আমি একজন খুব সাধারণ মানুষ। আর সাধারণ জীবন যাপনই আমার পছন্দ। ছোট বেলা থেকেই
আমার বই পড়তে ভালো লাগে, সময় পেলেই আমি বই পড়ি। মন খারাপ থাকলেও বই পড়ি বলতে গেলে বই আমার এক পরম বন্ধু । বই পড়ার পাশাপাশি আমি সাহিত্য চর্চাও করি। আর আমার আরেকটা অভ্যাস হলো যখনই বই পড়ি বা লেখালেখি করি প্রায় সব সময়ই জানালার পাশে বসে করি। এতে করে প্রাকৃতিক একটা ছোঁয়া পাই।
এতক্ষণ অনেক কথা বলে ফেললাম আমার সম্পর্কে এবার চলুন আসল কথায় আসি।
আজ কয়দিন ধরে আমার মনটা ভীষণ খারাপ কেন জানেন? আমার একটা বন্ধু ছিল তবে সেটা মানুষ বন্ধু নয়! খুব অবাক হচ্ছেন তাইতো, হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন। আমার বন্ধুটি ছিল একটি পাখি
ফিঙে পাখি! আমি সকালে, দুপুরে, কিংবা বিকেলে
যখনই পড়তে বসতাম বা লিখতে বসতাম তখনই বন্ধু আমার কোত্থেকে যেন চলে আসতো আমার জানালার পাশে ! এসেই জানালার গ্রীলে বসতো এখানে বসতো ওখানে বসতো আর লেজের পেখমগুলো ছড়িয়ে নাচতো সে। কি সুন্দর লাগতো তার নাচ। কালো পালক ছিল তার সারা গায়। পাখনার পালকের শেষ কয়টা পালকের মাথায় ছিল সাদা সাদা ছোপ। লেজের পালকেও, আর চোখের পাশে লম্বা সরু একটা সাদা দাগ ছিল।
সে যখন নাচতো তখন আমি পড়া বাদ দিয়ে শুধু তাকেই দেখতাম। কি চমৎকার কিচির মিচির ডাকতো সে। আমিতো তার ভাষা বুঝতামনা কিন্তু তার শারীরিক ভাব ভঙ্গিতে মনে হতো সে যেন আমাকেই কিছু বলছে। কখনো কখনো আমি জানালার গ্রীলের ফাঁক দিয়ে হাত বাহিরে বের করতাম যাতে সে আমার হাতে বসে। কিন্তু সে বসেনি কোনদিন আমার হাতে হয়তো সে আমাকে বিশ্বাস করতে পারেনি। তবে সে উড়ে উড়ে আমার একদম কাছে এসে নাচতো বসতো আমার জানালার গ্রীলে। এটা আমাকে খুব আনন্দ দিত। এভাবেই ফিঙেটার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আমি রোজই জানালার ধারে বসতাম পড়তে বা লিখতে সেও চলে আসতো
কথা দেয়া প্রেমিকার মতো। আমিও অপেক্ষায় থাকতাম সে কখন আসবে। কোনদিনই আমি জানালার পাশে বসার পর দুই মিনিটও দেরি হয়নি আসতে তার। আমি অবাক হতাম এটা কি করে সম্ভব! এভাবেই চলছিল আমাদের না বলা না বুঝা প্রেম! অনেক মায়া জন্মে গেছিল আমার তার সাথে। তারও হয়তো আমার মতো মায়াই জন্মেছিল তা না হলে একটি পাখি রোজ সময় করে কেন আসবে ? কেনইবা এখানেই আসবে ? আপনারাও নিশ্চয় ভাবছেন তাই না ? হ্যাঁ এটাই সত্যি ! গত কিছুদিন ধরে আমার সাথে ওর দেখা হচ্ছেনা ! আমি অপেক্ষা করি ওর জন্য সারাদিন একটু পরপর বসি জানালার পাশে কিন্তু সে আসেনা !
কেন? কি হয়েছে তার ? কোন অসুখ বিসুখ করিনিতো ? এরকম অসংখ্য প্রশ্ন নাড়া দেয় আমার মনে। আজ প্রায় পনেরো দিন হতে চলেছে বন্ধু আমার উদাও। এখন আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে ! বড্ড খারাপ লাগছে। ওর কথা মনে হলেই আমার কন্ঠ ভার হয়ে যায়, চোখ ঝাঁপসা হয়ে আসে অশ্রু জমে!
ভেতরটা কেঁপে উঠে আচমকা! আমি বাঁশের ঝাড়ে লেবু বাগানে নানান জায়গাও ওকে খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও তাকে পাইনি। তার কোন ঠিকানাও আমি জানিনা। আর কখনো তার সাথে কোন সঙ্গি পাখিও দেখিনি! মাঝে মাঝে ভিরভির করে বলি বন্ধু তুমি কোথায় চলে গেলে ফিরে এসো। আমি তোমার অপেক্ষাই করছি। এখনো ফিরেনি বন্ধু আমার জানিনা আর কখনো ফিরবে কিনা ?
তবে বন্ধু ফিঙে সারা জীবন রয়ে যাবে আমার হৃদয়ের মন্দিরে। বন্ধু তোমার স্মৃতি আমাকে কাদায়! বিশ্বাস কর বন্ধু এই যে এখনো আমি জানালার পাশে বসেই লিখছি তোমার স্মৃতি গুলো কিন্তু তুমি নেই পাশে। আমার হাত কাঁপছে এখনো লিখতে গিয়ে। চোখও ঝাঁপসা হয়ে গিয়েছে আর পারছিনা। তুমি যেখানেই আছ ভাল থেকো প্রিয় বন্ধু আমার। আমি তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবেসে ফেলেছি এখন তোমার অনুপস্থিতিতে তা টের পাচ্ছি! পরিশেষে এটাই বলবো ” যেখানেই আছিস ভালো থাকিস বন্ধু আমার!
বড় ভালোবাসিরে তোকে ” ফিঙে “
এম.জাকারিয়া আহমেদ