অব্যক্ত ভালোবাসা : মোঃ তুষার আলী

সকাল থেকে আকাশটা মেঘলা হয়ে আছে, দেখে মনে হয় এই বুঝি বৃষ্টি শুরু হবে।রিক্সা থেকে নেমেই জলদি ভাড়াটা মিটিয়ে দিয়ে দৌড় দিল সাকিব।রিক্সা চালক তো অবাক।অবাক হওয়ারই কারণ,  এমন কান্ড দেখে যে কেউই অবাক হবে।কিন্তু সাকিবের মাথায় তখন অন্য কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে।রিয়া যে কখন থেকে অপেক্ষা করছে তার কোন ঠিক নাই।

কিছুক্ষণের মধ্যেই রিয়ার সামনে হাজির হলো সে। সাকিব কিছু বলার আগেই কষে এক থাপ্পর দিলো রিয়া, বেয়াদব এখন কয়টা বাঁজে দেখ! সাকিব হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল সাড়ে চারটা।তোর কখন আসার কথা ছিলো, সাড়ে তিনটায়….. এবার দুই গালেই হাত রাখলো সাকিব, রিয়া যেন আর মারতে না পারে।তুই একঘন্টা আগে থেকে অপেক্ষা করছিস?

নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলো সাকিব, না আমি ৩ টার সময় এসেছি।মানে দেড় ঘন্টা… সরি রে… রাস্তায় কোন গাড়ি পাচ্ছিলাম না…. আর বাসা থেকে বের হতেও একটু দেরি হয়ে গেছে, মিষ্টি স্বরে বলল সাকিব।তোর তো এটা নিয়মিত অভ্যাস… একটু রেগে গিয়ে উত্তর দিলো রিয়া।

এই নে তোর জন্য মাংস রান্না করে নিয়ে এসেছি, সেই দেড় ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি তোকে খাওয়াবো বলে,  আর তুই কিনা… সময়ের তো কোন মূল্য নেই তোর কাছে বেশ কিছু কথা শুনিয়ে তারপর রিয়া খাবারটা বারিয়ে দিলো সাকিবের দিকে, এভাবে মেরে কেউ খাওয়ায় নাকি!

বললো সাকিব, হুমম খাওয়ায় তো, আমিই খাওয়ায়।এখন বেশি কথা না বলে খেয়ে বল কেমন হয়েছে, আমি নিজে হাতে রান্না করেছি।এতক্ষণে একটু স্বাভাবিক হয়েছে রিয়া।সাকিব মুচকি হেসে বলল, বাহ্! তুই তো ভালোই রান্না করিশ! আমাকে কিছুূদিন পরপর খাওয়াবি রান্না করে।রিয়া জানে সে ভালো রান্না করে তবুও সাকিবের মুখে তার রান্নার প্রশংসা শুনে খুব খুশি হলো।

ওদের দেখে সবাই প্রেমিক- প্রেমিকা ভাবলেও ওদের সম্পর্কটা এমন ছিলো না, ভার্সিটির প্রথম বছর থেকে ওদের বন্ধুত্ব।দুই বছরে ওদের সম্পর্কটা আরো গভীর হয়েছে, এতোটাই গভীর যে সবাই ভাবে ওদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক আছে, হ্যাঁ ছিলো! 

তবে সেটা স্বাভাবিক প্রেমের মতো নয় বন্ধুত্বের প্রেম! ক্যাম্পাসে যতক্ষণ দুজন থাকতো জরুরি কাজ ছাড়া সমসময় একসাথে থাকতো দুজন।তবে, একটু সামান্য বিষয়েই দুজনের মধ্যে লেগে যেত তুমুল ঝগড়া।দেখে মনে হতো, তাদের বোধয় কত বছরের শত্রুতা।

কিছুক্ষণ পর আবার সবকিছু ঠিক! এর জন্যই বোধয় ওদের বন্ধুত্ব টা এতো গভীর।একদিন রিয়ার এক বান্ধবী রিয়াকে প্রশ্ন করলো,  আচ্ছা তুই তো সবসময় সাকিবের সাথে ঘুরিশ! বিয়ের পর কি করবি? রিয়া মুচকি হেসে উত্তর দিলো, আমি তো সাকিবকেই বিয়ে করবো।

হয়তো সে কথাটার মাঝে কিছুটা ব্যঙ্গ ছিলো, হয়তো রিয়া সাকিবকে সত্যিই ভালোবাসতো।দিন কয়েক হলো রিয়া ভার্সিটিতে আসে নি! সাকিব তো অস্থির! রিয়াকে ফোন করেও পাওয়া যাচ্ছে না। সময় যেন কিছুতেই কাটছিলো না সাকিবের।একেকটা ঘন্টা একদিনের মতো মনে হচ্ছিলো ওর! এক সপ্তাহ পর!  তখন প্রায় রাত ১১ টা বাঁজে, সাকিবের ফোনটা বেঁজে উঠলো!

ফোন রিসিভ করতেই ওপার থেকে আওয়াজ আসলো! সাকিব জিজ্ঞেস করলো,তুই এখনো রেল স্টেশনে চলে আয়! তুই এতোদিন কোথায় ছিলি,  ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছিলি!এখানে আসেক, তোকে সব বলছি! সাকিব দেড়ি না করে বেড়িয়ে পড়লো! স্টেশনে পৌঁছাতেই দেখলো বসে আছে রিয়া! রিয়া বললো, একটা রিক্সা নে, রাস্তায় যেতে যেতে সব বলছি।

একটা রিক্সা নিয়ে দুজনে উঠলো, রিয়া বললো, একসপ্তাহ  আগে বাবা এসে আমাকে নিয়ে গেছিল! তার বন্ধুর ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিবে বলে! আমি প্রথমে রাজি হয়েছিলাম না।কিন্তু বাবার হার্টের সমস্যা আছে, কখন কি হয়,,অনেক ভেবে রাজি হয়েছি।তোকে কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না, খুব ডিপ্রেশনে চলে গেছিলাম।তাই ফোন করা হয়নি,  আগামী মঙ্গলবার আমার বিয়ে,  মানে আর মাত্র চারদিন পর।

এখানে কিছু জামাকাপড় আছে, সেগুলো নিয়ে যেতে হবে।সাকিব কি বলবে, বুঝে উঠতে পারলো না, তাই কোন কথা বললো না, রিয়াকে ভাড়া বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেল সাকিব! বিয়ের দিন চলে আসলো, আজ রিয়াকে বধূর সাঁজে অনেক সুন্দর লাগছে।কিন্তু ওর মুখে যেন কৃত্রিম হাসিঁ।এমন হাসি কখনো দেখেনি সাকিব!

একপ্রকার জোর করেই যেন হাসছে সে।সাকিবের বুকটা যেন এক অজানা যন্ত্রণার ফেটে যাচ্ছিলো।কিন্তু একবারও বলার সাহস হলো না, রিয়া আমি তোকে বিয়ে করতে চাই!! যাবি আমার সাথে! শুধু মনে হতে লাগলো জীবনের  গুরুত্বপূর্ণ একজনকে হারিয়ে ফেলল সাকিব! বলা আর হলো না, রিয়া আমি তোকে ভালোবাসি।অব্যক্তই রয়ে গেল এই ভালোবাসা!

মোঃ তুষার আলী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *