অণুগল্প

সতিন
দেবাশীষ চক্রবর্তী
ভরসন্ধেয় ঝন্টু মদ খেয়ে বাড়িতে ঢুকেই লাঠি দিয়ে তার বউ টুসিকে বেধড়ক মারতে শুরু করল। দূ-চার ঘা খাওয়ার পর বাঁচার জন্য খাটের নীচে লুকোতে গিয়ে টূসি আঁতকে উঠল। সেখানে একটা বউ শুয়ে আছে!
টূসি ভয়ে চিৎকার করতে যাচ্ছিল, বউটা তার মুখ চেপে ধরে চাপা স্বরে বলল,”একদম ভয় পাবি না। আমি ঝন্টুর আগের বউ নীলা। ও আমাকেও অনেক অত্যাচার করত, তাই গলায় দড়ি দিয়েছিলাম।”
ঝন্টু যে আগে একবার বিয়ে করেছিল আর সেই বউ আত্মহত্যা করেছে, তা টুসির জানা ছিল না। ঝন্টু সবই চেপে গেছে। নীলা খুব স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছিল, তাই তার ভয় অনেকটাই কমে গেল। সে হাঁ করে নীলাকে দেখতে থাকে। টুসির অবস্থা বুঝতে পেরে নীলা বলে,”বদমায়েশটা আমার কথা তোকে জানায়নি জানি। শোন, তুই এখানে চুপ করে বোস, আমি ওকে আচ্ছা করে পিটিয়ে দিচ্ছি।”
একথা শুনে টুসির মুখে হাসি ফোটে বলে,”যাও দিদি পিটিয়ে এসো।”
—চিন্তা করিস না। ওকে উচিত শিক্ষা দেব। তুই আমার বোনের মতো। আমি সবসময় তোর সঙ্গে আছি। মাঝে মাঝে আমাকে দেখবি, কিন্তু একদম ভয় পাবি না। আমি তোর ভালই করব, খারাপ নয়।
টুসি একটু লজ্জা লজ্জা ভাব করে জানতে চায়,”দিদি রাতেও কি তুমি আমার সঙ্গে শোবে?”
— ছি ছি কি যে বলিস! ভূত হয়েছি বলে কি আমার কোনো কান্ডজ্ঞান নেই?
—না না দিদি তা কেন? আসলে এখনো ছেলে-মেয়ে হয়নি তো আর তুমি পাশে থাকলে আমার ওসব করতে লজ্জা করবে। মানে তুমি তো সব বোঝোই দিদি!
— তবে একটা কথা জেনে রাখ ওই সময় ও যদি তোর সঙ্গে কোনো উল্টোপাল্টা কিছু করে আমাকে মনে মনে ডাকবি, আচ্ছা করে পিটিয়ে দেব।
—ঠিক বলেছ দিদি, ও ওরকম করে তো, আমি বারণ করলেও শোনে না, জোর করে। তুমি আছ দিদি আর চিন্তা নেই।
নীলা হাসতে হাসতে খাটের নীচ থেকে বেরিয়ে আসে। ঝন্টু তাকে দেখতে পায় না; কিছু শুনতেও পায় না।
ঝন্টু বসে বসে আরেক বোতল মদ গিলে টুসিকে আবার মারার জন্যে টলতে টলতে উঠে দাঁড়ায়। আচমকা ঘরের সব আলো নিভে যায় আর নীলা ঝন্টুকে বেধড়ক মারতে শুরু করে। টুুসি খাটের নীচে শুয়ে অনেকদিন পর খুশিতে হাসতে থাকে।

inbound7681559011246431661.jpg

দেবাশীষ চক্রবর্তী

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *