তান্ত্রিক সিঙ্ঘিয়া এবং রাজকন্যা রত্নাবতীর বহু চর্চিত প্রেমের গল্প ভানগড় কেল্লার মূল আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু । সবার কৌতূহল স্থানীয়দের মুখে প্রচালিত কথাগুলি কি সত্য না কি অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে এই কেল্লার আড়ালে । রাজকুমারী রত্নাবতীর প্রেমে পাগল হয়ে সিঙ্ঘিয়া তান্ত্রিক পাথরের চাঁই এর আঘাতে প্রাণ ত্যাগ করেন । গল্পটি এই রকম – রত্নাবতী ছিলেন পরম সুন্দরী , বুদ্ধিমতী এবং মিশুকে । তাঁর এই গুণমুগ্ধ আচরণে সবাই তাঁকে খুব ভালোবাসতো ।
কেল্লার কাছাকাছি থাকতেন তন্ত্র সাধক সিঙ্ঘিয়া ,নানা রকম যোগ সূত্রে ভানগড় কেল্লায় যাতায়াত ছিল তন্ত্র সাধকের । কেল্লায় রাজকন্যা রত্নাবতীকে দেখা মাত্র তান্ত্রিক এর মাথায় প্রবেশ করলো অমর প্রেমের কল্প কাহিনী । ঘুম , খাওয়া নাওয়া উবে গেল তান্ত্রিক এর জীবন থেকে , এখন তার একটাই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ালো , কোনো ভাবে রাজকন্যাকে বিবাহ করতে হবে ।
এসব খবর জানতো না কেউ , এমন কি রাজকন্যার কাছে কখনো এই সব কথা এসে পৌঁছায়নি । ফলে সম্পূর্ণ ঘটনাটি এক অদৃশ্য বাতাসে বিলীন ছিল । তান্ত্রিক এর মনের খবর সাধারণ মানুষ আগেভাগে জানতে পারে না ।
কয়েকজন দাসী এবং সখীদের নিয়ে রাজকন্যা রত্নাবতী সুগন্ধী কেনার জন্য স্থানীয় হাটে গেলেন , এই হাটে প্রায় তিনি আসেন , নানা ধরণের সুগন্ধী কেনা ছিল তাঁর শখ , সে যে খুব সাজতে ভালোবাসতো , এই সকল খবর আগেভাগে জোগাড় করে রেখেছিলেন সিঙ্ঘিয়া তান্ত্রিক , তাই একেবারে সময় নষ্ট না করে তন্ত্রের দ্বারা সুগন্ধী বশীকরণ মন্ত্র তৈরী করলেন , এই মন্ত্রটি সুগন্ধী পাত্রের ভিতর মিশিয়ে রাজকন্যা রত্নাবতীর হাতে জোর করে ধরিয়ে দিলেন ।
বুদ্ধিমতী রাজকন্যা উপস্থিত বুদ্ধির কৌশলে উপলিব্ধ করতে পারলেন আসন্ন বিপদের গভীরতা , তাই অভয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন সে সুগন্ধী পাত্রখানি । একটি বিশাল পাথরের চাঁই এ গিয়ে পড়লো সুগন্ধী ,রাজকন্যার বদলে সে পাথরখানি বশীভূত হল , তান্ত্রিক হকচকিয়ে চিৎকার করে উঠলেন , পাথরটি ধেয়ে এল সিঙ্ঘিয়া তান্ত্রিক এর দিকে , যে হেতু বশীকরণ মন্ত্রে উল্লেখ ছিল যে এই সুগন্ধী শরীরে ব্যবহার করবে – সে দ্রুত তান্ত্রিক এর কাছে ছুটে আসবে ।
তাই পাথরের ক্ষেত্রে একই নিয়ম ঘটলো , তান্ত্রিক বিশাল পাথরে ধাক্কায় প্রাণ হারালেন , মৃত্যেুর আগে তান্ত্রিক অভিশাপ দিল , রাজকন্যার বংশের সমস্ত আত্মীয়স্বজন অপঘাতে মারা যাবে । হ্যাঁ সত্যি তাই হল – যেমনটি তান্ত্রিক চেয়েছিল, মারা গেল সবাই আজবগড়ের সৈন্যদের আক্রমণে । এখনো নাকি রাজকন্যা রত্নাবতীর আত্মা এবং সিঙ্ঘিয়া তান্ত্রিক এর প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়ায় ভানগড় কেল্লায় ।