ব্যাঙ্কের ঠাণ্ডা ঘরে চেয়ারে জনা দশেক লোক বসে রয়েছে।কাজ হলে তারা প্রত্যেকে চলে যাবে।
এইসময় একটা বুড়ি একটা কাগজ হাতে নিয়ে ভাবে,কাগজটা সে লিখে নেবে কাকে দিয়ে!
ভাবতে ভাবতে সে দেখে,লোক গুলোর মধ্যে একজন লোক তার হাতে যে কাগজ রয়েছে ওই রকমই একটা কাগজ লিখছে।
বুড়ি কাগজটা লিখে নেবে বলে তার কাছে যায়,”বাবা,আমার কাগজটা একটু লিখে দাও তো।”
লোকটা বুড়িকে দেখে বলে,”হবেনা।অন্য কাউকে দিয়ে লিখে নাও।”
বুড়ি অনুরোধ করে,”একটু লিখে দাও না, বাবা!দিলে কি হবে?”
বুড়ির এই কথা শুনে লোকটা গম্ভীর হয়ে যায়।এবং সে বলে,”অ তুমি বুঝবে না।যেতে বলছি যাও।”
বুড়ির মনটা খারাপ হয়ে যায়।এরপর পাশের জনকে সে বলে,”বাবা,তুমি লিখে দেবে?”
“আমার কাছে কলম নেই।”
“ও।”
পরে পরের জনের কাছে গেলে সে বলে,”আমার সময় নেই।”
এইভাবে বুড়ি ওখানে যতজন লোক বসে রয়েছে তার হাতের কাগজটা নিয়ে প্রত্যেকের কাছে যায়।কিন্তু নিজ নিজ অসুবিধা দেখিয়ে বুড়ির কাজটা প্রত্যেকে এড়িয়ে যায়।বুড়ির তখন আরো মন খারাপ হয়।এবং তার মনে হয়,এ যুগে লেখাপড়া না জানা মানুষের কোন মূল্য নেই।বাড়ি গিয়ে সে তার নাতনির কাছে শেষ বয়সে আবার লেখাপড়া শিখবে।নাহলে মরেও সে শান্তি পাবেনা।ওখানে গিয়েও যদি কাগজ লিখতে হয়।
দুই
একটু দূরে অন্য চেয়ারে একজন লোক বসে রয়েছে।বুড়িকে দেখে সে কাছে এসে বলে,”আপনার কাগজটা আমাকে দিন,আমি লিখে দিচ্ছি।”
ওই লোকের চেহারা আর পোশাক দেখে বুড়ির লেখাপড়া জানা মানুষ বলে তাকে মনে হয়না।বুড়ি তাই তখন কাগজ দেওয়ার আগে তাকে বলে,”তুমি লেখাপড়া জানো?”
স্মিত হেসে লোকটা বলে,”দিন লিখে দিচ্ছি।”
বুড়ির কাগজটা নিয়ে লিখে দিতেই এবার অন্য রকম একটা লোক এসে বলে,”দাদা,আমার কাগজটাও একটু লিখে দিন তো!
এই লোকটার পরনে ঝকঝকে এবং দামি পোশাক।দেখে ওই লোকটা বলে,”আমি লিখে দেব কেন?আপনি লিখুন না!”
“কলম নেই।”
“আমার কলম নিন!”
কিন্তু সে কলম নেয়না।না নিয়ে পরে বলে,”আমি লিখতে পারিনা।”
তার এই কথা শুনে ওই লোকটা অবাক হয়,”লিখতে পারেননা মানে!”
“লেখাপড়া জানিনা।”
অমনি ওই লোকটা বিস্ময়ে হতবাক হয়, হায়!দেশে এরকমও মানুষ আছে!
অত:পর কাগজটা লিখে দিয়ে ওই লোকটার মনে হয়,এই লোকটার মতো হয়তো তার টাকা পয়সা নেই।কিন্তু এই লোকটার চাইতে সে গরিব নয়।অভাগা নয়।তার মধ্যে শিক্ষা আছে।
লিখতে পড়তে না জানা মানুষ গুলো এদিক থেকে সত্যিই অভাগা।