#অপমান
#শম্পা_সাহা
সঞ্চিতার ডিভোর্সটা হয়েই গেল।ঝগড়া অশান্তি চলছিল তাও বছর চারেক হবে।প্রথম প্রথম অভিযোগ ছিল রায়ণের পক্ষ থেকে,” তুমি কি একটু পরিচ্ছন্ন থাকতে পারো না?সারাক্ষণ গা থেকে রান্না তরকারির গন্ধ ছাড়ছে! রান্নাঘর কি সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াও?”
সেই রাতে সঞ্চিতাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল রায়ণ।পরে জানা গেল ওর এক বান্ধবী আছে,সে কর্পোরেট হাউসে যুক্ত।সব সময় ফিটফাট।যদিও ডিভোর্সি, এক ছেলের মা,কিন্তু দেখে মনে হয় না!
তাই এক দূর্গা পঞ্চমীর সকালে রায়ণ তার লাগেজ নিয়ে উঠে গেল সে বান্ধবীর সঙ্গে থাকবে বলে।কিছুদিনের মধ্যেই ডিভোর্স নোটিশ! ওদের বিয়ের জন্য আগে এই ডিভোর্স টা তো হওয়া দরকারি!
শ্রীতমা বেশ ভেঙ্গে পড়েছে।ওদের সাত বছরের সম্পর্ক।কিছুদিন যাবৎ ঋজু প্রায়ই বলতো, শ্রীতমা মোটেই নিজের যত্ম নেয় না,ওর গায়ে অফিস ফেরৎ ঘামের গন্ধ নাকি বিশ্রী লাগে ঋজুর।শ্রীতমা কোনোদিন মুখ ফুটে বলতে পারেনি যে “তোমার গা থেকেও মোটেই ফুলের গন্ধ ছাড়ে না!” বলতে পারেনি, লজ্জা পেয়েছে।ওর গা থেকে ঘামের গন্ধপাওয়া যায় এই অভিযোগ ওকে মরমে মেরে ফেলেছে।প্রাণপণ চেষ্টা করেছে নিজেকে সুগন্ধি রাখতে,কিন্তু ঋজুর অভিযোগ বেড়েছে ক্রমাগত।
ঋজু নতুন বান্ধবী পেয়েছে।সে শ্রীতমার মত নয়,একেবারে ফিটফাট।শ্রীতমা সরে এসেছে এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে,ঋজু ওই নতুন বান্ধবীর গা থেকেও বিশ্রী গন্ধ পাবে! শুধু সময়ের অপেক্ষা।
রাকেশ একটা হাফপ্যান্ট পড়ে খালি গায়ে বসে টিভিতে খবর দেখছে।লিপি ঘরে ঢুকলো,ক্লান্ত চেহারা, গায়ে সেই কবেকার পুরোনো নাইটি, অন্তর্বাস হীন ঢলঢলে শরীর, মুখে কোনও লালিত্য নেই।চুলটাও খোপা করা কোনো রকমে!
রাকেশ মনে মনে বিরক্ত হয়।লিপি কি নিজেকে একটু গুছিয়ে রাখতে পারে না,একটু টিপটপ যেমন বিয়ের আগে সেজেগুজে দেখা করতে আসতো।এখন ওর এই কাকিমা মার্কা চেহারা দেখে কি আর রোমান্স আসে? অথচ লিপি প্রায়ই অভিযোগ করে,”তুমি আমাকে আর ভালোবাসো না!” রাকেশ বলতে পারে না,”ভালোবাসার মত জায়গায় কি আছো যে ভালো বাসবো?”।না বলতে পারে না! কিন্তু নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।ভাগ্যিস নীল সাইটগুলো ছিল!
রাকেশ নিজের ভুঁড়িটা এলিয়ে দেয় সোফায়,শরীরের ওজন বেশ বেড়েছে,চোখের কোল ও ফোলা!তা বাড়বে না,বয়স তো প্রায় পঁয়তাল্লিশ হতে চললো!
রীতাকে আদর করতে করতে চরম মুহুর্তে ,রীতা যখন ফিসফিস করে রাজেনকে আরো ভালোবাসার জন্য আবদার করছে,এক ফাঁকে রাজেন বলে ফেললো,”পেটটা দেখেছো তোমার,কি রকম থলথল করছে! একটু কমাতে পারো না?” রীতার সব উত্তেজনা নিমেষে শেষ।
ও ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে গেলো, অন্ধকার ঘর ,জানালা থেকে আসা মৃদু চাঁদের আলোয় রাজেনের আশিকেজির শরীর আর বিশাল ভুঁড়ি তবু বেশ বুঝতে পারে রীতা।
রাজেন রীতাকে ঠাণ্ডা হতে দেখে ঝাঁঝিয়ে ওঠে,”অমনি তেজ হয়ে গেলো,না? দেখি এদিকে এসো!” রাজেন আর কিছুর জন্য অপেক্ষা করে না এমনকি রীতার সাড়ারও না,শেষে ক্লান্ত হয়ে উঠে যেতে যেতে বলে,”আজকাল তোমার মুখে খুব বাজে গন্ধ হচ্ছে, কেন?”
রীতা স্থির হয়ে পড়ে থাকে, অসাড়,যত না ক্লান্তি তারচেয়ে অনেক বেশি বিতৃষ্ণা, অপমান, ঘৃণা।
এই অপমান প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত, প্রতি ঘরে ঘরে চলছে।কি জানি এর শেষ কোথায়?
©®
শম্পা সাহা