আরতি – অভিষেক সাহা

  ” তোমার কী বেরোতেই হবে ? না গেলে নয়!” বছর বাষট্টির শিবানী তার তিয়াত্তর বছরের স্বামী ভোলাকে জিজ্ঞেস করল।

দুর্গাপুজোর নবমীর সন্ধ্যা। মলমাসের কারণে পুজো এবার একমাস পিছিয়ে কার্তিক মাসে। দিন কয়েক আগেও সূর্যের প্রখর তেজ ছিল কিন্তু  দু’দিনের নিম্নচাপের বৃষ্টি সেই গরম উধাও করে ঘরে-বাইরে এসির মত হিমেল পরিবেশ এনেছে । সন্ধ্যা হলেই ঠান্ডা হাওয়া। রাতে পাখার  রেগুলেটার কততে  থাকবে তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে তর্কও শুরু হয়েছে।

” হ্যাঁ গো আজ শরীরটা বেশ আছে।চলো একবার ঘুরে আসি মন্ডপ থেকে। মায়ের আরতি দেখে আসি।” জোর দিয়ে বলল ভোলা।

শিবানী শিরায় শিরায় স্বামীকে চেনে। একবার বলেছে যখন, যাবেই। কথা না বাড়িয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করল। করোনার জন্য মন্ডপে ঢোকা যাবে না। দূর থেকেই দেখতে হবে । দু’জনে মাস্ক পড়ে, স্যানিটাইজার সঙ্গে নিয়ে পাড়ার পরিচিত রিক্সা ডেকে মন্ডপে পৌঁছে গেল। 

মন্ডপের ঠিক উল্টো দিকে ভিড় এড়িয়ে  দাঁড়াল ওরা , একটা কদম গাছের নিচে। পরিস্কার আরতি দেখা যাচ্ছে, ঢাক- কাঁসরের  শব্দ মনের মধ্যে খুশির ঢেউ তুলছে। ভোলার মুখে চওড়া হাসি। 

” এবার খুশি তো!” শিবানী  জানতে চাইল।

অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হওয়ায় কদম গাছটাকে ঠেকনা করে আর একটা হাত শিবানীর কাঁধে রেখে ভোলা বলল ” খুব খুশি। মনটা শান্ত হল। শোন না চারদিকে যা অবস্থা , মানুষের জীবনের কোনও ভরসা নেই, আমার শরীরও মাঝেমাঝে ভালো যায় না, সামনের বছর যদি আমি নাও  থাকি তুমি কিন্তু অবশ্যই আরতি দেখতে আসবে। এই কদমগাছটাকে ছুঁয়ে আরতি দেখবে। ভাববে আমি তোমার সঙ্গেই আছি। তাহলে সামনের বছরও আমরা একসাথে আরতি দেখতে পারব ! “

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *