নারী তো তার জীবনে কম আসেনি। সীতাংশু ভাবলো। তখন ক্লাশ টেন। সে প্রথম প্রেম পএ লিখেছিল রুমাকে। কোএড স্কুল। তার সহপাঠী। রুমা কালো। মেদ নেই এতো টুকু। ইস্পাতের মতো ধারালো। আর চকচকে শরীর। কালো মুখে চোখ দুটোছিল নক্ষত্রর মতো জ্বল জ্বলে। তার প্রেমে ছিল না শরীর। ছিল পবিএ এক ভালোবাসার আলো। সেই আলো তার বুকের ভিতর জ্বলতো সারাখন। রুমার চাহিদা ছিল শরীর। একদিন সে জামার বোতাম খুলে দেখিয়েছিল যৌনতার রহস্যময় পৃথিবী।নারীর স্তনের স্পর্শ রক্তে যে দামাল ঝড় তোলে তা বুঝেছি রুমার দাখিন্যে তার ছোট্ট পড়ার ঘরে।
সেদিন সে বুঝেছিল শুধু স্তন স্পশে রক্তে যদি দামাল ঝড় ওঠে, গোটা শরীর পেলে তা হয়ে
উঠবে সুনামি, না হ্যারিকেন ঝড়?
স্তন স্পর্শের খেলা তারপর থেকে চলতো অবিরত। সে এক অজানা অনিবার্য আকর্ষন। চাই। প্রতিদিন চাই। না পেলেই রক্তের ভেতরে জেগে উঠতো এক হিংস্র পুরুষ।
এক বছরের মাথায় রুমা পাল্টে গেল। আর সে দেবে না শরীর। কেন? তার শরীর। তার মর্জি। কিন্তু সে তখন মরিয়া। রক্ত এতদিন পেয়েছে স্তনের অমোঘ স্বাদ। ছাড়বে কেন? সে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুমার শরীর থেকে টেনে জামা খুলে ফেলতে চেষ্টা করলো সর্ব শক্তি দিয়ে। পারলো না। রুমার ইস্পাত হাতের জোরালো দুটো চড় এসে পড়ে তার গালে। সে বিমূঢ় কিছু খনের জন্য। আবার চেষ্টা করতে গেলে রুমার প্রবল শক্তি তাকে বিছানায় ফেলে দেয়। আর রুমা হিংস্র সিংহীর মতো ধারালো নখের আঁচড়ে করেছিল তার সারা শরীর রক্তাক্ত।
তখন সে বারো ক্লাশ। রুমা আর এলো না। ওরা পাড়া ছেড়ে চলে গেল কোথায় যেন। স্তন স্পর্শের সুখ রক্তের ভিতর কাটা মুরগীর মতো ছটফট করতো। কতো রাত সে ঘুমোতে পারেনি। বিছানায় বসে হাত দিয়ে ছুঁতো যে চেয়াটায় বসতো রুমা। এই ভাবে বিপন্ন দিনগুলি কাটছিল তখন একদিন সে আবিষ্কার করল সে ভালোবেসে ফেলেছে রুমাকে। ওকে তার পেতেই হবে। কত খুঁজি। খুঁজে যাই। কত জনকে জিগ্যেস করি। কেউ বলতে পারে না। আমার প্রথম হারিয়ে গেল।
একদিন দুপুরবেলা সে দাঁড়িয়ে আছে ধর্ম তলার চৌমাথায়। বাসের অপেক্ষায়। হঠাৎ কে যেন ডেকে উঠলো, ‘সীতাংশু না?’
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। দেখল রুমা। চোখ বিশ্বাস করে না। তারপর যখন বিশ্বাস করলো তখন রুমা চলে এসেছে তার শরীরের খুব কাছে। ওর নিশ্বাস সে টের পাচ্ছেম।
রুমা বলল, ‘এখানে? :
‘ পিয়ারলেসে এসেছিলাম একটা এফ ডির টাকা তুলতে। ‘
‘ তুমি কেমন আছো?’
‘ ভালো। খুব ভালো।’
‘ ভালো তো থাকতেই হবে। তা এখনও কোচিং করছো? ‘
‘ না। এখন এল আই সি আর মেডিক্যালেম করছি। ‘
‘ আমি একটা মেডিক্যালেম
করবো।একদিন আমার বাড়ি এসো না। আমি এখন হৃদয়পুর থাকি। ‘
কি আশ্চর্য! যার নেই হৃদয় সে কিনা থাকে হৃদয়পুর!
‘ তা কতো পড়বে আমাদের?’
‘ আমদর মানে?’
‘আমি আর মা। বাবা মারা গেছে। ভাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে।’
আর তুমি? তুমি বিয়ে করোনি?
কথাটা বলতে গিয়ে বলতে পারলো না শীতাংশু। কোথায় যেন আটকে গেল জিভ।
‘কি হলো আমাদের প্রিমিয়াম কতো পড়বে বলবে তো। আমি চাকরি করি একটা প্রাইভেট কম্পোনিতে। ‘
‘ তোমার মায়ের বয়স?
‘কতো হবে। এই ধরে নাও ষাটটাট হবে। ‘
কতো টাকার পলিসি করবে?’
‘এখন দু লাখ। ক্যাশলেস কিন্তু।’
আট থেকে নয় হাজার’।
‘এতো টাকা কেন?’
‘জি এস টি আছে 14%’
” ও দেখ কান্ড তোমাকে বলা হয়নি। এই তূমি এদিকে এসো। ‘
ছেলেটি এগিয়ে এলো।
‘ আমার বন্ধু নিলয়।’
নিলয় হাত বাড়ালো। সে বুকে হাত তুললো। বললে,’ আমার নাম শীতাংশু।
‘শুধু শীতাংশু?’
‘মানে? শীতাংশুর পরে কিছু নেই। যেমন আমি নিলয় রায়।’
‘না। আমি শুধুই শীতাংশু। পরিচয়ের জন্য এইটুকুই যথেষ্ট। ‘
‘ আপনাকে আমি ভুলতে পারবো না’।
‘ কেন? অবাক হয়েছিল সে।’
‘ পৃ’থিবীতে শুধু নাম নিয়ে বেঁচে আছে এমন মানুষ তো আমি কখনো দেখি নি। তাই।’
সিগারেটের আগুন আঙুল স্পর্শ করতে সতেচন হলো শীতাংশু। লম্বা ছাই ঝেড়ে সে রাতকে জিগ্যেস করলো, ‘আচ্ছা রাত তোর পুরো নাম কি রে?’
রাত বললো, আমার নাম রাত। শুধুই রাত।