বিনোদ সকাল থেকেই মুগ্ধ নয়নে দেখছিল পাড়ার ছেলেমেয়েদের রং খেলার দৃশ্য । কি অপূর্ব সেই দৃশ্য ।রং বেরঙের হাস্যজ্জ্বল মুখ গুলো যেন মনে হচ্ছিল স্বর্গের কোন দূত। বিনোদ অপলক নয়নে দেখতে দেখতে নিজেকে হারিয়ে ফেলে , মায়ামহ এক সৌন্দয়্যের জগতে। হঠাৎ বিনোদ চমকে উঠল চার বছরে ভাইপোর কথায়—
‘দেখো কাকু রঙে মানুষ চেনা যায় না’।
ভাইপোর কথায় বিনোদ মুখ থুপরে পড়ল পাহাড় ভেঙে। তাকেই কি চিনতে পেরেছিল মেয়েরা ! রং কি তার মুখেও ছিল না! তার চোখ মুখ পাছা লিঙ্গ , সারা বছরই কি ছিলনা রঙে ভর্তি ।
সুমনা-দীপিকা-গার্গী এদের তো কোন দোষই ছিল না । তবও তো অবলীলায় ওদের… …
আর নান্দিতা ! ভালোবাসার আর এক নাম । কি না করেছে তার জন্য । বি এড এর সমস্ত খরচা জুগিয়েছে নিজ হাতে। কোনদিন বিনোদের জন্য খরচা করতে এত টুকু কার্পণ্য করেনি । যখন যা দরকার পড়েছে নিরবে দিয়েছে হাত বাড়িয়ে । আর তার বিনিময়ে বিনোদের যখন স্বার্থ শেষ, তুচ্ছ অজুহাতে ছুড়ে ফেলেদিল নন্দিতাকে । অসহয় নন্দিতা অপমান সহ্য করতে না পেরে……।
সহসা অতীতের কালো স্মৃতি গুলো বিনোদের মুখটা নিমেশে মলিন বিবর্ণ করে দিল । সত্যি ! কি ভাবে তখন একের পর এক মেয়েকে নিয়ে, হাতের মুঠোয় করেছে খেলা। তাদের রূপ রস যৌবন নিংরে অবহেলায় দিয়েছিল ঠেলে। আর তারই অপরাধে বিনোদকে যে এভাবে মাসুল দিতে হবে জীবনের বাকি বছর গুলো , তা সে স্বপ্নেও ভাবে নি। সে ভেবেছিল ইস্পিতাও হইত অন্য সব মেয়ের মত তারই প্রেমে পাগল। কিন্তু সে যে তার দিদি নন্দিতার অপমানের প্রতিশোধ নিতে এ ভাবে ধরা দেবে, তা ছিল তার কল্পনারও অতীত।
বিনোদ ভেবেছিল ইস্পিতাকে ভোগ করে , আবার অন্য কোথায় অন্য কোন স্থানে। কিন্তু এভাবে যে মাঝপথে…………।
বিনোদ শিউরে ওঠে সেদিনকার কথাটা ভেবে ।নিমেশে তার সারা শরীরে বিদ্যুতের মত শিহরণ বয়ে গেল । কি সাংঘাতিক ছিল সেদিন ! ভেবেছিল আজি সিনেমা হলের ডি.সি. তে ইস্পিতার সর্বশ্য লুঠ করে…। কিন্তু ইস্পিতাকে স্পর্শ করার আগেই হঠাৎ বিনোদ যন্ত্রণায় আত্মনাদ করে ওঠে। মুহুতেই তার সর্বস্ব অন্ধকার । সেই যন্ত্রণার মধ্য থেকে বিনোদ শুনতে পেল ইস্পিতার প্রতিশোধ মাখানো এক বজ্র গম্ভীর গলা— ‘তোমার এই সুন্দর মুখের জন্য এত অহংকার ,এবার দেখো তার মজা, এটা আমার দিদির প্রতিশোধ’।
না , তার পর আর কিছুই মনে ছিলনা বিনোদের। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েছিল সিনেমা হলের ডি সির মধ্যে। জ্ঞান ফিরেছিল একে বারে হসপিটালের বেড রুমে । তখন আর তার বুঝতে বাকি ছিলনা । নিজের দগ দগে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেছিল নিজের কলঙ্কিত ইতিহাস । যে ইতিহাসে সে আজ লজ্জিত ।
হঠাৎ পাড়ার ছেলে মেয়েদের কলহাস্যে তার ভাবনার বিচ্চুতি ঘটল । রং মাখাতে এসেছে তারা , বিনোদ কোন বাঁধা দিল না । তার নকল রং মুছে গেছে মুখে, আজ তাকে রং মাখতেই হবে , আজ দেখবে আসল রং মাখার স্বাদ ।