এক মুঠো রোদ : মৈত্রেয়ী সিংহরায়

এক মুঠো রোদ
গুঁজে রেখেছিল ঘরের
খড়ের চালে
ফতিমার মা।
সারাবছর এই রোদ
ওকে উত্তাপ দিত।
প্রেমে দিত, ঘৃণায় দিত
কথায় দিত, নীরবতায় দিত,
কান্নায় দিত…..
হতচ্ছাড়ি করোনা যেদিন
ফতিমার বাবাকে নিয়ে
চলে গেল,সেদিন‌ও সে এই রোদকে
খড়ের চাল থেকে টেনে নিয়ে
সারা গায়ে মেখে,
নখে মাটি আঁচড়াতে আঁচড়াতে
বুকের অন্দরমহল থেকে
সাহসকে টেনে বার করে
ফতিমার কপাল থেকে
চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে
বুকের উত্তাপে
ঢেকে দিয়েছিল।

তারপর যখন ঈশান কোণে
কালো মেঘটা ঘন হতে থাকল
ও রোদটাকে টেনে বার
করার আগেই
বলা নেই ক‌ওয়া নেই
সব্বনাশী ঝড়
ওর ঘরের চালটাকে
উড়িয়ে নিয়ে চলে গেল।
এই প্রথম উত্তাপ হারিয়ে
ফতিমার মা কান্নায়
ভেঙে পড়ল।
সবার কাছে জানতে চা‍ইল
‘কেউ কি আমার ঘরের
চালটা দেখেছ’?
কেউ বিস্মিত হলো,
কারুর চোখে করুণা।

স্ফুরিত ঠোঁটের অভিমান নিয়ে
দাঁড়িয়ে র‍ইল ফতিমার মা,
আকাশে রোদ্দুর,
রোদ্দুর চারিদিকে,
রোদ্দুর মাঠে মাঠে
এই রোদ্দুরকে এখন সে
কোথায় লুকিয়ে রাখবে?

একফালি রমজানী চাঁদ
কী ভীষণ শব্দহীনতায় নিথর,
করুণায় স্নিগ্ধ ছলোছলো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *