আত্ম আলো পর্ব -১৪ – দেবদাস কুণ্ডু

[post-views]

আজ শনিবার। এল. আই. সি. অফিস থেকে ফিরছি। হার্ড কো মোড় পার করে ডানদিকে টার্ন নিয়েছি। একটা ছেলে আমার চলন্ত সাইকেলের হ্যান্ডেল চেপে ধরল। থামলো সাইকেল। আমি নামলাম। ছেলেটা সাইকেল নিয়ে এগিয়ে গেল। আমি পিছে পিছে। পুলিশ কিয়স্ক কাছে এসে জমা করল সাইকেল। সেখানে আরও সাইকেল রয়েছে।

আমাকে একটা কাগজ দিয়ে বলল, ‘থানায় ফাইন দিয়ে এখান থেকে সাইকেল ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে। আমি ততখনে বুঝে গেছি এটা নো সাইকেল জোন। কিন্তু কোথাও তা লেখা নেই। এতো বছর আসছি যাচ্ছি। কোনদিন ধরে নি। আজ হঠাৎ এটা নো সাইকেল জোন হয়ে গেল! এই সব ভাবতে ভাবতে চলে এলো থানায় শীতাংশু।

একটা লম্বা লাইন। সবার এক কেস। আশি টাকা দিয়ে ক্যাশমেমো নিয়ে ছুটছে সাইকেল ছাড়াতে। এবার শীতাংশুর পালা।
ক্লার্কটি বলল, ‘নাম বলুন।
নাম বলল শীতাংশু।
আশি টাকা দিন।
কেন দেবো?

মানে?
আমি তো কোন অন্যায় করিনি।
করেছেন। ওটা নো সাইকেল জোন।
কোথায় লেখা আছে দেখান?
ছিল। ঝড়ে উড়ে গেছে।

তাহলে আমি টাকা দেবো কেন?আমি ঐ রাস্তা দিয়ে অফিস যাই আসি। আমি এই বয়সে বাইক চালাবো?
সে আপনি কি চালাবেন তা আমি কি জানি?
বা:আপনি টাকা নেবেন। আমাদের জন্য ভাববেন না? জানেন ইউরোপ কান্টিতে সাইকেল রো আছে।
এটা ইউরোপ কান্টি নয়।

তাহলে আপনি টাকা নিতে পারেন না।
সাইকেল কিন্তু এতখনে গাড়িতে উঠে গেছে। আর পাবেন না।

আগে সাইকেল রো করুন। তারপর যদি নো সাইকেল জোনে ঢুকি তখন ফাইন করবেন।
তখনই আমি ফাইন দেবো।

মহা ঝামেলার লোক তো আপনি? তা আপনাদের মূখ্যমন্তী তো এটা লন্ডন করবে। তাকে বলুন সাইকেল রো করতে। লন্ডন তো ইউরোপের মধ্যে পড়ে।
আপনি একথা সি. এম.কে বলুন। আপনি তো তার প্রতিনিধি। আর মূখ্যমন্তী শুধু আমার নয় আপনারও মূখ্যমন্তী।
টাকা দেবেন? আমার অন্য কাজ আছে।
আমার কাছে তিরিশ টাকা আছে।

তাই দিন।
না। ঘুস দবো না আমি।
হঠাৎ বড় বাবু ঘরে ঢুকেছেন। লোকটি উঠে দাঁড়াল।
এনার কি কেস?

সব বললো লোকটি। শুনে বড় বাবু বললেন. ঠিক কথা বলেছেন উনি। উপর মহল থেকে এক একটা অর্ডার দেবেন মন্ত্রীরা বিকল্প ব্যবস্থা না করে। মানুষ কেন টাকা দেবে?

তা হলে কি করবো স্যার?

এজেন্সির রামদাকে আমার কথা বলে এনার সাইকেল ছেড়ে দিতে বলুন।

সাইকেল নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে স্টেশনের কাছে শীতাংশু। স্টেশনের দেওয়ালে কত কিছুর বিঙ্গাপন। সেদিকে তাকিয়ে ছিল সে। মানুষ কত ধরনের কাজ করে। ভাবা যায়!

আরে শীতাংশু গাড়ি চাপা পড়ে মরার ইচ্ছে হয়েছে নাকি?
কে বলল? সামনে তাকাতে দেখল অশোক।

সাইকেল নিয়ে অশোকের দোকানের কাছে এলো। বলল. ‘কিরে এতো দিন কোথায় ছিলি? ।ভিতরে যে কাগজের দোকান ছিল তার কি হলো?
রেল কোম্পানি তুলে দিয়েছে। তাই এই রাস্তার ধারে পরোটার দোকান দিয়েছি।

ভালো করেছিস।একটা কিছু করে তো খেতে হবে।
তুই কি করছিস?
এল. আই. সি.।

আমিও লাইসেন্স নিয়ে ছিলাম। পড়লাম না। তা পরোটা খাবি?
নারে। বাইরের কোন খাবার হজম হয় না।
তোর শালা চিরকাল পেটের রোগ। কলেজ থেকে দেখছি তো।
তা ঠিক বলেছিস। কতো সাবধানে থাকি তাও ভুগি।

একটা কাজ কর রাতে দু পেগ মাল খাবি। সব রোগ পালাবে।
ভালো বলেছিস।
আরে বাড়ুয়া মারা গেছে জানিস?

কি বলেছিস তুই? ও তো রেলে চাকরি করতো। ভালো রেজাল্ট করেছিল। সাঁইথিয়া পোষ্টিং ছিল। কবে মারা গেল?
আত্মহত্যা করেছে।
বলিস কি? অতো ভালো ছেলে।কেন করলো এই কাজ?

সাঁইথিয়ায় একটা মেয়ের সংগে সম্পর্কে জরিয়ে গিয়েছিল। সেটা ওর বউ জানতে পেরে গেছে। তাই নিয়ে অশান্তি। চরম গন্ডগোল। শেষে আত্মহত্যা। এই বিধাননগরে করেছে আত্মহত্যা।

বিষাদে মনটা ভরে গেল শীতাংশুর। যে জীবনের জন্য মানুষ ছোটে এই দেশ থেকে অন্য দেশে। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। সেই জীবনই মানুষ নিমেষে শেষ করে দিতে পারে কি করে? এতটুকু ভালোবাসা নেই জীবনের প্রতি? শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে যে জীবনকে বাঁচাতে চায় মানুষ। সেই মানুষ আবার এক লহমায় শেষ করে এই মহার্ঘ জীবন! কেন? কেন?

শীতাংশু জানে এই প্রশ্নের উওর কেউ তাকে দেবে না। জীবন এক রহস্যময় ।যার ভিতর হয়েছে অফুরন্ত অমৃত আবার অপরিমেয় বিষ। তুমি কোনটা নেবে? তুমি নিজে জানো না। তবে মানুষ অমৃতের দিকে ছোটে, মাঝ পথে কখন হাতে উঠে আসে বিষ পাত্র।মানুষ বুঝতে পারে না এতো টুকু।

দেবদাস কুণ্ডু

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *