প্রবন্ধ
নোবেল বিজয়ী আলবের কাম্যু
শংকর ব্রহ্ম
#চতুর্থ_পর্ব
কাম্যু তাঁর রচনাগুলোকে তিনটে চক্রে ভাগ করেন। প্রতিটি চক্রে একটি উপন্যাস, একটি প্রবন্ধ এবং একটি নাটক রয়েছে। প্রথমটি হল অলীক চক্র যার মধ্যে ছিল ল’এট্রেঞ্জার, লে মিথে ডি সিসিফি এবং ক্যালিগুলা। দ্বিতীয়টি রচিত হয়েছিল বিদ্রোহ নিয়ে যার মধ্যে ছিল লে পেস্তে (দি প্লেগ), ল’হোম্মে রিভোল্টে (দি রেবেল), এবং লেস জাস্টেস (দি জাস্ট অ্যাসাসিনস্)। তৃতীয়টি ছিল প্রেমসংক্রান্ত; এর মধ্যে ছিল নেমেসিস। প্রতিটা চক্রই ছিল এক-একটি বিষয় নিয়ে পরীক্ষা যার মধ্যে পৌত্তলিক বিশ্বাস এবং বাইবেলের প্রসঙ্গ ব্যবহার করা হয়েছিল।
প্রথম চক্রের বইগুলো ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৪৪ সালের মধ্যে রচিত হয়েছিল, কিন্তু এর বিষয়গুলো নির্ধারণ করা হয়েছিল তার আগেই, অন্তত ১৯৩৬ সালের মধ্যে। এই চক্রের দ্বারা কাম্যু মানব পরিস্থিতির ওপর একটা প্রশ্ন রেখে যেতে চেয়েছেন, বিশ্বকে একটা অলীক স্থান বলে তিনি আলোচনা করেছেন, এবং সর্বগ্রাসীতার ফলাফলের সম্বন্ধে মানবজাতিকে তিনি সতর্ক করে যেতে চেয়েছেন।
১৯৪২ সালের শেষ মাসগুলোতে তিনি যখন আলজেরিয়ায় ছিলেন তখন তাঁর সাহিত্যকর্মের দ্বিতীয় চক্র শুরু হয়; সেসময় জার্মানরা উত্তর আফ্রিকায় পৌঁছেছিল। দ্বিতীয় চক্রে কাম্যু একজন বৈপ্লবিক মানবতাবাদী হিসেবে প্রমিথিউসকে দেখিয়েছিলেন এবং এইভাবে তিনি বিপ্লব আর বিদ্রোহের মধ্যে তফাৎ বুঝিয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন ধরণের বিদ্রোহের পটভূমি নিয়ে আলোচনা করেছেন, এর অধ্যাত্মবিদ্যা, রাজনীতির সঙ্গে এর সম্পর্ক, এবং আধুনিকতা, ঐতিহাসিকতা এবং নিরীশ্বরবাদীতার নিরীখে একে যাচাই করেছেন।
নোবেল পুরস্কার লাভের পর, তাঁর মধ্যপন্থী মতাদর্শগুলোকে একত্রিত করে, সেগুলোকে ব্যাখ্যা করে প্রকাশ করলেন – ‘অ্যাকট্যুলেস III : ক্রোনিক আলজেরিয়েনে ১৯৩৯ – ১৯৫৮ (আলজেরিয়ান ক্রনিকল্স)। তারপর তাঁর মানসিক ভার অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় তিনি আলজেরিয় যুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনলেন। তিনি এরপর থিয়েটার এবং তৃতীয় চক্রের দিকে মনোনিবেশ করলেন; এই তৃতীয় চক্র ছিল প্রেমসংক্রান্ত এবং দেবী নেমেসিসকে নিয়ে রচিত।
