একটি কাল্পনিক গল্পের অলৌকিক প্লট – নিমাই দেব

তান্ত্রিক  সিঙ্ঘিয়া এবং রাজকন্যা রত্নাবতীর বহু চর্চিত প্রেমের গল্প  ভানগড় কেল্লার মূল আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু । সবার কৌতূহল স্থানীয়দের মুখে প্রচালিত কথাগুলি কি সত্য না কি অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে এই কেল্লার আড়ালে । রাজকুমারী রত্নাবতীর প্রেমে পাগল হয়ে সিঙ্ঘিয়া তান্ত্রিক পাথরের  চাঁই এর আঘাতে প্রাণ ত্যাগ করেন ।  গল্পটি এই রকম – রত্নাবতী ছিলেন পরম সুন্দরী , বুদ্ধিমতী এবং মিশুকে । তাঁর এই গুণমুগ্ধ আচরণে সবাই তাঁকে খুব ভালোবাসতো ।

 কেল্লার কাছাকাছি থাকতেন  তন্ত্র সাধক সিঙ্ঘিয়া ,নানা রকম  যোগ সূত্রে ভানগড় কেল্লায় যাতায়াত ছিল তন্ত্র সাধকের । কেল্লায় রাজকন্যা রত্নাবতীকে দেখা মাত্র  তান্ত্রিক এর মাথায় প্রবেশ করলো  অমর প্রেমের কল্প কাহিনী । ঘুম , খাওয়া নাওয়া উবে গেল তান্ত্রিক এর জীবন থেকে , এখন তার একটাই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ালো  , কোনো ভাবে রাজকন্যাকে বিবাহ করতে হবে । 

এসব খবর জানতো না কেউ , এমন কি  রাজকন্যার কাছে কখনো এই সব কথা এসে    পৌঁছায়নি । ফলে সম্পূর্ণ ঘটনাটি এক অদৃশ্য বাতাসে বিলীন ছিল । তান্ত্রিক এর মনের খবর  সাধারণ মানুষ আগেভাগে জানতে পারে না । 

কয়েকজন দাসী এবং সখীদের নিয়ে রাজকন্যা রত্নাবতী সুগন্ধী কেনার জন্য স্থানীয় হাটে গেলেন , এই হাটে প্রায় তিনি আসেন , নানা ধরণের সুগন্ধী কেনা ছিল তাঁর শখ , সে যে খুব সাজতে ভালোবাসতো ,  এই সকল খবর আগেভাগে জোগাড় করে রেখেছিলেন সিঙ্ঘিয়া তান্ত্রিক , তাই একেবারে  সময় নষ্ট না করে  তন্ত্রের দ্বারা সুগন্ধী বশীকরণ মন্ত্র  তৈরী করলেন , এই মন্ত্রটি সুগন্ধী পাত্রের  ভিতর মিশিয়ে রাজকন্যা রত্নাবতীর হাতে জোর করে ধরিয়ে দিলেন । 

বুদ্ধিমতী রাজকন্যা উপস্থিত বুদ্ধির  কৌশলে উপলিব্ধ করতে পারলেন আসন্ন বিপদের গভীরতা , তাই অভয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন সে সুগন্ধী পাত্রখানি । একটি বিশাল পাথরের চাঁই এ গিয়ে  পড়লো সুগন্ধী ,রাজকন্যার বদলে সে পাথরখানি বশীভূত হল , তান্ত্রিক হকচকিয়ে চিৎকার করে উঠলেন , পাথরটি ধেয়ে এল সিঙ্ঘিয়া তান্ত্রিক এর দিকে , যে হেতু বশীকরণ মন্ত্রে উল্লেখ ছিল যে এই সুগন্ধী শরীরে ব্যবহার করবে – সে দ্রুত তান্ত্রিক এর কাছে  ছুটে আসবে । 

তাই পাথরের ক্ষেত্রে একই নিয়ম ঘটলো , তান্ত্রিক বিশাল পাথরে ধাক্কায় প্রাণ হারালেন , মৃত্যেুর আগে তান্ত্রিক অভিশাপ দিল , রাজকন্যার বংশের সমস্ত আত্মীয়স্বজন অপঘাতে মারা যাবে । হ্যাঁ সত্যি তাই হল – যেমনটি তান্ত্রিক চেয়েছিল, মারা গেল সবাই আজবগড়ের সৈন্যদের আক্রমণে । এখনো নাকি  রাজকন্যা রত্নাবতীর আত্মা এবং  সিঙ্ঘিয়া তান্ত্রিক এর প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়ায় ভানগড় কেল্লায় ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *