ছোটগল্প
#ঋণ
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
সুফিয়ার ঘর থেকে বান্দরগুলো বেরিয়ে গেল একটা একটা করে ।ম্যালাদিনের খায়েশ আজ একশো একশ ।সুইন্না মিয়ার লগে কথা বললে এখন থেকে বুঝে শুনে বলতে হবে।না হলে বান্দরগুলো বারবার আসবে ।বারবার সুফিয়ার বিছানা রক্তাক্ত করে যাবে ।
বিরক্ত করতে চায়নি সুইন্না।কারন সুফিয়ার ঘরে চারটি ভোট।
যত গোলমালের সূত্রপাত হয়েছিল সুফিয়ার স্বামীর একটিমাত্র কথা–কামডা বেশি ভালো করলানা।
এর জবাবে এধরনের ভূমিকা সুইন্না মিয়ার সাগরেদরা একশ একশ ফিরিয়ে দিতে সচেষ্ট ।
দেড় ঠ্যাঙ্গের সাগরেদ যার কিনা অর্ধেকটা পা খেয়েছে জয়া এক্সপ্রেস ।যাত্রীদের পকেট কেটে লাফ দিয়ে চলন্ত আরেকটা কম্পার্টমেন্টে পালাতে চেয়েছিল।কিন্তু লাফের পাল্লাটা পরিমাপ করতে পারেনি ।পরবর্তীতে হামদু ডাক্তার কেবল টাকার জন্যই পিছিয়ে গেল ।
দেড় ঠ্যাঙ নিয়ে ফুটপাতে, বাজারে, ইস্টিশনে ,জুমাবারে পড়ে থেকেছে ।ইচ্ছে করেই পা’টা অপারেশন করেনি ।ইনফেকশন আর ইনফেকশন ।
এখন কামাই ভালো ।সুইন্না মিয়ার দলের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুফল মিলেছে ।টাকা, আনন্দ, সুখের দিন ফিরেছে ।দিনভর নানা রকম সমস্যার সমাধান করতে হয়।মানুষের কত যে সমস্যার দেন-দরবার ।
রাতে ব্যাগ ভর্তি বাজার করতে গিয়েও সুবিধা ।কারো কাছে দামদর করার আগেই ব্যাগে ঢুকে পড়ে মাছ,আনাজ, ফলমূল ।
আজকাল দেড় ঠ্যাঙ্গের সাগরেদ মনে মনে নিশিচারণেও পুলকিত হবার পথ খুঁজে পায়।সুফিয়ার স্বামীর প্যারালাইজড জীবনের সুযোগ নিয়ে সাগরেদ সুফিয়ার সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর ইচ্ছায় মরিয়া ।
আজ একরকম জোর করেই ঢুকে পড়েছে ।সুফিয়ার স্বামীর হাতে লাঠি উঠেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বুক চাপড়ানো ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা ।
সুফিয়ার মুখে বান্দর শব্দের মধ্যে দারুণ একটা অনুভূতি কাজ করে ।যাবার সময় সাগরেদ আবারো আসবে বলে জানিয়ে যায়।
পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে সুফিয়ার আজকালকার সাথী কুকুরটা ।যার নাম –ঝিঙা।কদিন আগেই সুফিয়ার পিছু পিছু এসেছে ।আর যায়নি ।একটিমাত্র টোস্ট বিস্কুটের প্রতিদান হয়তো দিতে চেয়েছিল ঝিঙা।
মুখের লালা ,কম্পমান গোলাপী জিহ্বা, আগ্রাসী দাঁতের দৃশ্যটা বান্দরগুলোকে কাঁপিয়ে তুলেছে ।
হুসহাস,হুটহাট,লাঠিচার্জ সব ফেইল।
ঝাঁপিয়ে পড়ল ঝিঙা।
শেষ পর্যন্ত বান্দরগুলোকে বাঁচিয়েই দিলো সুফিয়া।ঝিঙাকে আদর করে ডাকটা দিতেই হোলো।না হলে ঝিঙার দাঁত, নখরের খেলা দেখতে দেখতে পেরিয়ে যেত সময়।সুফিয়ার পক্ষে সম্ভব না এই দৃশ্যটা দ্যাখে।
রাস্তায় বাজারে সুফিয়াকে হাঁটতেই হয়।ঝিঙা সঙ্গ দেয়।
রাতেও সারা বাড়ি পাহারা দেয়।
সুফিয়ার টোস্ট বিস্কুটের ঋণ শোধ করার তাগিদেই হয়তো ।
বান্দরগুলো এলাকাই ছেড়ে দিয়েছে ।
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