উরাঙ্গ মেদান জাহাজ থেকে আচমকা একটা বিপদ সংকেত এসে পৌঁছল— সমস্ত নাবিক, অফিসার এবং ক্যাপ্টেন মারা গেছেন। এখন জাহাজের মধ্যে মনে হয় আমি একাই বেঁচে আছি।
— কেন? কী হয়েছে?
ব্রিটিশ বা ওলন্দাজ রেডিও স্টেশনগুলোর একটাতেও এই প্রশ্নের কোনও উত্তর এসে পৌঁছল না। স্তব্ধ হয়ে গেল রেডিওটি। সবাই মিলে চেষ্টা করতে লাগলেন যোগাযোগের। কিন্তু কিছুতেই সম্ভব হল না।
অথচ আবহাওয়া তখন একদম পরিষ্কার। আকাশেও মেঘ নেই। উৎকণ্ঠা নিয়ে সবাই যখন ভাবছেন কী করা যায়, ঠিক কখনই ভেসে এল সেই রেডিও অপারেটরের কণ্ঠস্বর— আমি মারা যাচ্ছি।
সঙ্গে সঙ্গে শোরগোল পড়ে গেল চারিদিকে। সাজ সাজ রব। ছুটে গেলেন উদ্ধারকারী দল। জাহাজের ভিতরে ঢুকে তাঁরা দেখলেন, সবাই মরে পড়ে আছেন। যিনি যে-অবস্থায় ছিলেন, ঠিক সেই অবস্থায়। একজনও জীবিত নেই। মৃতদের মুখে ভয়াবহ আতঙ্কের ছাপ। চোখগুলো কোটর থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসার জোগাড়। শরীরের
লোমগুলো শজারুর কাঁটার মতো
খাড়া হয়ে আছে। অথচ আশ্চর্য! তাঁদের কারও শরীরেই একটুও আঘাতের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেল না। জিনিসপত্র যেটা যেখানে থাকার কথা, ঠিক সেই ভাবেই পড়ে আছে। বিন্দুমাত্র নড়চড় হয়নি।
অথচ সমুদ্র তখন একদম শান্তই ছিল। তা হলে কেন এমন হল? এই ঘটনার পিছনে কী থাকতে পারে? অনেক অনুসন্ধান করেও এর কোনও কিনারা পাওয়া যায়নি। হয়তো পাওয়াও যাবে না আর কোনও দিন।
এই ঘটনাটি ঘটেছিল ভারত স্বাধীন হওয়ার মাত্র ছ’মাস পরে। উনিশশো আটচল্লিশ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
জায়গাটা হল আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম জলভাগের তিন-তিনটে দ্বীপ— বার্মুদা, পোয়ের্তোরিকা আর ফ্লোরিডার মধ্যে একটি কাল্পনিক রেখা টানলে যে ত্রিকোণের সৃষ্টি হয়, সেই ত্রিকোণে। যার পোশাকি নাম— বার্মুদা ট্রাঙ্গেল।
জায়গাটির নাম বার্মুডা ট্রাঙ্গেল হলেও কেউ কেউ আবার এটার নাম দিয়েছেন— শয়তানের ত্রিকোণ, ফাঁদ ত্রিকোণ, নিখোঁজ ত্রিকোণ বা মৃত্যুর ত্রিকোণ।
বিমান চালক বা জাহাজের ক্যাপ্টেনদের কাছে এটা আবার ডেভিলস ট্রাঙ্গেল, লিম্বো অব দ্য লস্ট, ভুসু সি, টুইটাইট জোন নামেই বেশি খ্যাত।
এটার এ রকম নামকরণের পিছনে রয়েছে কিছু ভুতুড়ে কাণ্ডকারখানা এবং কিছু কাকতালীয় ঘটনা। সেগুলো যে কী করে ঘটে, কেন ঘটে, কিছুই বোঝা যায় না।
ওই জায়গাটার মধ্যে যখনই কোনও জাহাজ গিয়ে পড়ে কিংবা ওই জায়গার উপর দিয়ে যখন কোনও বিমান উড়ে যায় অথবা জলের গভীর তলা দিয়ে যায় কোনও ডুবো জাহাজ, তখনই তা উধাও হয়ে যায়। নয়তো ঘটে যায় কোনও ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা।
তবে ওই সীমানার মধ্যে পড়লে সবার ভাগ্যেই যে এমনটা ঘটে, তা কিন্তু নয়। তবে কারও কারও তো ঘটেই। সেটাই হয়েছে আরও সন্দেহের কারণ, কে বা কারা বেছে বেছে মাঝসমুদ্র থেকে উধাও করে দেয় ওগুলো!
এর কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওগুলো যে কেন হয়, কেউ কিচ্ছু বলতে পারে না। এই লোমহর্ষক ঘটনা নিয়ে কম কাহিনি লেখা হয়নি। সেই কাহিনি পড়লে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।
না, শুধু উরাঙ্গ মেদানই নয়, এই রকম ভাবেই নিখোঁজ হয়ে গেছে অজস্র বড় বড় জাহাজ, ডুবোজাহাজ এবং বিমান। যেগুলোর হদিশ হাজার অনুসন্ধান চালিয়েও আর পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি ধ্বংসাবশেষের বিন্দুমাত্র চিহ্নও। আর কোনও দিন পাওয়াও যাবে না নিশ্চয়ই।
তাই এই বার্মুডা ট্রাঙ্গেল জায়গাটি আজও সবার কাছে একটি অদ্ভুতুড়ে রহস্যজনক জায়গা হয়েই রয়ে গেছে।