এই কালে – অভিষেক সাহা

” বাবা, রাবণের দশটা মাথা ,মা দুর্গার দশটা হাত আর আমাদের একটা মাথা দু’টো হাত কেনও ?” ক্লাস সিক্সে পড়া পিকলু ওর বাবা সায়নকে জিজ্ঞেস করল।

সায়ন ভাগ্যিস খাটে বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিল, দাঁড়িয়ে থাকলে নির্ঘাৎ মাটিতে  পড়ে যেত। প্রশ্ন শুনে সায়ন কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেল। মনেমনে ওর বউ পিয়ালীকে গালি দিল । ছেলেটা হয়েছে এক্কেবারে পিয়ালীর মত। সবসময় অবান্তর  বিষয় চিন্তা করে আর ওকে বিপদে ফেলে। বিয়ের আগে একদিন পিয়ালী ওকে ঠিক এরকমই প্রশ্ন  করেছিল ” এই তুমি চারটে টায়ার কিনতে পারবে বাবা বলেছেন তবে বাকি গাড়িটা দেবেন!” প্রশ্ন শুনে রেগে গিয়ে সায়ন বলেছিল স্টেপনিটাকী শাশুড়ি মা দেবেন! এরপরও যে বিয়ে হয়েছে ভাবলেই আনন্দে  এখনও সায়নের শীতকালে বরফ জলে চান করতে ইচ্ছা করে !

“কী হল বল ,চুপ করে আছ কেন ? মা হলে এতক্ষণে ঠিক বলে দিত!”পিকলু তাগাদা দিল ।

সে তো বটেই তোমার মা তো সবজান্তা,মনে মনে বলল সায়ন । মুখে বলল ” আগে লোক কম ছিল জায়গা বেশি ছিল তাই দশটা মাথা ,দশটা হাত থাকলে অসুবিধা হত না।” 

” ধ্যাৎ , কিছুই বুঝতে পারলাম না ” পিকলু বিরক্ত হল।

” এই ধর না আগে তুই কীসে গেম খেলতি! ল্যাপটপে।কত বড় ছিল। তোকে বসেই খেলতে হত। আর এখন দেখ স্মার্টফোনে তুই শুয়েশুয়েও খেলতে পারিস। কত ছোট হয়ে গেছে।এবার বুঝতে পারলি ।” সায়ন বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করল।

বাবার কথা মন দিয়ে শুনে পিকলু কিছুক্ষণ চিন্তা করল , তারপর বলল” বুঝতে পেরেছি বাবা । আগে সব বড় ছিল এখন ছোট হয়ে গেছে।এই যেমন তুমি ছোটবেলায় কত বড় মাঠে  পাড়ার  বন্ধুদের নিয়ে ফুটবল-ক্রিকেট খেলতে, আমি ছবিতে দেখেছি।আর এখন আমি ঘরে বসে স্মার্টফোনে গেম খেলি আর স্কুলের  বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাট করি। আমার তো পাড়ায় একটা মাঠও নেই, একটা বন্ধুও নেই !”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *