অনুঘটক – অভিষেক সাহা

 দুপুর থেকেই কেবল কানেকশন বন্ধ। অনেকবার কেবল অফিসে ফোন করেছে শিয়া। কখনও ধরেনি, কখনও ধরেছে। বলেছে “কাজ চলছে।আধ ঘন্টার মধ্যে চালু হয়ে যাবে।” আধ ঘন্টা এখনও আসেনি। দুপুর পেরিয়ে বিকেল সরিয়ে সন্ধে নেমেছে ঝুপ করে। শরতের কাল এখন । সারাদিনের বাবাগো-মাগো গরমের পর বিকেলের মিষ্টি ঠান্ডা হাওয়ায় সূর্য ওয়ান ফোর্থ ছুটি নিয়ে মার্কেটিংয়ে গেছে । তবু কেবল চালু হয়নি।

“আমার বাবু কিন্তু তোমাকে বিয়ে করার পর থেকেই অধঃপতনে গেল!” সন্ধ্যা বেলার টিভি সিরিয়াল না দেখতে পাওয়ার রাগ সব শিয়ার উপর  আছড়ে পড়ল ওর  শাশুড়ি মায়ের। 

” একথা কেন বলছেন মা। আমি কী করেছি?” অবাক হয়ে জানতে চাইল শিয়া।

” তুমি তো কিছুই করোনি, সেকথাই তো বলছি মা। যদি করতে তাহলে আমার ছেলেটা রোজ রাতে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরত না !” শাশুড়ি মা আক্ষেপ করলেন।

” আমি অনেক মানা করেছি, অনেক অশান্তি করেছি মা, আপনার বাবু শোনে না।আর তাছাড়া আমার বরের অধঃপতনের জন্য আপনার বরের যথেষ্ঠ  ভূমিকা আছে!” বহু দিনের জমানো ক্ষোভ উগরে দিল শিয়া।

” আমার বরের! উনি তোমার শ্বশুরমশাই হন , ভুলে যেও না । কী করেছেন উনি!” হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যাওয়ার মত অবাক এবং ব্যথা দুইই পেলেন  শাশুড়ি মা।

“না তেমন কিছু নয় , শুধু ওঁর বিদেশি সিগারেট খাওয়ার লোভটা কন্ট্রোল করতে পারলেই আমার বরটাও লাইনে থাকত।” শিয়া উত্তর দিল।

” ছিঃ বউমা কী মুখের ভাষা তোমার!বলনা আমার বর কী অন্যায় করেছে?” রেগে উঠে জানতে চাইলেন শাশুড়ি মা।

 পাত্তা না দিয়ে শিয়া বলল ” শ্বশুরমশাই ছোটবেলা থেকেই আপনার বাবুকে  বিদেশি সিগারেট আনতে পাঠাত। ওই আমাকে বলেছে।আর সিগারেটের  দোকানের পাশেই রয়েছে ওয়াইন শপ। প্রথমে দেখত, তারপর খাওয়া শুরু করল আর এখন তো মদের প্রতি ভালোবাসা উপচে পড়ছে। এই কথাটা তো মানবেন মা ,ছোট থেকে  সিগারেট আনতে যাওয়া-আসাটাই ওর মনে নেশার  প্রতি আকর্ষণ বাড়ানোর অনুঘটক হয়েছে !”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *