ঘর্মাক্ত বদনে অফিস থেকে, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতেই কানে এল ডাইনিং এ বসা আমার ক্লাস থ্রি তে পড়া মেয়ে, মাকে আবদার করছে । কাল শিক্ষক দিবসে স্কুলে অনেক গুলো নাকি কলম নিয়ে যেতে চায় ও ।প্রায় দশ দিন হলো, পরীক্ষা চলছে ,তাই “আচ্ছা সে দেখা যাবে, আগে মন দিয়ে পর তো তুই” ,বলে সহধর্মিনী স্কুলের এক বোঝা খাতা দেখতে মনোযোগ দিলেন।
মিনিট পনের হয়েছে কি হয়নি, দেখি দরজার পাশ টাতে চুপ করে, কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে আমার মেয়ে! চোখাচোখি হতেই অনুনয়ের সুরে বললো,”বাবা একটু চলো না গো দোকান,সব শেষ হয়ে যাবে,আমার অনেক পেন কিনতে হবে”। এত কি করবি রে জানতেই খুশি মনে বলল,স্কুলে চোদ্দটা লাগবে,দুটো দেবো তোমায় আর মাকে, আর চারটে নাচের ,আঁকার ও গানের ম্যাম ও মশাই কে মোট কুড়িটা।”
“তুই আবার এসেছিস,বাবু পড় গে যারে,পাঁচ মিনিট ছাড়া ছাড়া উঠে আসছিস যে,তোর না অঙ্ক পরীক্ষা ” মায়ের গলা পেয়েই ইচ্ছা না হলেও আবার দৌড় দিলো পড়ার ঘরে। কিছুক্ষণ পর দেখলাম মা ও মেয়ে,দুজনে বাড়ির কাছেই দোকানে যাচ্ছি বলে বেরুলো।
বাজার থেকে বেশ কিছু কলম,গিফট প্যাক করে এসে যা ভিড়ের কাহিনী শোনালো,বাপরে এ যে দিবস পালন মানে দেখছি কেবল দেখন দারি ! এক অসুস্থ মানসিকতার ঘেরাটোপে শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে সুস্থ রুচিশীল সম্পর্কে বেশ নজরদারি আজকাল!কেমন যেন একটা কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা,প্রয়োজনে বকা ঝকা বাপরে সেও নাকি মানসিক অত্যাচার নামক আধুনিক জটিল শব্দে বন্দি, নির্মূল এই স্বার্থপর মুখোশ দুনিয়ায়।একটা মেকি,ভয়ের,যেটুকু না নইলে নয় সেটুকুই সম্পর্ক বজায় রাখার প্রবণতা যেন এক প্রাণহীন যান্ত্রিক ছোঁয়া।
গিন্নি জানালো ওই মেরে কেটে ,পাঁচ ফুট লম্বা চওড়া মাল পত্রে ঠাসা দোকান ,”কথামালা”তে পেন গিফট কেনার যা ভিড়! যে দোকান সামলায় দুজনে, সেই দোকানে আজ আছে পাঁচ জন স্টাফ! তারাও হিমশিম খাচ্ছে খদ্দের দের চাহিদার সামাল দিতে,শিক্ষক দিবস সেলিব্রেশনের মহড়ায়!
আজকাল প্রজেক্ট নির্ভর পড়াশোনায়, নিত্যদিন এটা কেনো ,সেটা কেনো, রঙিন বাহারি কাগজ,স্টিকার,গ্লু স্টিক,ক্লাস ডেকোরেশনের সাজসজ্জাতে কত না কি। নাজেহাল হবার জোগাড় ! আর না দিলেও নয়,মা-বাবার একমাত্র আদরের সন্তান বলে কথা।
আজকাল সময় ও থাকার স্থানাভাবের জন্য স্বামী-স্ত্রীর নিজেদের মধ্যেও আলোচনার বেশ অভাব ।একটু যে প্রাইভেসি নিয়ে সংসার পরিকল্পনা এমনকি গৃহশিক্ষকের বিষয়ে আলোচনা করবে সবটাই সন্তানের প্রায় সামনে বা পাঁচ ইঞ্চি দেয়ালের নাম মাত্র ঘেরা টোপে।
ফলে সন্তানের কর্ণ গোচরে বড় সহজে সঞ্চারিত হয়ে যায় বড়দের কথা বার্তা। সেই মনোভাব পোষণে তারাও, কখনো অগ্রবক্তা হয়ে অন্যদের সম্পর্কে শৈশব থেকেই প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করে দেয়। যাকে খুব সহজেই অকালপক্কতা নামে অভিহিত করা যায়। অত্যধিক স্বাধীনতা ও ব্যস্ত ইন্টারনেট নির্ভর যুগে কোন কথাটা তাদের মন্তব্য করা উচিত আর কোনটা নয়,তাদের বয়সটা এত কম এই বোধটাও অনেক ক্ষেত্রে লোপ পায়।
সময় দিনকাল পাল্টেছে ,এটাও আমরা মানি ,নিশ্চয়ই আমাদের সেই শৈশবের মতো আসন নিয়ে স্কুল যাওয়া,একমাত্র ক্লাস ফোরের ক্লাস রুমে বেঞ্চ দেখতে পাওয়া আমার প্রাইমারি স্কুল জীবন যাত্রা এখনো বজায় থাকুক এটা নিশ্চয়ই আমি চাইবো না। তবু টিফিনে সরকার থেকে পাউরুটি পাবার আনন্দ , কত কিছু না পাওয়ার মধ্যেও একটা অদ্ভুত আনন্দ ছিল,আর ছিল শৈশব কে চেটেপুটে ভোগ করার,ভাগ করে নেওয়ার।
তখন প্রাপ্তির তালিকা দীর্ঘায়িত হলেও এখন বলামাত্র মা-বাবা সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস তাতে কেনা হোক আর না হোক তড়িঘড়ি করে একমাত্র সাধের সন্তানের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে বাধ্য থাকেন।
না দিলে পাছে লোকে কি ভাববে, সন্তান অপমানিত হবে এই ভাবনা ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করতে বাধ্য হয় অভিভাবক দের। পড়াশোনার সাথে সাথে সেইসঙ্গে রয়েছে গান, নাচ,আঁকা আরো নানান সৃজনশীল বিষয় শেখার তাগিদ । সব স্কুলেই পাল্লা দিয়ে নিত্য দিন এটা চাই,সেটা চাই তার ওপর বার্ষিক প্রোগ্রাম ,সোশ্যাল,ফান ফেস্ট সব মিলে ল্যাজে গোবরে অবস্থা সন্তান ও মা বাবা সকলের।
আর ঠিক ঠাক অংশগ্রহণ না করলেও নয় এই বুঝি ভয় সন্তান পিছিয়ে পড়বে,সকলে বাঁকা চোখে দেখবে ,এ যেন এক আতঙ্ক তাড়া করে বেড়ানো গোলক ধাঁধা জীবন। সবকিছু তোতা পাখির মত শিখিয়ে সন্তানকে স্নেহ মায়া-মমতা বিহীন স্বার্থপর যন্ত্র মানব তৈরির এই প্রচেষ্টা। নইলে প্রতি পদে পদে তুমি পিছিয়ে যাচ্ছে এই অনুভব ছোট থেকেই শিশু মনে স্থায়ী প্রভাব ফেলে।
আজকাল ব্যস্ততার গোলকধাঁধা জীবনে সময়ের বেশ অভাব। সবাই সেই ভোর থেকে ছুটছি রাত অবধি। কিছু করতে হবে,প্রতিষ্ঠা,যশ,সম্মান,টাকা পয়সা,গাড়ি বাড়ি,ছেলে কে মানুষের মতো মানুষ সব সব চাই।নইলে সব হারালাম এ যন্ত্রনা যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খায় ত্রস্ত নাগরিক মনন,জীবন যাপন। আর সে সব ছেড়ে যদি একটু সময় পাওয়া যায় সেটা পরিবার,সন্তান,নিজের জন্য কিন্তু এতেও বাধ সাধছে আধুনিক জীবনের ইন্টারনেটের অবাধ বিচরণে।
আগে ছিল বোকা বাক্স,আমরা হাঁ করে সিরিয়াল দেখতাম না,গিলতাম।সময়ের সাথে সাথে সে দিন প্রায় অস্তমিত,তার স্থান নিয়ে নিয়েছে ফোর জি ইন্টারনেট। রাস্তা ঘাট, দোকান বাজার,ট্রেন বাস এমনকি ছেলের সাথে কথা বলার,রান্না ঘরে,বাথরুমে সর্বত্রই ওই টুকু সময়ের মাঝেও মোবাইল ফোন ,ইন্টারনেট তার থাবা বসিয়েছে। সন্তান উপলদ্ধি করছে,দেখছে তার অমনোযোগী অভিভাবক দের যে ,যেন একটা ঘোরের মধ্যে,ভাবনার জগতে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এতে মা বাবার সঙ্গে সন্তান দের যে বন্ডিং ,সম্পর্কের মধুরতা সেটা কোথায় যেন মুখ থুবড়ে পড়ছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে আজ বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোর সাথে ভারতে নেট ব্যবহার কারীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।এমন ভাবে চলতে থাকলে যে আশঙ্কা হওয়া স্বাভাবিক ,পরিবারের মধ্যে আপন সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে বাড়তে এক শূন্যতা,একাকিত্বের গ্রাস ঠিক সেটাই বাস্তবে পর্যবসিত হয়ে গেছে।
বিদেশে কিছু স্কুল ছাত্র ছাত্রী মা বাবা অভিভাবক দের এত্ত মোবাইল ঘাঁটার নেশার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে,যে আন্দোলনের ঢেউ আমাদের দেশেও অদূর ভবিষ্যতে আছড়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক।সত্যিই এ আমাদের বড় লজ্জা,আধুনিক সভ্য জীবনযাত্রার প্রতিবিম্ব স্বরূপ।
ছোটবেলায় লম্বা ছুটি পেলেই যেতাম মামার বাড়ি। আনন্দ আরো দ্বিগুণ হয়ে পোয়াবারো হতো, যদি তখন ধান কাটার মরসুম চলতো ।এক অদ্ভুত আনন্দে গা ভাসিয়ে গরুর গাড়িতে চেপে লাঠি নিয়ে ,”চল হ্যাট হ্যাট” করে গরু দুটোকে ছুটিয়ে মাঠে ধান আনতে যেতাম।
ফেরার সময় কখনও খড়ের গাদায় চেপে অথবা জমিতে পড়তে পড়তে আসা সোনালী ধানের শীষ,মুঠোয় ধরে কাঁচা রাস্তায় গরুর গাড়ির চাকার দাগের সাক্ষী হয়ে,বাড়ি ফিরতাম । সত্যিই এ সুখ স্মৃতির কোনো ভাগ হবে না,এ যুগের সন্তানরা এসব আনন্দ থেকে সত্যিই বঞ্চিত। সন্ধ্যায় দাদুর কাছে গল্প শুনতে চাওয়ার আবদার করার আগেই ,দাদুর সেই আদর জড়ানোর ডাক,” কি গল্প শুনবে দাদুভাই” বলে রূপকথা, ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী সহ কতরকমের নীতিগল্প উঠে আসতো।
শৈশবে শোনা সেইসব গল্পের মাদকতা আজ অতীত এটা ঠিক হলেও ,সেই সব দিনের সুঘ্রাণ কোনোদিনও আমাদের মন থেকে মিলিয়ে যাবে না।আজকালকার বাচ্চারা এইসব,স্বর্গ সুখ থেকে সত্যিই বঞ্চিত ।তাদের আছে চলমান মুভি, থ্রি ডি গেম, কার্টন,মোবাইল আসক্তি ও ভিডিও।পড়াশোনা,স্কুল ব্যাগের বোঝার চাপ নিয়েও এইসব দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেলে মনের মধ্যে ঢুকে সিনচেন নবিতা,ছোটা ভিম বাহিনী, পিঠ চাপড়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবে তাদের।
মামার বাড়িতে সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠেই দৌড়াতাম হাঁসের ঘরের দিকে। দরজা খুলে প্যাক প্যাক ধ্বনিতে মুখরিত সকাল খুশিতে ভরে যেত।হাঁসের ঘর থেকে হাঁস গুলো দিদার দেওয়া এক থালা জল ঢালা ভাত খেতে শুরু করলে ,গুনে গুনে তাজা ডিম বার করে আনতাম।সে যে কি দারুন অভিজ্ঞতা ও আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না।
খাবার খেয়ে হাঁস গুলো কি সুন্দর সুশৃংখল ভাবে আমার অপলক দৃষ্টিতেই চলে যেত । আবার “আঃ চই চই,চই চই” ডাকে সন্ধ্যার আগে তাদের ঘর ঢোকানো এক দায়িত্ববোধ ভালোলাগা তৈরি করত।
শৈশবের বিকালের মাঠে কতো রকমের খেলা খেলতাম , খেলা দেখতাম ,কি অপূর্ব সে সব দিন। কত হারিয়ে গেছে সে সব খেলা ,পরিবেশও অসুস্থ আর বিভীষিকাময় এখনকার । সবুজ মাঠে যে দুদণ্ড খেলে বেড়াবে শিশু সে সুযোগ ও নেই।যদি বা আছে সেটাও অভিভাবক কতৃক নিযুক্ত কেয়ার টেকারের কড়া অনুশাসনের নজরদারী।
সময়ের বড়ো অভাব,আর ইস্কুলের দৈত্যাকার সিলেবাস যেন পিছু তাড়া করে বেড়ায়। জানালার গরাদ ধরে জুল জুল চোখে বাচ্ছা , ফ্লাটের খাঁচা বারান্দা থেকে নিজের লোক জন , গাড়ির গতিময়তা নচেৎ টেলিভিশনে কার্টুনের ছড়া ছড়ি দেখে সময় কাটানো জীবন আদতে একাকীত্বের পিঠে সওয়ার করানোর আধুনিক প্রচেষ্টা।
এই তিন দিন হলো বাড়িতে একটা সাধারণ বোতাম সুইচ মোবাইল এনে রেখেছি , উদ্দেশ্য মেয়েটা ছোটো তো , ঠিক ঠাক বাড়ি ফিরে , আমাদের একটু জানিয়ে দেবে সে ফিরলো কখন। সহধর্মিণী কাল দেখালো আমায় ,মোবাইলের খসড়া ম্যাসেজ লেখার স্থানে আমার নয় বছরে পা দেওয়া মেয়ে প্রায় সাতাশ টা ম্যাসেজ লিখে রেখেছে , তা কি লিখেছে শুনুন , নিজেই প্রশ্ন করেছে এক একটা ম্যাসেজে আবার নিজেই আর একজন সত্ত্বা হয়ে মনের মধ্যে ওর কাল্পনিক ব্ন্ধু সেজে , উত্তরও লিখেছে প্রতিটা ম্যাসেজের ।
এটা একটা উদাহরণ মাত্র , অর্থাৎ সময়ের তালে তাল মিলিয়ে একা সন্তান একাকী থেকেও একটা পরিবেশ গড়ে তুলেছে আপন মনের গহনে । দেখে খুব খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই , খেলবে কার সাথে এই বিছিন্ন দ্বীপের মতো একক পরিবারে ! এই এক সন্তানকেই ঠিক মতো মানুষ করতে পারবো তো এই আতঙ্কের ভয়ে এক সন্তান নিতে আগ্রহী আমরা অভিভাবকরা পাড়ি দেই, দাদু-ঠাকুমা ছেড়ে সুযোগ সুবিধা পেতে শহরে।
আর এই মিনি কম্পিউটার বাচ্ছারাও এই সব নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে নিজেদের মতো করে ভাবনার জগতকে সাজিয়ে নেয় । ওরা নিজেদের মতো করে থাকে, বড়ো হয় । স্কুল থেকে ফিরে একদম ম্যামের অনুকরণে যখন আমার বাচ্ছা, অদৃশ্য ক্লাস বানিয়ে হোয়াইট বোর্ড , চক ডাস্টার নিয়ে রীতিমতো স্টুডেন্ট দের নাম ডেকে পড়া ধরে ,বোর্ডে পড়া বোঝায় , বা নাচের ক্লাস করে এসে আপন মনে নিজেই নাচের ম্যাম হয়ে নাচ শেখায়।
বেশ মজা লাগে , আবার ভাবি এর মধ্যেই বাচ্ছা তার আনন্দ খুঁজে পেয়েছে , নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে আর খেলছে খেলুক পড়া পড়া খেলা, আর যতদিন সম্ভব একাকিত্বকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে, ততই আখেরে ওরই লাভ ।
আগে যৌথ পরিবারে হই হই করে খেলা , পড়াশোনা ,যৌথ কাজকর্মে কি সুন্দর দিন গুলো কাটতো, ছেলে মেয়েগুলো মানুষ হয়ে যেতো ঘরের , কাজের মাসিদের ওপর ভরসা করে ,কোলে পিঠে চড়ে !
এখন পরিস্থিতি অনেক আলাদা । ভরসার লোকের অভাব , নানান সমস্যা সর্বত্রই । উপার্জন বেশি তবু দিশেহারা অভিভাবকগণ । এক সন্তান কে মানুষ করতেই চিন্তায় অস্থির , ত্রাহি ত্রাহি রব অন্তরে । আবার সন্তানের সঙ্গী হিসাবে ভাই কি বোনকে যে,পৃথিবীর আলো দেখাবে , সে ইচ্ছে বা সাধ থাকলেও মধ্যবিত্ত পরিবারে লোকবলের অভাব, অর্থ সংকট, কাজের মেয়ের ওপর ভরসা করে দিন গুজরান।
এক জন সন্তানকেই , এই তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে ভালো করে মানুষ করতেই জিভ অর্ধেক বেরিয়ে আসার উপক্রম! সুতরাং একাকীত্ব আছে , থাকবে আগামী প্রজন্মের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছায়ার মতো আর আধুনিক জীবনে একে উপেক্ষা করা কি সাধ্যি !
এই চিন্তা বুকে নিয়েই বাঁচা, আগামীর পথ চলা । সবেধন নীলমনি সন্তান কে , একটা বেস্ট ক্যারিয়ার দেবার ইচ্ছা, চেস্টা বা লক্ষ্যমাত্রার স্বপ্ন বুকে নিয়ে স্বার্থপরতার মোড়কে একাকীত্ব, অবসাদ নামক কিছু অতি আধুনিকতার অলঙ্কার গায়ে চাপিয়ে বিপন্নতার শৈশব কে আঁকড়ে ধরা ।
এক দুপুরে কোন একটা কাজে শুনশান রাস্তা দিয়ে ফিরছিলাম, দেখি এক মা ,তার বাচ্চাকে স্কুল বাস থেকে নামিয়ে ছেলের দামি টিফিন, তার বন্ধুকে শেয়ার কথা শুনেই রেগে অস্থির ।এটা সামান্য ঘটনা হতে পারে কিন্তু এর পেছনে রয়েছে স্বার্থপরতার বীজ রোপণ ।
ওই ছেলে শুধু নয় এখনকার আদরের সন্তানরা, এই যে একা খাব একা পড়বো,এই মানসিকতার মধ্য দিয়ে বড়ো হচ্ছে এটাই একপ্রকার মানসিক পঙ্গুত্ব। এরাই যখন মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেবে তখন আমরা নিন্দা বা সমালোচনা করি বটে ,কিন্তু সত্যি করে বলতে গেলে দোষটা এদের কোথায়! আমরাই তো এদের তালিম দিচ্ছি কেমন ভাবে থাকতে হবে,যাতে আগামীতে টিকে থাকার রসদ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়।
সন্তানরা স্বার্থপর হয়ে টিকে থাকার আধুনিক শিক্ষা অভিভাবকদের কাছ থেকে নিচ্ছে।খাবার বা ভাল কিছু সকলকে ভাগ করে দেবার মানসিকতা লোপ পাচ্ছে যা সন্তানের শৈশবকে এক প্রকার বিষাক্ত করে তোলার নামান্তর। এই ভাবেই নানাবিধ ঘটনার পরম্পরায় শৈশবের দিন যাপন চলে, দৈনন্দিনতার হাত ধরে ,সূর্য চাঁদ উদয় অস্তের সাথে, আধুনিকতার বাতাবরণে । নিমগ্নতার ক্যানভাসে,একাকিত্বের রংতুলিতে ফুটে উঠেছে শৈশবের বিপন্নতার ছবি।
নমস্কাররাণা চ্যাটার্জীবিবেকানন্দ কলেজ মোড়বর্ধমান পূর্ব ।