মাঝে মাঝে দুপুরবেলার ধূসর আকাশটার দিকে তাকিয়ে মনটা কেমন উদাস হয়ে যায়।জানলা দিয়ে দূরে তাকিয়ে থাকি।মনে হয়, আজ প্রকৃতির মুখ ও বড্ড গম্ভীর।মানুষের মতো সে ও কি হাসতে ভুলে গেলো ? গাছপালা তো কই, আর আগের মতো সতেজ,শ্যামল লাগে না!বিগত কয়েক মাস ধরে জীবন আর আগের মতো গতিময় নেই।সব তাতেই কেমন একটা যেন গা – ছাড়া ভাব।কিছুই ভালো লাগে না।
প্রকৃতি কিন্তু এত বিষন্নতার মধ্যেও তার নিজস্ব ছন্দেই চলেছে।সামনের পুকুরটিতে কেমন পানকৌড়ি গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে বসে আছে।একটা কাঠঠোকরা গাছের গুঁড়িতে বসে ঠুক ঠুক করে আওয়াজ করেই চলেছে।অনেক উঁচুতে ওই যে একটা চিল আওয়াজ করতে করতে উড়ছে।ওরা তো নিজেদের কাজকর্ম নিজেদের মতই করে চলেছে।তবে আমার মন এত খারাপ কেন ? রোজ সকালে কাগজ পড়াটা রুটিনের মত ছিল – তাও ছেড়েছি,আর কত অসহায় মানুষের মৃত্যুর বর্ণনা পড়বো !
বিপর্যস্ত লাগে নিজেকে।কি জানি, পৃথিবী কি আমাকেও একদিন পর করে দেবে? হারিয়ে যাবে সবুজ প্রান্তর,সুনীল আকাশ,ফেনিল সমুদ্র আর অজানার হাতছানিতে ডাকা সেই গহন বনানী !নির্জন পথগুলোর দিকে তাকালে কেমন যেন ভুতুড়ে মনে হয় । যা ও বা দু একজন লোক দেখা যায় – মুখোশ এঁটে তারাও কেমন যেন রহস্যময়। এ কোন পৃথিবী ! অতি প্রিয় আত্মীয়স্বজন দেখেও মানুষ আজ আর খুশি হয় না।ছোট্ট শিশুরা তাদের মেলে ধরা ডানা গুটিয়ে ঘরের খাঁচায় গৃহবন্দী।বেঁচে থাকার,লড়াই করারউৎসাহ,উদ্দীপনা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি। ঈশ্বর কি কি তাহলে নিজের সৃষ্ট পৃথিবীকে আবার মহেন – জো – দারো বানাতে চাইছেন?আলোর দিশা তো কই, কোথাও দেখতে পাচ্ছি না!
তবু ক্ষীণ আশা নিয়ে বেঁচে আছি।লড়াই করে যাচ্ছি অনবরত আমার অন্তরসত্ত্বার সাথে।এই অন্ধকারের ভেতর থেকেই হয় তো অদূর ভবিষ্যতে কেউ আলোক বর্তিকা হাতে এগিয়ে আসবে।কেটে যাবে এই ঘন কুয়াশা।ঝলমলে রোদ্দুরে আবার হেসে উঠবে আমাদের এই প্রিয় পৃথিবী।