ওদের পূজো শুরু বিসর্জনের পর – পুলক মন্ডল

ওরা কেউ জল থেকে উঠে আসে দেবী দুর্গার ত্রিশুল হাতে, কেউ বা জলকেলি করে গণেশ ঠাকুরের সাথে। হোক না যতই টিনের পলকা ত্রিশুল! ওদের মধ্যে কেউ মহামায়া সেজে অসুর বধ করে। হোক না যতই অসম্পূর্ণ নকল সাজ! ভিজে চুপসে যাওয়া ছেঁড়া মুকুট মাথায় বেঁধে ওদেরই কোন একজনের পিঠে চড়ে কেউ সাজে কার্ত্তিক, কেউ বা হয় সরস্বতী। আসলে ‘ওদের’ পূজো তো শুরু হয় বিসর্জনের পর। একাদশীর ভোর থেকে। যখন তথাকথিত ভদ্রসমাজে ‘শুভ বিজয়া’-র ভার্চুয়াল ঢল নামে নানা কায়দায়, নানা ঢঙে, নানা রঙে দেখনদারি স্মার্টফোনের পর্দা জুড়ে, তখন ওরা মেতে ওঠে অকৃত্রিম-অনাবিল খুশির আনন্দে।

     ‘বিজয়া’ বরাবরই ওদের কাছে শুভ। শুভ এই কারণে যে, প্রতিমা বিসর্জনের পর ওরা কয়েকজন দল বেঁধে নদীর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে তুলে আনে প্রতিমার কাঠামো, যা কোন না কোন মৃৎশিল্পী-কে বিক্রি করে পায় কয়েক’শ টাকা। শুভ এই কারণে যে, সেই টাকায় ছেঁড়া ইজের ছেড়ে ওদের গায়ে ওঠে সস্তা-চটকহীন নতুন সুতির জামা। শুভ এই কারণে যে, হয়ত ঐ টাকায় ওরা ফুটপাতের সস্তা-হোটেল থেকে কেনে একপ্লেট বাসি মাংস। ওদের আমিষ-নবমী পালন হয় একাদশীর সন্ধ্যায়। 

      কাঠামো তুলতে গিয়ে ওরা পায় দেবীর তোবড়ানো অস্ত্র, ভিজে চুপসে যাওয়া চুমকির সাজ। তারপর জলে ভাসা কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে ওরা শুরু করে দেবীর বোধন থেকে মহিষাসুর বধ পালা। নদী থেকে  উঠে আসা ত্রিশুল -ঢাল-তলোয়ার আর দেবীর মুকুটে ঠিকরে পড়ে প্রথম সকালের সূর্যের আলো। কেমন যেন পূজো পূজো ভাব ছড়িয়ে পড়ে ওদের চোখে-মুখে। 

      ওদের কারো ঠিকানা কেয়ার অফ ফুটপাত, কারো রেললাইনের ধারে ভেঙে পড়া ঝুপড়ি, কারো বা নদীবাঁধে জীর্ণ পলিথিনের ছাউনি। এসব পাড়ায়  

আবার পূজো কোথায়!!! বছরভর পেট চালানোরই ক্ষমতা নেই, তো দেবী আরাধনা!!! এদের পল্লী জেগে ওঠে দশমীর রাতে। এ পাড়ায় ঠাকুর আসে বিসর্জনে। রাতের বাহারী নিয়ন-আলোয় ঝলমলে জলে, নামেন দেবী। পরদিন প্রথম সূর্যের চিকচিকে আলোয়, ওরা নামে জলে…..

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *