অসম্পূর্ণ গল্প : অরিজিৎ সাহা

অভিজিৎ এর টেনশান ক্রমশ বাড়ছে। সকাল থেকে শ্রীময়ীকে অনেক বার ফোন করা হয়ে গেল কিছুতেই ফোনটা রিসিভ করছেনা শ্রীময়ী৷
দেখতে দেখতে পাঁচটা বছর হয়ে গেল ওদের বিয়ে হয়েছে, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রথম দিনেই শ্রীময়ীকে দেখে ওর প্রেমে পরে গিয়েছিল অভিজিৎ।

অবস্য শ্রীময়ীকে প্রোপোস করেছিল ফাইনাল ইয়ারের শেষের দিকে গিয়ে, তারপর দুজনে চাকরি পাওয়ার পরে বিয়ে করেছিল৷ বিয়ের পরের প্রথম দুটো বছর ওদের দুজনেরই অফিস কোলকাতায় ছিল৷ তারপরেই শ্রীময়ীর ট্রান্সফার হয় সুদূর আমেরিকায়৷ শ্রীময়ী চাকরিটা ছেড়ে দিতে রাজি ছিল কিন্তু অভিজিৎ ওর স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি৷ কারণ অভিজিৎ কখনোই চায়না যে ওর স্বপ্ন অপূর্ণ থাকুক।

শ্রীময়ীর ট্রান্সফারের মাস দুয়েক বাদে অভিজিৎ এর ও ট্রান্সফার হয় উড়ুগুয়ে তে৷ গত তিন বছর ওদের আর দেখা হয়নি৷ ফোনেই কথা হয় ওদের৷ এবছর অভিজিৎ এর ছুটি নিয়ে শ্রীময়ী কাছে যাওয়ার কথা ছিল‌। প্লেনের টিকিট ও কাটা হয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু কোভিড নাইনটিনের জন্য সেটা আর সম্ভব হলো না। উড়ুগুয়েতে কোভিড নাইনটিনের প্রোকোপ এখন ও খুব বেশী না হলেও আমেরিকার হাল খুবই খারাপ।

বিশেষ করে নিউইয়র্ক শহরের। আর দুঃভাগ্য বসতো সেই নিউইয়র্ক শহরেই রয়েছে শ্রীময়ী। ওর ফ্ল্যাটের ও অনেকে আক্রান্ত হয়েছে। দু—একজন মারাও গেছেন। শ্রীময়ীর ও কাল থেকে জ্বর। এই বিষয়টাই অভিজিৎ কে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় ফেলে দিয়েছে‌।


অবশেষে শ্রীময়ী যখন ফোনটা রিসিভ করলো তখন ঘড়ির কাঁটায় প্রায় দেড়টা। মানে শ্রীময়ীর ওখানে সাড়ে বারোটা বাজে৷ শ্রীময়ী ফোনটা রিসিভ করতেই অভিজিৎ বলল, “শ্রী ঠিক আছো তো? সেই সকাল থেকে ফোন করে যাচ্ছি৷ কোথায় ছিলে এতক্ষণ ? আমার তো চিন্তায় মাথা খারাপ হওয়ার জোগার হয়েছিল ৷”


শ্রীময়ী একটু কাপাকাপা গলায় বলল, “নার্সিংহোমে, কাল বিকেলে হেল্থটিম এসে ব্লাড স্যাম্পেল নিয়ে গিয়েছিল। টেস্ট এ রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷ আমাকে কোয়ারেনটাইনে নিয়ে নিয়েছে ওরা।”


কথা গুলো শুনেই অভিষেক রিতিমতো চমকে উঠে বলল, “Oh my god, এসব কি বলছো তুমি। আচ্ছা তুমি চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে৷”

—সব ঠিক হবে কিনা জানিনা অভি৷ হয়তো তোমার সাথে শেষবারের মতো কথা হচ্ছে৷ মনে হয় আমার হাতে আর খুব বেশি সময় নেই৷ ওরা বলছিল আমার অবস্থা নাকি খুব একটা ভালো নয়৷

—কি সব পাগলের মতো কথা বলছো তুমি শ্রী৷ তোমার কিচ্ছু হবে না। আমি দেখছি কোন রকম আবেদন করে তোমার কাছে পৌছানো যায় কিনা৷

—বাচ্ছাদের মতো কথা বলোনা অভি৷ এটা সম্ভব নয়৷ তুমি হাজার আবেদন করলেও তুমি আমার কাছে পৌছাতে পারবে না ৷যদি বেঁচে যাই তবে আবার দেখা হবে… যাকগে আর কিছু বলবে তুমি? আমার শরীরটা ভালো লাগছেনা তাহলে ফোনটা রাখবো আর কি৷
অভিজিৎ এর বলার মতোন আর কিছুই নেই৷ ও বলল “রাখো”


ফোনটা কেটে দিয়ে অভিজিৎ আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো৷ ওর দুচোখ বেয়ে ঝড়ছে নোনা বৃষ্টি ৷আজ ওর খুব ইচ্ছা করছে শ্রীময়ীর কাছে ছুটে যেতে‌। ওকে জড়িয়ে ধরে আবার গল্প করতে৷ কিন্তু সবসময় ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয় কি ? …

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *