হয়ে বসে আছি।
একটি সৃষ্টির লোভে
সমস্ত দুঃখের ভার বুকে চেপে
অন্ধকার দূর করে, আলো নিয়ে
উঠে দাঁড়িয়েছি।
একটি কবিতা লেখা হবে
তার জন্য পার্থিব যত সুখ তুচ্ছ করে
মহৎ সৃষ্টির লোভে
সমস্ত যন্ত্রণা ভুলে
মাথা তুলে সোজা দাঁড়িয়েছি।
—————————————————————-
৯).
#নৈঃশব্দে_তাড়িত_শব্দ
#শংকর_ব্রহ্ম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
আশ্রয় খুঁজেছে এসে নিকটে আমার
নৈঃশব্দে তাড়িত শব্দ ,
নিরাশ্রয় ব্যর্থতায় শুধু
ব্যথা আর গ্লানি বোধে
সময়ের গূঢ় ভাগ কেটেছে যাহার |
বাতাসও প্রলুব্ধ হয়ে
হুটোপুটি করে ছিল শুরু
আর তার গোপন প্রশয়ে
বলব যে কি গুরু ,
নৈঃশব্দে তাড়িত শব্দ
যেন এক কোমল কিশোরী হয়ে
আমার নিকটে শুধু খুঁজেছে আশ্রয় |
কিন্ত কেন ?
আমি শুধু পাই এই ভয় |
আমি তাকে
কাছে ডেকে বলতে পারিনি
নিরাশ্রয় সময়ের
গূঢ়তম গল্পের কাহিনি |
—————————————————————-
১০).
#স্তব্ধতা
#শংকর_ব্রহ্ম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
আমি খুব শান্ত হয়ে আছি
ভিতরে ফুটছে যত ঢেউ
নেই আর কেউ কাছাকাছি।
কেউ যদি আসে কাছে
তার কাছে কেবল শুধাই
এমন দুর্বিসহ দিনে ,
কেমন আছ ভাই?
কেউ কেউ সন্দেহ প্রবণ
আড় চোখে চায় ,
উদাসীন কেউ আবার
দূরে সরে যায়।
আমি আজও স্তব্ধ হয়ে আছি
আর কেউ নেই কাছাকাছি।
ভিতরের ঢেউ যদি একবার
বাইরে আছড়ে পড়ে ,
আমি তাই খিল দিই নিজেরই অন্তরে।
—————————————————————-
১১).
#মুখোশ
#শংকর_ব্রহ্ম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
মুখোশ পরে থাকলে সবাই
মুখোশ ছেঁড়ার দায়িত্ব কার
তোমার নাকি আমার?
তোমার আমার কারও – ই নয়
মুখোশ পরা লোকগুলি তাই?
পাচ্ছে না তো ভয়।
এসো , তোমার মুখোশ আমি ছিঁড়ি
আমার মুখোশ তুমি
এমন করেই শুরুটা প্রথম করি।
খেলাটা ধীরে উঠলে জমে
মুখোশ পরা লোকগুলো সব
অনেক যাবে কমে।
—————————————————————-
১২).
#আধুনিক_কবিতা
#শকর ব্রহ্ম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
গীতা পাঠ শেষ করে,
এখন আমি বঙ্কিমচন্দ্রে মগ্ন
রবীন্দ্রনাথ কোনদিন শেষ হবে না বুঝেই
খাবলা খাবলা খানিকটা গিলে ফেলেছি
সবটা হজম হয়নি এখনও
ব্যবহারিক জীবনে তার প্রয়োগ?
এখনও দূর অস্ত।
তারপর অনেকেই মুগ্ধ করেছে
নাম বলে তাদের আর বিব্রত করব না
মাঝে মাঝে বদ হজমের প্রতিষেধক হিসাবে
আধুনিক কবিতার রস পানে সুস্থ বোধ করি।
—————————————————————-
শংকর ব্রহ্ম