কাম্যুর দুটি সাহিত্যকর্ম মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়। প্রথমটির নাম লা মার্ট হেউরেউস (আ হ্যাপি ডেথ) (১৯৭০) যার প্রধান চরিত্র ছিল প্যাট্রিস মেরসল্ট, যার সাথে দ্য স্ট্রেঞ্জারের মেউরসল্টের তুলনা করা যেতে পারে। দুটি বইয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। দ্বিতীয়টির নাম লা প্রিমিয়ের হোম্মে (দি ফার্স্ট পার্সন) (১৯৯৫) – একটি অসমাপ্ত উপন্যাস যা কাম্যু লেখার কালেই মারা যান। এটা ছিল তাঁর আলজেরিয়ার ছোটবেলাকার দিনগুলো নিয়ে রচিত একটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস এবং ১৯৯৪ সালে এর প্রকাশের সাথে সাথে ঔপনিবেশিকতার প্রতি কাম্যুর ঔদাসীন্যের দাবী নিয়ে একটি ব্যাপক পুনর্বিবেচনা শুরু হয়।
জ্যঁর এবং চক্র অনুসারে কাম্যুর সাহিত্যকর্ম, ম্যাথিউ শার্পের মতানুযায়ী সে’বছর পৌত্তলিক বিশ্বাস বাইবেল প্রসঙ্গ উপন্যাস নাটক
১৯৩৭-৪২ সিসিফাস বিচ্ছিন্নতা, নির্বাসন অপরিচিত (The Stranger) ক্যালিগুলা,
দি মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং (লে মালেনটেন্ডু)
১৯৪৩-৫২ প্রমেথিউস বিদ্রোহ দি প্লেগ (লা পেস্টে) দি স্টেজ অফ সিজ (ল’এটাট ডি সিজ)
দ্য জাস্ট (লেস জাস্টেস)
১৯৫২-৫৮ অপরাধ, পতন; নির্বাসন এবং রাজত্ব। জন দি ব্যাপটিস্ট, খ্রিস্ট।
দি ফল (লা চ্যুট) পজেজড (দস্তয়েভস্কি) পুনর্নিমাণ। ফকনারের রিক্যুয়েম ফর আ নান
১৯৫৮– নেমেসিস রাজত্ব দি ফার্স্ট ম্যান (লে প্রিমিয়ের হোম্মে)।
আলবের কাম্যুর কাজগুলোর মধ্যে –
উপন্যাস
১). আ হ্যাপি ডেথ (লা মর্ট হেউরেউস) (১৯৩৬-৩৮এ লিখিত, ১৯৭১সালে প্রকাশিত)
২). দি স্ট্রেঞ্জার (ল’এট্রেঞ্জার, দি আউটসাইডার হিসেবেও অনুদিত। “ল’এট্রেঞ্জারের বিকল্প অর্থ হল বিদেশী) (১৯৪২)
৩). দি প্লেগ (লা পেস্টে) (১৯৪৭)
৪). দি ফল (লা চ্যুট) (১৯৫৬)
৫). দি ফার্স্ট ম্যান (লে প্রিমিয়ার হোম্মে) (অসমাপ্ত, ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত)।
ছোটগল্প
১). এক্সাইল অ্যান্ড দি কিংডম (ল’এক্সিল এট লে রয়মে) (সংকলন, ১৯৫৭), নিম্নলিখিত ছোটগল্পগুলো এর মধ্যে আছেঃ
“দি অ্যাডালটারাস ওম্যান” (লা ফেম্মে অ্যাডালটিয়ার)
“দি রেনেগেড অর অ্যা কনফিউজড স্পিরিট” (লে রেনিগাট ওয়ু আন এস্প্রিট কনফুস)
“দি সাইলেন্ট মেন” (লেস ম্যুয়েটস্)
“দি গেস্ট” (ল’হোটে)
“জোনাস, অর দি আর্টিস্ট অ্যাট ওয়ার্ক” (জোনাস, ওয়ু ল’আরটিস্টে আউ ট্রাভাইল)
“দি গ্রোয়িং স্টোন” (লা পিয়ের ক্যুই পৌসসে)।
গবেষণামূলক প্রবন্ধ
১). ক্রিশ্চিয়ান মেটাফিজিক্স অ্যান্ড নিওপ্লেটোনিজম (মেটাফিজিক ক্রেটিয়েন্নে এট নিওপ্লেটোনিসমে) (১৯৩৫) – এই প্রবন্ধ লিখেই কাম্যু ফ্রান্সের উচ্চতর স্কুলে পড়াবার সুযোগ পেয়েছিলেন।
নন-ফিকশন বই
১). বেটুয়েক্সট অ্যান্ড বিট্যুইন (ল’এনভারস এট ল’এন্ড্রয়েট, দি রং সাইড অ্যান্ড দি রাইট সাইড নামেও অনুদিত) (সংকলন, ১৯৩৭)
২). ন্যুপশিয়ালস (নোসেস) (১৯৩৮)
দি মিথ অফ সিসিফাস (লে মিথ ডি সিসিফি) (১৯৪২)
৩). দি রেবেল (ল’হোম্মে রিভোল্টে) (১৯৫১)
আলজেরিয়ান ক্রনিকল্স্ (ক্রনিক্যুইস আলজেরিয়ানেস্) (১৯৫৮, এর প্রথম ইংরেজি অনুবাদটি প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে)।
৪). নোটবুকস্ ১৯৩৫ – ১৯৪২ (কার্নেটস্, মাই ১৯৩৫ – ফেব্রিয়ার ১৯৪২) (১৯৬২) সালে।
৫). নোটবুকস ১৯৪২ – ১৯৫১ (কার্নেটস II : জানভিয়ের ১৯৪২ – মার্স ১৯৫১) (১৯৬৫)
৬). আমেরিকান জার্নালস (জার্নক্স ডি ভয়েজ) (১৯৭৮)
৭). নোটবুকস ১৯৫১ – ১৯৫৯ (২০০৮)। কার্নেটস টোম III: মার্স ১৯৫১ – ডিসেম্বর ১৯৫৯ (১৯৮৯) হিসেবে প্রকাশিত
৮). করেসপণ্ডেস (১৯৪৪ – ১৯৫৯)। কাম্যুর কন্যা ক্যাথারিন কাম্যুর ভূমিকাসহ আলবের কাম্যু এবং মারিয়া কাসারেসের মধ্যেকার বার্তালাপ (২০১৭)।
নাটক
১). ক্যালিগুলা (১৯৪৫ সালে অনুষ্ঠিত, ১৯৩৮ সালে রচিত)
২). দি মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং (লে মালেন্টেন্ডু) (১৯৪৪)
৩). দি স্টেট অফ সিজ (ল’এটাট ডি সিজ্) (১৯৪৮)
৪). দি জাস্ট অ্যাসাসিনস (লেস জাস্টেস) (১৯৪৯)
৫). রিক্যুয়েম ফর আ নান (রিক্যুয়েম পোর উনে নোন, একই নামে রচিত উইলিয়াম ফকনারের উপন্যাস অবলম্বনে রচিত) (১৯৫৬)
৬). দি পজেজড্ (লেস পজিডিস, ফিওডোর দস্তয়েভস্কির উপন্যাস ডেমনস্ অবলম্বনে রচিত)।
প্রবন্ধ
১). দি ক্রাইসিস অফ ম্যান (কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া ভাষণ) (২৮শে মার্চ, ১৯৪৬)
২). নাইদার ভিক্টিমস্ নর এক্সেকিউশনারস্ (কোঁবা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধাবলী) (১৯৪৬)
৩). হোয়াই স্পেন? (ল’এটাট ডি সিজ নাটকটির জন্য লিখিত প্রবন্ধ) (১৯৪৮)
৪). সামার (ল’এটে) (১৯৫৪)
৫). রিফ্লেকশন্স অন দি গিলোটিন (রিফ্লেকশন্স সুর লা গিলোটিন) (বিবর্ধিত প্রবন্ধ, ১৯৫৭)।
৬). ক্রিয়েট ডেঞ্জারাসলি (বাস্তববাদ এবং শৈল্পিক সৃষ্টির ওপর রচিত প্রবন্ধ, সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত ভাষণ) (১৯৫৭)।
কাম্যু একজন নীতিবাদী ছিলেন৷ তিনি মনে করতেন রাজনীতি নৈতিকতার দ্বারাই পরিচালিত হবে। যদিও নৈতিকতা যে পরিবর্তনশীল তা তিনি অস্বীকার করেননি, তবে চিরাচরিত মার্ক্সীয় মতানুযায়ী যে বলা হয় ইতিহাসই নৈতিকতাকে নির্ধারণ করে তা তিনি নাকচ করতেন।
কাম্যু স্বৈরাচারী কমিউনিজমেরও কঠোর সমালোচক ছিলেন, বিশেষত সোভিয়েত শাসনকে তিনি সর্বগ্রাসী বলে মনে করতেন। সোভিয়েত ক্ষমাপ্রার্থীদের এবং তাদের “পূর্ণ দাসত্বকে স্বাধীনতা আখ্যা দেওয়াকে” তিনি ভর্ৎসনা করেন।স্বাধীনতাপন্থী সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে তিনি বলতেন, সোভিয়েত রাশিয়া যেমন সমাজতান্ত্রিক নয়, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও স্বাধীন নয়। সোভিয়েত রাশিয়ার একজন কড়া সমালোচক হওয়ায় বামপন্থী রাজনীতির অনেকের সাথেই বিবাদ বাধে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল তাঁর বন্ধু জ্যঁ পল সার্ত্রের বিবাদ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সে জার্মান হানাদাররা দখল করতে এলে তিনি ফ্রেঞ্চ রেজিস্ট্যান্সে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এখানে কাম্যু রেজিস্ট্যান্সের পত্রিকা কোঁবার জন্য লেখেন এবং এই পত্রিকা তিনি সম্পাদনাও করেন। জার্মান দখলদারদের সাথে ফরাসীদের সহযোগিতার ঘটনায় কাম্যু লেখেনঃ “ এখন সাহসই হল একমাত্র নৈতিক মূল্যবোধ; যারা জনগণের নামে ভাষণ দেবার ভান করে সেইসকল পুতুল এবং বাচালদের বিচারের জন্য এই মূল্যবোধকে ব্যবহার করতে হবে।” ফ্রান্সের মুক্তির পর, কাম্যু লিখেছিলেন, “এই দেশ একজন ট্যালিরান্ডকে চায় না, চায় একজন সেইন্ট-জাস্টকে।” যুদ্ধপরবর্তী রক্তাক্ত বিচারসভার বাস্তবতা তাঁর মনকে শীঘ্রই বদলে দিল। কাম্যু জনসমক্ষেই তাঁর কথা ফিরিয়ে নেন এবং এরপর থেকে আজীবন তিনি মৃত্যুদণ্ডের বিরোধীতা করে গেছেন।
কাম্যু ১৯৫০এর দশকে নৈরাষ্ট্রবাদীতার দিকে ঝুঁকেছিলেন, সেসময়ে এইরকম একটা হাওয়া উঠেছিল এবং কাম্যু মনে করতেন যে সোভিয়েত মডেল নীতিগতভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। কাম্যু যে কোন প্রকার শোষণ, কর্তৃত্ব এবং বৈভব, মনিবগিরি, রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং কেন্দ্রীয়করণের চূড়ান্ত বিরোধী ছিলেন। দর্শনের অধ্যাপক ডেভিড শেরম্যান কাম্যুকে একজন ট্রেড ইউনিয়নভিত্তিক নৈরাষ্ট্রবাদী বলে মনে করতেন। গ্রিম নিকোলসন কাম্যুকে একজন অস্তিত্ববাদী নৈরাষ্ট্রবাদী বলে মনে করতেন।
১৯৪৮ সালে নৈরাষ্ট্রবাদী আঁদ্রে প্রুধোঁ তাঁকে সার্কেল ডি এটুডিয়ানস্ আনার্কিস্টেসের (“অ্যানার্কিস্ট স্টুডেন্ট সার্কেল”) সভায় নৈরাষ্ট্রবাদী চিন্তার প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে প্রথম পরিচিত করান। কাম্যু বিভিন্ন ধরণের নৈরাষ্ট্রবাদী প্রকাশনী সংস্থার জন্য লিখেছিলেন, এর মধ্যে ছিল লে লিবারটেয়ার, লা রেভল্যুশন প্রোলেটারিয়েন্নে এবং সলিদারিদাদ ওবরেরা (“ওয়ার্কারস্ সলিডারিটি”), ট্রেড ইউনিয়নভিত্তিক নৈরাষ্ট্রবাদী সংগঠনের একটি শাখা কনফেডারেশন নাশিনল ডেল ট্রাবাজো (সিএনটি) (“ন্যাশানাল কনফেডারেশন অফ লেবার”)।
কাম্যু আলজেরিয় যুদ্ধের সময় (১৯৫৪ – ১৯৬২) নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেন। যদিও তিনি ন্যাশানাল লিবারেশন ফ্রন্টের (এফএলএন) হিংসার বিপক্ষে ছিলেন, তিনি ঔপনিবেশিক ফ্রান্সের অবিচার এবং নিষ্ঠুরতার ঘটনার সম্পর্কেও অবহিত ছিলেন। তিনি পিয়ের মেন্ডেসের ইউনিফায়েড সোশ্যালিস্ট পার্টির (পিএসইউ) এবং সংকটের সময় তাদের মোকাবিলার পথের প্রতি তাঁর সমর্থন ছিল – মেন্ডেস মীমাংসা করবার পক্ষপাতী ছিলেন। কাম্যু তাঁর মতানুসারী আলজেরিয় বিদ্রোহী আজিজ কেসাউসের সমর্থক ছিলেন। কাম্যু আলজেরিয়ার দুই যুযুধান দলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনবার জন্য সে দেশে ভ্রমণ করেন, কিন্তু সব ক’টি দলই তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।নোবেল পুরস্কার গ্রহণ চলাকালীন বক্তৃতায় তিনি আলজেরিয় জাতীয়তাবাদী দলের বিরুদ্ধে কথা বলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। যখন তাঁর মা এবং বিচারের মধ্যে দ্বিধায় তাঁকে পড়তে হয়, তাঁর উত্তর ছিলঃ – “আলজিয়ার্সের ট্রামপথে লোকেরা বোমা ফেলে রাখছে। ট্রামরাস্তা দিয়ে যাঁদের যেতে হচ্ছে, তার মধ্যে আমার মাও থাকতে পারে। যদি এটা বিচার হয়, তবে আমি আমার মা’কেই বেছে নেব।” ডেভিড শেরম্যানের মতানুযায়ী, কাম্যু সন্ত্রাসবাদ এবং নির্বিচার সহিংসতার মধ্যেকার ভুল বৈপরীত্য সম্বন্ধে আলোকপাত করে বলেন, এই ভ্রম কখনও কোন পরিস্থিতিতেই সুবিচারের পথ প্রশস্ত করতে পারে না। যদিও তাঁর এই বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপিত করা হয়।
“আমি চিরকালই সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করেছি, এবং আমি অবশ্যই আলজিয়ার্সের রাস্তায় যে সন্ত্রাস অন্ধভাবে ঘটে চলে এবং যা আমার মা এবং পরিবারকেও আঘাত করতে পারে, তার নিন্দা করি। আমি সুবিচারে বিশ্বাসী, কিন্তু আমি আমার মা’কে সেই সুবিচারের হাত থেকে রক্ষা করবো। কাম্যুর সমালোচকরা তাঁর এই ভুলভাবে উপস্থাপিত করা বক্তব্যকে তাঁর ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিক্রিয়ার ফল বলে দাগিয়ে দিয়েছেন।
আলজেরিয়ায় ফরাসী পিতামাতার সন্তান হিসেবে জন্মানোয়, কাম্যু ফ্রান্সের এবং আরব ও বর্বরদের মধ্যেকার প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবিদ্বেষের সাথে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু তিনি ধনী সম্প্রদায়ের অংশ ছিলেন না। তিনি ছোটবেলায় খুবই দারিদ্রের মধ্যে বাস করতেন, কিন্তু তিনি ফ্রান্সের নাগরিক ছিলেন বলে কিছু নাগরিক অধিকার ভোগ করতেন যেগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠ আরব এবং বর্বররা পেত না।
(ক্রমশঃ)
#তৃতীয়_পর্বের_কপিলিঙ্ক
https://www.facebook.com/groups/sahityapatrika/permalink/1106285523362021/