অনুবাদ কবিতা // হােহেনলিণ্ডেন // টমাস ক্যাম্পবেল // অনুবাদ : পিনাকীশঙ্কর চৌধুরী

অনুবাদ কবিতা //  হােহেনলিণ্ডেন // টমাস ক্যাম্পবেল  // অনুবাদ : পিনাকীশঙ্কর চৌধুরী
(২৭/০৭/১৭৭৭-১৫/০৬/১৮৪৪)
কােহেনলিণ্ডেন, মিউনিখ থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে খরস্রোতা আইজার নদীর ধারে পাইন বনে ঘেরা একটা ছােট গ্রাম। ১৮০০ সালের ডিসেম্বর মাসে দুটো বড় সেনাদল, একদিকে অস্ট্রিয়া এবং অন্যদিকে নেপােলিয়নের এক সৈন্যাধ্যক্ষ জেনারেল মনরাের অধীনে ফরাসী এবং ব্যাভেরিয়ানরা এখানে একটি প্রচণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। খুব ঠাণ্ডা আবহাওয়া ছিল। কয়েকদিন ধরেই বরফ পড়ছিল। পাইন বনের মধ্যেই সৈনিকরা গােলাবর্ষণ করছিল। তুষার ঝড় এতই সাংঘাতিক ছিল যে সেনাদলের কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছিল না।
তারা শুধু প্রতিপক্ষ’র কামানের আগুনের ঝলক দেখেই তাদের অবস্থান বুঝতে পারছিল। সেই বন-পাহাড়ের সানুদেশ এবং নদী, সর্বত্রই যুদ্ধটা ছড়িয়ে পড়েছিল। ফরাসী এবং ব্যাভেরিয়ানরা শেষপর্যন্ত জয়লাভ করে। অস্ট্রিয়ার রাজা নিজের রাজধানী রক্ষার জন্য নেপােলিয়নের শর্ত মেনে নিতে বাধ্য হন। এই কবিতায় ফ্রাঁ বলতে ফরাসী, হুন বলতে অস্ট্রিয়ান এবং মিউনিখ বলতে ব্যাভেরিয়ানদের রাজধানী বােঝাচ্ছে।  এই রকম একটা যুদ্ধের বীভৎসতাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরার জন্যই এই কবিতাটি রচিত। কবি নিজের চোখে এই যুদ্ধ দেখেননি।
জার্মানিতে ভ্রমণ করার সময় র‌্যাটিসবনের একটি যুদ্ধ তিনি দেখেছিলেন। এবং ইনগােলস্ট্যাটের একটি যুদ্ধক্ষেত্র দেখেছিলেন যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই হােহেনলিণ্ডেন-এর সেই বীভৎস যুদ্ধ’র দৃশ্য কল্পনা করে নিয়ে তিনি এই কবিতাটি রচনা করেছিলেন। আসলে তাে বীভৎসতার নিরিখে সব যুদ্ধ’র চরিত্রই প্রায় এক। যুদ্ধ’র এই নারকীয় বীভৎসতা চিরন্তন!)।


লিণ্ডেনে যখন সূর্য প্রায় অস্তমিত,
সুশুভ্র তুষার রক্তে নয় কলঙ্কিত
শীতের মতাে কৃষ্ণ হয় প্রবাহিত
দ্রুতগতি বয়ে যায় আইজারের জল।


লিণ্ডেন দেখল কিন্তু দৃশ্য অন্য আর
গভীর রাত্রিতে শব্দ ড্রাম বাজাবার
মৃত্যু-হানা আলাে-রশ্মি জাগল এবার
মুছে দিতে দৃশ্যদের আঁধার সকল।


মশাল দামামা শব্দে উঠল ঝঙ্কার
অশ্বারােহী নিষ্কাশিত করে তলােয়ার
অশ্বরা ছাড়ল ক্রুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস তার
ভরে দিতে সেই ভয়ানক রণস্থল।


বজ্ৰরবে সেইখানে পর্বত কাঁপায়
অশ্বরা চালিত হয়ে যুদ্ধতে ঝাঁপায়
আকাশের বজ্র’র ধ্বনিকে হারায়
লােহিত গােলন্দাজ ধ্বনিরা সকল।


সেই আলাে আরও লাল হয়ে যাবে পরে
লিণ্ডেনের কলঙ্কিত গিরির তুষারে
আরও লাল বয়ে যাবে স্রোতরাশি ধরে
খরস্রোত বয়ে চলা আইজারের জল।


এখন সকাল, সূর্য দিগন্ত’র ধারে
যুদ্ধ’র ধোঁয়াকে ভেদ করতে না পারে,
ক্রুদ্ধ ট্র্য ও দুর্মদ হুনরা যুদ্ধ করে
গন্ধক চাঁদোয়ার নিচে মত্ত কোলাহল।


ঘাের যুদ্ধ হয়, বীর হও অগ্রসর
হয় তুমি খ্যাতি পাবে নয়তাে কবর
মিউনিখ, তােমার ধ্বজা ওড়াও সত্বর,
আক্রমণ কর দিয়ে বীরত্ব’র বল
এসেছে অনেক কিন্তু অল্প যাবে ফিরে,
তুষার যে ঢেকে দেবে তার দেহটিরে,
প্রতিটি মাটির ঢেলা পদতল ঘিরে
রচনা করবে তার সমাধির স্থল।



( বাক্ প্রতিমা সাহিত্য পত্রিকা থেকে সংগৃহীত )

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *